• শনিবার ২৭ জুলাই ২০২৪ ||

  • শ্রাবণ ১২ ১৪৩১

  • || ১৯ মুহররম ১৪৪৬

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
আধুনিক প্রযুক্তির মেট্রোরেল যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানতে পারছি না যে ধ্বংসযজ্ঞ চলেছে, দেশবাসীকেই বিচার করতে হবে মেট্রো স্টেশন যেভাবে ধ্বংস করেছে, মানতে পারছি না: প্রধানমন্ত্রী শিক্ষার্থীদের অহিংস আন্দোলনকে বিএনপি-জামায়াত সহিংস করেছে: জয় নাশকতার ঘটনায় অপরাধীদের ছাড় না দেয়ার দাবি জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের ধারণা ছিল একটা আঘাত আসবে: প্রধানমন্ত্রী তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ২১ জুলাই স্পেন যাবেন প্রধানমন্ত্রী আমার বিশ্বাস শিক্ষার্থীরা আদালতে ন্যায়বিচারই পাবে: প্রধানমন্ত্রী কোটা সংস্কার আন্দোলনে প্রাণহানি ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত করা হবে মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতে হবে : প্রধানমন্ত্রী পবিত্র আশুরা মুসলিম উম্মার জন্য তাৎপর্যময় ও শোকের দিন আশুরার মর্মবাণী ধারণ করে সমাজে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান মুসলিম সম্প্রদায়ের উচিত গাজায় গণহত্যার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া নিজেদের রাজাকার বলতে তাদের লজ্জাও করে না : প্রধানমন্ত্রী দুঃখ লাগছে, রোকেয়া হলের ছাত্রীরাও বলে তারা রাজাকার শেখ হাসিনার কারাবন্দি দিবস আজ ‘চীন কিছু দেয়নি, ভারতের সঙ্গে গোলামি চুক্তি’ বলা মানসিক অসুস্থতা দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে না দেশের অর্থনীতি এখন যথেষ্ট শক্তিশালী : প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবসাবান্ধব সরকার

বঙ্গবন্ধু ‘মুক্তিকামী চেতনায় ভাস্বর’

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১৭ মার্চ ২০১৯  

শেখ মুজিবুর রহমান, তিনি বাঙালি জাতির জনক। তিনি বাংলাদেশের আর একটি নাম। এটি শুধু একটি নাম নয় তিনি মহীরুহ একজন। বুক চিতিয়ে প্রতিবাদ করেছেন অন্যায়ে, বুকে লালন করেছেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। কিন্তু সেই স্বপ্ন কি একদিনেই জন্মেছিল? না। এক দীর্ঘ পথযাত্রা শেষে তিনি বাঙালিকে মুক্তির স্বাদ এনে দিয়েছেন। পথে পথে তিনিও পেয়েছেন কারও কারও ছায়া।

শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ। বৃহত্তর ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্ম ও বেড়া ওঠা। পিতা শেখ লুৎফর রহমান ও মাতা সায়েরা খাতুন। শেখ মুজিব তৃতীয় শ্রেনি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছেন টুঙ্গিপাড়ার এম ই স্কুলে। এরপর গোপালগঞ্জের পাবলিক স্কুলে চতুর্থ শ্রেনিতে ভর্তি হন।

১৯৩৪ সালে সপ্তম শ্রেনিতে পড়াকালীন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। আক্রান্ত হন বেরিবেরি রোগে। পরে কলকাতা থেকে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। দুই বছর যেতে না যেতেই ১৯৩৬ সালে তার চোখে গ্লুকোমা রোগ হয়। কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে তার দুই চোখই অপারেশন করা হয়।

স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হওয়া

চোখের চিকিৎসার পর ফিরে আসেন মাদারীপুর। কিছুকালের জন্য পড়ালেখা বন্ধ ছিল। খেলাধুলাও করতেন না। তবে প্রতিদিন বিকেলে নিয়ম করে সভায় যেতেন। মাদারীপুরের পূর্ণ দাস তখন স্বদেশী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্বদেশী আন্দোলন তখন মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের ঘরে ঘরে। স্বদেশী আন্দোলনের সভায় পনেরো-ষোল বছরের ছেলেদের উপস্থিতি ছিল অনেক। সেই দলের সঙ্গেই মেলামেশা শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। নিয়মিত সভায় যোগ দিতে থাকেন।

