• রোববার ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ||

  • আশ্বিন ৯ ১৪৩০

  • || ০৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
তথ্য অধিকার আইন প্রয়োগে জনগণকে সম্পৃক্ত করার নির্দেশ রাষ্ট্রপতির বিশ্বের ৩৫তম অর্থনৈতিক শক্তি বাংলাদেশ চুরি করা অর্থ দিয়ে আন্দোলন করছে বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী বিএনপি কি আসলেই নির্বাচন চায়, তাদের নেতা কে: প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক থেকে ওয়াশিংটনে প্রধানমন্ত্রী আগামী প্রজন্মের জন্য সমুদ্রগুলো যেন সমৃদ্ধির উৎস হয়ে থাকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কাজ করছে বাংলাদেশ পুতুলের রাজনীতিতে আসার বিষয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী সুষ্ঠু নির্বাচন হবে, জনগণ সঠিকভাবে ভোট দেবে: শেখ হাসিনা বাংলাদেশের জনগণই তাদের ‘স্যাংশন’ দিয়ে দেবে: প্রধানমন্ত্রী কোরআন পোড়ানো নিয়ে শেখ হাসিনার নিন্দা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হলে বাংলাদেশও নিষেধাজ্ঞা দেবে: প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতি ছাড়া দেশকে কিছুই দিতে পারেনি বিএনপি: প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়াতে চায় ভিয়েতনাম রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনই বাংলাদেশের অগ্রাধিকার: উজরা জেয়াকে প্রধানমন্ত্রী রোহিঙ্গা সংকটের স্থায়ী সমাধানে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকা প্রয়োজন: প্রধানমন্ত্রী যারা স্যাংশন দিয়েছে তাদের নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন আছে: প্রধানমন্ত্রী সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ গড়তে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাতে হবে: প্রধানমন্ত্রী মানুষ ও নেতা শেখ হাসিনা

নিজে নিজে ওষুধ সেবন, কোন অসুখে কী ওষুধ জানা আছে?

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১৩ নভেম্বর ২০২২  

পেটে সামান্য ব্যথা একটু গা গরম লাগছে। ছোট ভাইয়ের এই উপসর্গ দেখে নাপার সঙ্গে ফ্লাজিলের ১৫ দিনের একটা কোর্স করে ফেলতে পরামর্শ দেন বড় ভাই। শীতকাল শুরু হওয়ার আগে একমাসের মনটিয়ারের কোর্সও করে ফেলা ভালো, তাহলে শীতে আর নতুন করে সমস্যায় পড়তে হবে না। বাড়ির যে কারোর ছোটখাটো শরীর খারাপ এভাবেই সামলান বড় ভাই।

কয়েক দিন টানা ঠিকমতো ঘুম না হওয়ায় হুট করে একটা ঘুমের ওষুধ খেয়ে ফেলা, একটু মাসলে টান লেগেছে বলে একটা ব্যথানাশক খেয়ে ফেলা, গ্যাসের ওষুধের নাম জানা আছে— তা নিয়ম না মেনে খেয়ে ফেলা, ক্লান্ত লাগছে ভিটামিন ডি খেলে ক্লান্তি দূর হয় বলে কিনে খেয়ে ফেলা— এসবই আমাদের নিত্যদিনের ঘটনা। যিনি উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খান তিনি যদিবা চিকিৎসকের পরামর্শে খাওয়া ধরেন, খাওয়া ছাড়ার সময় আর  চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। ফলে সমস্যা আরও  ঘনীভূত হয়।

বাচ্চার গা গরম? রাতে নাপা দিয়ে দিও, সঙ্গে এলাট্রলও দিও। বাসায় নজাল স্প্রে কিনে রাখো। সকালে না সারলে একটু ব্রডিলও শুরু করে দেবো। বেশিরভাগ বাবা-মায়ের এসব ওষুধের নাম মুখস্থ। যখন তখন খাইয়েও দিয়ে থাকেন। ভয়াবহ বিষয় হলো— নামিদামি কিংবা পাড়ার যেকোনও ফার্মেসিতে গিয়ে শিশুদের যেকোনও ওষুধ চাইলে কখনোই প্রেসক্রিপশন দেখতে চান না বিক্রেতা।

চিকিৎসকরা বলছেন, আমাদের মধ্যে এক ধরনের ভুল ধারণা আছে যে, অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়া বাকি ওষুধ নিজেদের ইচ্ছেমতো সেবন করা যায়। কিন্তু চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কোনও ওষুধ সেবনই নিরাপদ না। অনেক সময় দেখা যায়, ভুল ওষুধ সেবন করে ভুক্তভোগীর কিডনি, হৃৎপিণ্ড, পাকস্থলী, মস্তিষ্ক— এমনকি অন্য যেকোনও অঙ্গহানির মতো জটিল সমস্যাও হতে পারে। এবিষয়ে বিক্রেতারও সতর্ক হওয়ার দরকার বলে মত দেন তারা।

উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ নিজে নিজে ডোজ নির্ধারণ

উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আব্দুর রহমান। ছয় মাস আগে তার উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে। চিকিৎসকের পরামর্শে তিনি যে ওষুধটি খাচ্ছিলেন সেটি একমাস পর চিকিৎসকের কাছে গিয়ে ফলোআপ করানোর কথা ছিল। তিনি সেটি না করে ওই ওষুধটিই  খেয়ে গেছেন।  গত এক মাস তিনি সেটিও বন্ধ করে দেন। এরপর থেকে তার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। অনিয়মিত ওষুধ, ওষুধের মাত্রা ঠিক না থাকা এবং হুট করে বন্ধ করে দেওয়ার ফলে তিনি মারাত্মক সমস্যার সম্মুখীন হন।

