• মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৩ ১৪৩১

  • || ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী স্মার্ট বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় স্কাউট আন্দোলনকে বেগবান করার আহ্বান তিন দেশ সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী লাইলাতুল কদর মানবজাতির অত্যন্ত বরকত ও পুণ্যময় রজনি শবে কদর রজনিতে দেশ ও মুসলিম জাহানের কল্যাণ কামনা প্রধানমন্ত্রীর সেবা দিলে ভবিষ্যতে ভোট নিয়ে চিন্তা থাকবে না জনপ্রতিনিধিদের জনসেবায় মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়নে চীনের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ফিলিস্তিনের প্রতি সংহতি জানিয়ে প্রেসিডেন্টকে শেখ হাসিনার চিঠি রূপপুরে আরেকটি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য আহ্বান

জিনাতের কার্ভিং শিল্পে মন জয়

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৩১ জুলাই ২০১৯  

খাবারে শুধু পেট ভরলে চলে না, কখনো কখনো মনও ভরতে হয়। খাবার পরিবেশনে তাই থাকা চাই নান্দনিকতা। খাবারের টেবিল সাজাতে সর্বাধুনিক ও কার্যকর পদ্ধতি হলো ‘ফুড কার্ভিং’। ভিন্ন ভিন্ন সবজি ও ফলের কার্ভিং করে খাবারের প্লেট সাজিয়ে প্রকাশ করতে পারা যায় শিল্পী মনের প্রকাশটাও।

বরিশালের স্থায়ী বাসিন্দা না হয়েও এমনি একজন কার্ভিং শিল্পী বরিশালের মানুষের মন জয় করেছেন তার এ শিল্প দিয়ে। যশোরের অভয়নগরে জন্ম নেয়া সেনাবাহিনীর কর্মকর্তার স্ত্রী জিনাত সুলতানা স্বামীর চাকরির সুবাদে বরিশালে থেকে ফুড কার্ভিংয়ের পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সকলের কাছে। জিনাত সুলতানার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কার্ভিং হচ্ছে মূলত খোদাই করা। আর ফুড কার্ভিং হচ্ছে সবজি ও ফলের ওপর শিল্পের আঁচড় কেটে খাবারের প্রতি অতিথিকে আকৃষ্ট করার একটি কার্যকর কৌশল। তিনি বলেন, অতিথিকে খাবারে আকৃষ্ট করে রাখতে খাবার পরিবেশনে গুরুত্ব দিতেই হবে। ফুড কার্ভিং খাবার পরিবেশনে সৌন্দর্য বাড়ায়। রান্না মজাদার করার পাশাপাশি এখন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানান তিনি। তিনি জানান, আজকাল কোনো অনুষ্ঠানে খাবার কেবল সুস্বাদু হলেই হয় না, এর সঙ্গে খাবারের শৈল্পিক উপস্থাপনাও একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দেখা দিয়েছে। তাই দিন দিন গায়ে হলুদের মতো ঘরোয়া অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সভা, সেমিনারের মতো অফিসিয়াল অনুষ্ঠানেও বাড়ছে এর চাহিদা।

মিসেস জিনাত সুলতানা একজন সৌখিন কার্ভিং শিল্পী। তিনি বিভিন্ন সবজি ও ফলের ওপর নিপুণ কারুকাজ করেন। তার কার্ভিং-এর শিল্পগুণে লাউ, মিষ্টি কুমড়া, তরমুজ, গাজর হয়ে ওঠে মোহনীয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি ফলমূল ও সবজি ব্যবহার করে যে ধরনের খাদ্য সজ্জা করেন তাতে দর্শকমাত্রই চমত্কৃত হয়। এভাবে কাজ করে তিনি অনেক প্রশংসা কুড়িয়েছেন। বর্তমানে একজন গৃহিণী মিসেস জিনাত সুলতানা ২০১২ সালে প্রথম কার্ভিং-এর দিকে ঝুঁকে পড়েন। ঐ বছর লেডিস ক্লাবে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে খাবার টেবিল সাজানোর দায়িত্ব বর্তায় তার ওপর। ইউটিউব থেকে বিভিন্ন থাই কার্ভিং শিল্পীর কাজ দেখতে দেখতে তিনি সত্যি এই শিল্পের প্রেমে পড়ে যান। প্রথম তার কাচা হাতের কার্ভিং দেখে চমত্কৃত হয় শত শত দর্শনার্থী। তিনিও উত্সাহ ও অনুপ্রেরণা লাভ করেন। তার মনের ভিতর লুকিয়ে থাকা শিল্পীসত্তা অনুপ্রেরণা পেয়ে আরো গভীরভাবে জড়িয়ে যায় কাজটির সঙ্গে। পরবর্তী ২/৩ বছরে তিনি অসংখ্য কার্ভিং করেন। কখনো হয়ত অনুষ্ঠানে কিন্তু অধিকাংশই বাসায় অনুশীলন হিসেবে।