১৯৩৭ সালে আবার পড়ালেখা শুরু করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তবে এবার আর তিনি পুরোনো স্কুলে ভর্তি হতে রাজী হলেন না। কারণ, সহপাঠী তাকে পেছনে ফেলে গেছে। উপায় না দেখে শেখ মুজিবুর রহমানের বাবা তাকে গোপালগঞ্জ মিশন স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেন। এই সময় গৃহশিক্ষক হিসেবে পেলেন কাজী আবদলু হামিদ এমএসসিকে। আবদুল হামিদের থাকার ব্যবস্থা হলো শেখ মুজিবের বাড়িতেই। আবদুল হামিদ ছিলেন সংগঠক। গোপালগঞ্জে ‘মুসলিম সেবা সমিতি’ গঠন করেছিলেন। সমিতি পরিচালনা করার জন্য বাড়ি বাড়ি থেকে মুষ্টি চাল জোগাড় করতেন। সেই চাল বিক্রির টাকা দিয়ে গরিব শিক্ষার্থীদের পড়ার খরচ জোগানো হতো। কিশোর শেখ মুজিব শিক্ষকের সঙ্গে ঘুরে ঘুরে সমিতির কাজ করতেন। কিন্তু খুব বেশিদিন সেই শিক্ষকের ছায়া তিনি পেলেন না। আবদুল হামিদ যক্ষা রোগে আক্রান্ত হয়ে মরে যান। এরপর সমিতি পরিচালনার দায়ভার গ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান।

আওয়ামী লীগ ও শেখ মুজিবুর রহমান

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার টিকাটুলীর কেএম দাস লেন রোডের রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠিত হয় 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ'। এই দলের সভাপতি ছিলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। পরবর্তীকালে, ১৯৫৫ সালে মওলানা ভাসানীর উদ্যোগে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সংগঠনটির নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেয়া হয়। রাখা হয়; 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'। আওয়ামী লীগের জন্মসূত্রের সঙ্গে ঢাকা ১৫০ নম্বর মোগলটুলির পূর্ববঙ্গ কর্মী শিবিরের উদ্যোগের সম্পর্ক অনস্বীকার্য। পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমান কর্মী শিবির কেন্দ্রিক রাজনৈতিক কর্মতৎপরতায় বিশেষভাবে যুক্ত ছিলেন।

পুরো পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সংগঠনটির নাম রাখা হয় নিখিল পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। এর সভাপতি হন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী। ১৯৫২ সালে শেখ মুজিবুর রহমান সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান। পরের বছর পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্মেলনে ঢাকার 'মুকুল' প্রেক্ষাগৃহে তাকে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত ১৩ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন ।

শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য অন্যান্য দলকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন করতে আওয়ামী মুসলিম লীগ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর দলটি কৃষক শ্রমিক পার্টি, পাকিস্তান গণতন্ত্রী দল ও পাকিস্তান খেলাফত পার্টির সঙ্গে মিলে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।

১৯৫৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত দলের তৃতীয় সম্মেলনে দলের নাম থেকে 'মুসলিম' শব্দটি বাদ দেয়া হয়; নতুন নাম রাখা হয়: 'পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ'। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকে ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্ট-সরকার গঠন করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭টি আসনে জয়লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকদের স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব ও শোষণের ফলস্বরূপ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা লাভের পর আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে। রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে

১৯৪৮ সালে কার্জন হলের সমাবর্তন সভায় মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেছিলেন, একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। তখন শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর মুখের উপর বলেছিলেন, ‘না, উর্দু নয়, বাংলাই হবে রাষ্ট্রভাষা’। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সেদিন প্রতিবাদ করেছিলেন, টাঙ্গাইলের শামসুল হক। সরকার থেকে বলা হয়েছিল, ‘যদি ভবিষৎয়ে শেখ মুজিবুর রহমান রাজনীতি করবে না, এই মর্মে মুচলেকা লিখে দেয়; তবেই তাকে মুক্তি দেয়া হবে এবং তিনি আইন পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ পাবেন। কিন্তু শেখ মুজিবুর রহমান সেদিন মুচলেকায় স্বাক্ষর করেননি, ফলে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।