প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ কিনছেন ক্রেতা

প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ওষুধ কিনছেন ক্রেতা রোগীর সেলফ মেডিকেশন বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি— বিভিন্নভাবে রোগীরা সেলফ মেডিকেশন প্রাকটিস করেন। ঠাণ্ডা লাগলো ফার্মেসিতে গিয়ে একটা অ্যান্টিহিসটামিন, প্যারাসিটামল খেয়ে নিলো। অনেক সময় সামান্য ঠাণ্ডা জ্বরে অ্যান্টিবায়োটিক শুরু করে দেয়। একজন চিকিৎসক পরীক্ষা করে চিকিৎসা দিয়ে ফলোআপের জন্য এক-দুই মাস হাতে রেখে সময় দেন। অনেক সময় রোগীরা সেই ফলোআপে যাচ্ছেন না। বরং না গিয়ে নিজে নিজে ওষুধ বন্ধ করে দেন। আবার এমনও দেখা যায়, একটু সুস্থ লাগলেই ওষুধ বন্ধ করে দেয়। এর ফলে মানুষটা যে রোগে ভুগছিল, সেটা ঠিক হচ্ছে না বরং পরবর্তী চিকিৎসা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সেলফ মেডিকেশনে, অনেক ওষুধে রেজিস্টেন্স ডেভেলপ করে, ওই ওষুধ পরে আর কাজ করে না। নিজে থেকে ওষুধ খাওয়া একদমই উচিত না। এটা কেবল ব্যক্তিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না। পুরো সমাজকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। ওই জীবাণুর ক্ষতি করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। এবং অন্যদের শরীরেও তখন ওষুধটি কাজ করে না। ফলে আমাদের প্রত্যেকের সতর্ক থাকা উচিত।’

নিরীহ ওষুধ কি খাওয়া যাবে?

কাজের চাপে একটু ক্লান্ত। পরিবারের এক সদস্যকে ক্লান্তি দূর করতে ভিটামিন ডি খেতে চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এসে তার ফাইল থেকে ওষুধ বের করে দিয়ে বললেন— খেয়ে দেখো চাঙা লাগবে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে ওষুধ খাবেন কিনা জানতে চাইলে বললেন, ভিটামিনতো এমনিতেই খাওয়া যায়। এগুলো নিরীহ ওষুধ। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, নিরীহ বলে কোনও ওষুধ নেই। প্রত্যেকটা মানুষের জন্য ভিন্ন ভিন্ন ডোজ হতে পারে।

ভিটামিনকেও নিরীহ ভাবার কারণ নেই উল্লেখ করে অধ্যাপক ইকবাল আর্সলান বলেন, ‘যেকোনও ওষুধ যেমন উপকারী, তেমনই ক্ষতিকারক হিসেবে কাজ করে। ভিটামিনএ-জি-ই-কে অতিরিক্ত খেলে সেই অতিরিক্ত ভিটামিন শরীরে বিভিন্ন জায়গায় জমা হয়। এই ভিটামিনগুলো বিভিন্ন ধরনের সমস্যা তৈরি করে। ভিটামিন জাতীয় ওষুধও নিজেদের ইচ্ছামতো খাওয়া উচিত না। ভিটামিন ডি একেকজনকে একেকরকম ডোজ দেওয়া হয়। ফলে কেবল কী উপকারে আসে জানি বলেই নিজে নিজে খেয়ে নেওয়া ঠিক না।’

এখনও প্রেসক্রিপশন চায় না কেউ

সম্প্রতি অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যাপক ব্যবহার রোধে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেলে ফার্মেসির লাইসেন্স বাতিল করা হবে। কোনও ওষুধের দোকান বা কোনও অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক বিক্রি করতে পারবে না।’ কিন্তু রাজধানীর বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে জিম্যাক্স জাতীয় ওষুধ কোনো রকম প্রেসক্রিপশন ছাড়া কেনা যায়। শিশুদের কোনও ওষুধেই বিক্রেতারা প্রেসক্রিপশন চায় না। প্রশ্ন করা হলে একাধিক ফার্মেসির বিক্রেতারা বলেন, নিজের সন্তানের খারাপ কেউ চায় না। নাপা, ভিটামিন, অ্যান্টিহিস্টামিন শিশুদের লাগতেই থাকে। ফলে এসব ওষুধে সাধারণত প্রেসক্রিপশন চাওয়া হয় না।

বাংলাদেশের নামকরা প্রতিষ্ঠান লাজ ফার্মার জেনারেল ম্যানেজার আনোয়ার হোসেনকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘আমরা ঘুমের ওষুধ, অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রিপশন ছাড়া দেই না। কিন্তু তারপরেও যদি বিক্রি করা হয়ে থাকে, আমরা আজকে আবারও সবগুলো জায়গায় সতর্ক করে দিচ্ছি। আর শিশুদের ক্ষেত্রে প্যারাসিটামল, অ্যন্টিহিস্টাসিনটা দেওয়া হয়। কিন্তু অ্যাক্টিবায়োটিকে প্রেসক্রিপশন দেখতে চাওয়া বাধ্যতামূলক।’