• মঙ্গলবার   ২৮ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪২৯

  • || ০৫ রমজান ১৪৪৪

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
রমজানে আন্দোলনের ডাক দেয়ায় বিএনপির সমালোচনা প্রধানমন্ত্রীর বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র: শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছায় বাইডেন বললেন ‘জয় বাংলা’ ‘জিয়াউর রহমান নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন’ অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে: প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও হ্যান্ডলিং করতে চায় জাপান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না: প্রধানমন্ত্রী পাক হানাদাররা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা স্বাধীনতা দিবসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে সরকার আমরা যুদ্ধ-সংঘাত চাই না: প্রধানমন্ত্রী গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে ২৫ মার্চ ১৯৭১: রক্ত আর আর্তচিৎকারের ভয়াল রাত যে কোনো অর্জনেই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়: প্রধানমন্ত্রী গুণীজনদের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে প্লেন চলাচলের কেন্দ্রে পরিণত করতে রোডম্যাপ জরুরি

শিম চাষে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন চাষিরা

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২৮ জানুয়ারি ২০২৩  

কৃষি দফতরের সঠিক পরিচর্যায় এবার শিম উৎপাদনে বাম্পার ফলন হয়েছে লক্ষ্মীপুরে। ঘূর্ণিঝড় চিত্রাংয়ের থাবা থেকে উদ্ধারের পর ঘুরে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্মীপুরের শিম চাষিরা। এখন পুরোদমে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন তারা।
সবুজের সমারোহ লাল সাদা ফুলে ভরে আছে পুরো শিমের মাঠ। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষি অধিদফতরের সহযোগিতা পেয়ে হাসি ফুটেছে কৃষকের মুখে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারগুলোতে ৪৫ টাকা থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে এক কেজি শিম।

দুই সপ্তাহ আগে থেকে কৃষকরা শিম তুলে স্থানীয় হাট-বাজারে বিক্রি করছেন। মৌসুমের শুরুতে শিমের চাহিদা বেশি। দামও পাওয়া যায় বেশ ভালো। বিগত বছরসহ টানা সাফল্যে চলতি মৌসুমে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যায়।

জানা যায়, চলতি মৌসমে জেলার ৪ হাজার ৭৭৭ হেক্টর জমিতে শীতকালীন সবজির আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৮৯৬ হেক্টর জমিতে শিমের চাষাবাদ হয়, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৪শ হেক্টর বেশি। সদর উপজেলায় ৪৫৫ হেক্টর, রায়পুর উপজেলায় ৮০ হেক্টর, রামগঞ্জ উপজেলায় ৯০ হেক্টর, রামগতি উপজেলায় ২৭৫ হেক্টর ও কমলনগর উপজেলায় ১০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে শিমের চাষ হয়েছে।

ফলন ভালো হওয়ায় বেশি করে শিম চাষে ঝুঁকছে কৃষকরা। এরইমধ্যে অনেকেরই ভাগ্য বদলে গেছে। জেলার রামগতি কমলনগর, রায়পুর, রামগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ও চরাঞ্চলে স্থানীয় ও উন্নত জাতের শিমের চাষ হয়েছে। বিশেষ করে সদরের লাহারকান্দি, মজুচৌধুরী হাট, টুমচর-শাকচর, চর রমনী মোহন, ভবানীগঞ্জ, পেয়ারাপুর ও সুতার গুপ্টাসহ বিস্তীর্ণ এলাকা।

কমলনগরের ফলকন, লধুয়া, হাজিরহাট, তোরাবগঞ্জ, রামগতির আলেকজান্ডার, বিবির হাট, রামদয়াল, জমিদার হাট, চরগাজী, বড়খেরি, রায়পুরের করইতলা, হায়দারগঞ্জ, রামগঞ্জের পানপাড়া, ইছাপুর, সোনাপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শিমের বাম্পার ফলন হয়েছে।