এরপরও রাষ্ট্র ভাষা বাংলার দাবিতে তিনি ছাত্রদের সংগঠিত করতে থাকেন। ১৯৪৯ সালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত একনাগাড়ে কারাগাড়ে বন্দি ছিলেন তিনি। ’৫২ সালে যখন ভাষার জন্য আন্দোলন শুরু হয় কারাগারেই আমরণ অনশন করেন শেখ মুজিব। ১৯৫২ সালের প্রথম সপ্তাহে পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠী মুক্তিদানের নামে মৃতপ্রায় শেখ মুজিবকে স্ট্রেচারে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিল।

১৯৬৬ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি শেখ মুজিবুর রহমান ছয় দফা ঘোষণা করেন। পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্বশাসন দাবি করেন তিনি। দাবির পক্ষে জনমত ও সমর্থন গেড়ে তোলার লক্ষে কাজ করেন।

১৯৬৮ সালের ১৯ জুন শেখ মুজিবকে তথাকথিত ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায়’ প্রধান আসামী করা হয়। তার বিচার শুরু হয় এবং পরবর্তীতে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন। ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সুষ্ঠু নির্বাচনে পাকিস্তানের প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ বিপুল বিজয় অর্জন করে। কিন্তু তাকে সরকার গঠনের সুযোগ দেয়া হয় নি।

১৯৭১ সালের ১ মার্চ তিনি অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। পূর্ব বাংলার মুক্তিকামী মানুষেরা তার ডাকে সাড়া দেয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি কার্যত স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হতে বলেন। রেসকোর্স ময়দানের ঐতিহাসিক ভাষণ দেন, ‘ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’।

এরপরও তৎকালীন পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ইয়াহিয়া খান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের রাজনীতিবিদ জুলফিকার আলী ভুট্টোর সঙ্গে শেখ মুজিব দফায় দফায় আলোচনা করেন।  ইয়াহিয়া- ভুট্টো গংদের সঙ্গে আলোচনা হয় কিন্তু কোন সমাধান মেলে না। তারা এদেশে অস্ত্র আর সৈন্য আনতে শুরু করে। প্রতিরোধের জন্য তৈরি হয় বাঙালি। মিছিল, মিটং, সভা চলমান থাকে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ এদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে নৃশংস গণহত্যা হয় ইয়াহিয়ার নির্দেশে।

পাকিস্তানের কমান্ডো বাহিনী বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে। তার আগেই বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করেন শেখ মুজিবুর রহমান। তার ঘোষণাটি তৎকালীন ই.পি. আর-এর ট্রান্সমিটারের মাধ্যমে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। ঘোষণাটি প্রাচারিত হয় মধ্যরাতে। তখন ২৬ মার্চ হয়ে গেছে।

নয় মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর কাছে পাকিস্তান সেনাবাহিনী আত্মসমর্পণ করে। স্বাধীন রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়।

১০ জানুয়ারি ১৯৭২ শেখ মুজিব পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করেন এবং বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন। 

১৯৭৫ সালে এক দলীয় রাজনীতি ঘোষণা করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন শেখ মুজিবুর রহমান। স্বাধীন বাংলাদেশে জীবন দিতে হয় বাঙালি জাতির জনককে। বাংলাদেশ হয়ে পড়ে মুজিবহীন বাংলাদেশ। তিনি স্থায়ী হন মুক্তিকামী বাঙালির হৃদয়ে। শেখ মুজিবুর রহমান মু্ক্তিকামী বাঙালির চেতনায় চির ভাস্বর এক নাম।

তথ্যসূত্র: অসমাপ্ত আত্মজীবনী : শেখ মুজিবুর রহমান। শেখ মুজিব আমার পিতা : শেখ হাসিনা। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস : মুহম্মদ জাফর ইকবাল। অসহযোগ আন্দোলন : রশীদ হায়দার। উইকিপিডিয়া।