কার্ভিং শিল্পটি বাংলাদেশে এখনো সেভাবে সমাদৃত নয়। তবে থাইল্যান্ড, ইতালী, জাপানসহ বিভিন্ন দেশে ফলমূল, সবজি জাতীয় জিনিস কেটে সূক্ষ কারুকার্য ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে দৃষ্টিনন্দন ও চিত্তাকর্ষক এই শিল্পের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়া বিশ্বজুড়ে চার/পাঁচ তারকা মানের হোটেল সেফরা ভোজনরসিক অতিথিদের রসনা বিলাসের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পের ছোঁয়া দিতে বিভিন্ন রকম কার্ভিং ও ফুড ডেকোরেশন করে থাকেন। বাংলা ‘Love In Carving’ নামে দেশে এই শিল্পের তেমন কোনো প্রচার-প্রসার ইউটিউব বা ফেসবুকে দেখতে না পেয়ে জিনাত সুলতানা মর্মাহত হন। তিনি বাংলাদেশে কার্ভিং শিল্পের বিকাশ ঘটানোর জন্য এক নীরব আন্দোলনের সূচনা করেন। ২০১৪ সালে একটি ফেসবুক গ্রুপ খোলেন। এই গ্রুপের মাধ্যমে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এর ভার্চুয়াল জগতে ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। গত ৫ বছরে এই গ্রুপে ১০ হাজার সদস্য যোগ হয়। এদের অনেকেই শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেন। অনেকে এই গ্রুপে আপলোড করা ছবি দেখে নিজেরা চেষ্টা করতে শুরু করেন। এভাবে এখন বাংলাদেশের অনেক তরুণ-তরুণী, গৃহবধূ এমন কি অবসরপ্রাপ্ত নারী কর্মকর্তা, চিকিত্সক এ ফ্রুট অ্যান্ড ভেজিটেবল কার্ভিং করতে শুরু করেছেন। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হ্যাকারদের কবলে পড়ে ৫ বছরের অর্জন ঐ ফেসবুক গ্রুপটি হ্যাক হয়ে যায়। তাতে দমে থাকেননি তিনি। পরবর্তীতে অনুরূপ একটা গ্রুপ খুলে এবং ইউটিউব চ্যানেলের মাধ্যমে তার জ্ঞান ও শিল্পকে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য নতুন উদ্যমে কাজ শুরু করেছেন।

তার কার্ভিংয়ের কাজ ও ছবি কয়েকটি জাতীয় দৈনিক, সাময়িকীতে এবং দুটি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। কার্ভিংয়ের পাশাপাশি জিনাত সুলতানার প্রায় ২৫০টি রেসিপিও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকা ও সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন, এটিএন বাংলা এবং এসএ টিভিতে রান্নাবিষয়ক অনুষ্ঠানে অতিথি রন্ধনশিল্পী হিসেবে তিনি রান্নার পাশাপাশি সাবলীল উপস্থাপনার জন্য সকলের নজর কেড়েছেন। ভ্রমণপিপাসু কার্ভিং শিল্পী জিনাত সুলতানা ইতিমধ্যেই সাতটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। এসব ভ্রমণের ওপর ভিত্তি করে কয়েকটি ভ্রমণকাহিনীও পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। মধ্যপ্রাচীয় এবং ভূ-মধ্যসাগরীয় কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী মেনুর সঙ্গে দেশীয় স্বাদ ও গন্ধের ফিউশন ঘটিয়ে তিনি নতুন নতুন রেসিপি তৈরি করেছেন নিজস্ব স্বকীয়তায়। কার্ভিং ও রান্নায় নিবেদিতপ্রাণ সংস্কৃতিমনা এই নারী আবৃত্তিও করেন বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বাংলাদেশ বেতার বরিশালের আমন্ত্রণে তিনি আবৃত্তিও করেছেন। কয়েক বছর ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করলেও এখন মেতে রয়েছেন কার্ভিং ও রান্নাশিল্পে।