সদরের ভবানীগঞ্জ এলাকার চরউভূতি কৃষক জামাল উদ্দিন জানান, ৪০ শতাংশ জমিতে এবার শিম চাষ করেছেন। শুরুতেই চিত্রাংয়ের কিছুটা প্রভাব পড়েছে। পরবর্তীতে পুনরায় কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি শিমের চারা লাগিয়ে শুরু করেন আবাদ। পরিচর্যার এক পর্যায়ে গাছ পরিপূর্ণ হয় এবং বর্তমানে ফলন ধরেছে। এরইমধ্যে বাজারে ৩৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন তিনি।

সুতারগুপ্টার শিম চাষি রহিমুল ইসলাম জানান, তিনটি প্রজেক্টের মাধ্যমে ১৮ শতাংশ জমিতে শিম লাগিয়েছেন। তার খরচ হয়েছে প্রায় ১৫ হাজার টাকা। ফলন ভালো হয়েছে। শিম বাজারে বিক্রিও করেছেন। গত কয়েকদিনে শিম বিক্রি করেছেন প্রায় ১০ হাজার টাকা। আরো অন্তত লাখ টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে জানান তিনি।

এলাকার বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গীনায় পতিত জমিতেও শিম চাষ হয়েছে। ধানের পরিবর্তে শিম চাষ করেছেন অনেকে। ধানের চেয়ে শিম চাষে লাভবান হওয়ায় এবার বেশির ভাগ কৃষকরা শিম চাষে ঝুঁকছেন। একই সঙ্গে কোথাও কোথাও সয়াবিনের চাষ না করে শিম চাষ করেছেন অনেক কৃষক। সবমিলিয়ে  প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শিমের চাষ। এখানকার আবাদি জমির একটি বড় অংশে গত দুই যুগের মতো নিজ উদ্যোগে কৃষকরা নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করে আসছে। গত কয়েক বছর সবজি আবাদের তালিকায় সবচেয়ে বেশি যোগ হয়েছে শিম। এ আবাদ প্রতিবছরই বেড়ে চলছে।

বর্তমানে শিম বিক্রি করে তার খরচ প্রায় উঠতে শুরু করেছে কৃষকের। স্থানীয় পেয়ারাপুর কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে পুরোদমে শিম উঠতে শুরু করছে। এখান থেকে ঢাকা ও চট্রগ্রাম খুলনা, সিলেটসহ বিভিন্ন জেলায় পাইকাররা সবচেয়ে বেশি শিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই ট্রাক লোড হয় এখান থেকে। এখনকার কৃষকরা শিম চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছেন কৃষকরা।

চাষিরা জানান, বিভিন্ন এনজিও ও সার বিক্রেতাদের কাছ থেকে কিস্তি ও বাকিতে সার ক্রয় করে শিম চাষ করে থাকেন। তাদের দাবি, চাহিদা অনুযায়ী স্বল্পসুদে কৃষি ঋণ, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট দফতরের নিয়মিত তদারকি থাকলে কৃষকরা গোটা জেলার অর্থনীতিকে আরো মজবুত করতে সক্ষম হবে। একইসঙ্গে নিজেদেরও আর্থসামাজিক মর্যাদাও বাড়বে।

রামগতির আলেকজেন্ডার এলাকায় কৃষক শরীফ হোসেন জানান, বাড়ির পাশে ১০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেছেন। এরইমধ্যে শিম তুলে বিক্রি শুরু করেছেন। খরচের তার ৪ গুণ লাভ হবে বলে আশা করছেন তিনি।

কমলনগরের সেবা গ্রামের শিমচাষি হাফিজ জানান, শিম চাষে লাভ বেশি। ঋণ নিয়ে ৪০ শতাংশ জমিতে শিম চাষ করেন। খরচ হয়েছে ৩২ হাজার টাকা। উৎপাদিত শিম বিক্রি করে তার ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে তিনি আশা করছেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. জাকির হোসেন বলেন, জেলার শীতকালীন সবজির মধ্যে এবার শিমের উৎপাদান বেশি। আবহওয়া অনুকূলে থাকায় এবং কৃষকরা কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নেয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের চেয়ে শিমের আবাদ করায় কৃষক লাভবান হচ্ছেন।