• শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

১৯৭১: ডিসেম্বরের শুরুতে যেসব বিষয় স্পষ্ট হতে থাকে

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১ ডিসেম্বর ২০২২  

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার পরে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি, প্রশিক্ষণ আর রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাসগুলো পেরিয়ে ডিসেম্বর মাস শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও নেতৃত্বের কাছে কয়েকটি বিষয় পরিষ্কার হতে শুরু করে। ঠিক ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে— এমনকিছু আন্দাজ না করলেও একটা পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে, সেটা বুঝতে পারছিলেন।

যোদ্ধারা স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেছেন, নভেম্বর মাসে ছিল অন্যান্য মাসের তুলনায় উত্তপ্ত মাস। নভেম্বরে যুদ্ধ বেশ অর্থময়ভাবে মোড় নিচ্ছিল, তার চূড়ান্ত পরিণতি থেকে ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে মোটামুটি সবার কাছে একটা ঝাপসা চিত্র স্পষ্ট হয়ে উঠে যে, কী হতে যাচ্ছে। গভীর প্রত্যাশা নিয়ে ডিসেম্বর মাসে যাত্রা শুরু হয়েছিল। অন্তত দেশ-বিদেশে প্রচারিত তথ্য থেকে সহজেই মনে বাসা বাঁধতে শুরু করেছিল, আর দেরি নেই। এই ডিসেম্বর মাস আমাদের দেশে এক ব্যতিক্রম মাসের মর্যাদা নিয়ে এসেছে।

কী মনে হচ্ছিল মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে, জানতে চাইলে তারা বলছেন, এই মাসে বহুল আলোচিত পাক-ভারত যুদ্ধ বাঁধবে সেটা বুঝা যাচ্ছিল। পুরো যুদ্ধের সময়জুড়ে বাংলাদেশকে ভারতের স্বীকৃতি দেওয়ার বিষয়ে যে আলাপ, সেটি এই মাসে এসে পূরণ হতে যাচ্ছে— সেই আভাসও ছিল বাতাসে। একইসঙ্গে বর্তমান সংকট নিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে আলোচনা হতে পারে, এমন কথা বলছিলেন বিশ্বনেতারা। আর এসব যদি একে একে আসলেই ঘটে, তাহলে এ মাসেই ইয়াহিয়া নিশ্চিত পিছিয়ে যাবে এবং বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করবে। একদিকে ছিল শেখ মুজিবের বিচারের বিষয়টি, আরেকদিকে আলোচনায় ছিল জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের কর্মসূচি বানচালের সম্ভাবনা। এসব মিলিয়ে তারা ভাবছিলেন— এই বুঝি শেষ হতে চলেছে খান শাসনামল।

বাঙালিদের এই অনুমান একেবারে অকারণ ছিল না। ডিসেম্বরের এক তারিখ থেকে যে মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপক অভিযান বাংলাদেশের সর্বত্র দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে, তার সাক্ষী ইতিহাস। ডিসেম্বরের ৪ তারিখ ভারতীয় সেনাবাহিনীর যোদ্ধারা এসে হাতে হাত রাখলো এবং ভারতীয় ও বাংলাদেশ বাহিনীর মিলিত সেনাদলের যুদ্ধের দামামায় প্রকম্পিত হলো চারপাশ।

সেসময় লন্ডনে বসে যুদ্ধ পর্যবেক্ষণ ও জনমত গঠনের কাজ করেছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। ডিসেম্বরের শুরুতেই কেন মনে হচ্ছিল যে আমরা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে— বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘১৯৭১ সালের নভেম্বরে ইন্দিরা গান্ধী গেলেন লন্ডনে। সেখানে ভারতীয় বাঙালি মিলে কয়েক হাজার লোকের একটি সম্মেলন হয়েছিল। একটা কথা বলেছিলেন তিনি। ‘আমরা একটি আগ্নেয়গিরির ওপর বসে আছি। এই অবস্থা বেশি দিন চলতে দিতে পারি না।’ তার সেদিনের ভাষণ থেকে আমরা বুঝতে পারছিলাম পরিবর্তন ঘটছে এবং যুদ্ধে এবার তারা সরাসরি জড়িয়ে পড়ছে। এছাড়া বিশ্ব মিডিয়া— টাইমস, টেলিগ্রাফ, হেরাল্ড ট্রিবিউন, বিবিসিতে প্রকাশিত তথ্যাদি নিশ্চিত করছিল, মুক্তিযোদ্ধারা দেশে ঢুকে পড়ে একটার পর একটা অঞ্চল শত্রুমুক্ত করতে শুরু করেছে। এছাড়া ভুট্টোর জাতিসংঘে যাওয়ার সিদ্ধান্ত, ইয়াহিয়া বারবার বলছিল— তাদের সঙ্গে যোগ দিতে চীন, আমেরিকা আসবে, কিন্তু আসছিল না। এ থেকে বুঝা যাচ্ছিল যে, আসলে পাক হানাদার বাহিনীর সেই আত্মবিশ্বাস আর নেই। পরিস্থিতি এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, দ্রুত শুরু হবে চূড়ান্ত যুদ্ধ।’’

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘শেষের দিকের দিনগুলো মনে করলে দেখতে পাই— কী ভয়ানক আর বিস্ফোরিত মুহূর্ত কেটেছিল এ দেশে। এক একটি দিন যায়, আর আমাদের সামনের পথ পরিষ্কার হতে থাকে। ডিসেম্বরের শুরুতে আশাবাদ সৃষ্টি হয়েছিল। তবে একইসঙ্গে বিরুদ্ধ শক্তি সক্রিয় ছিল— সমানভাবে আমরা সেটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম। বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের ঘটনাপ্রবাহ প্রকাশের পরে আমরা সেটা খেয়াল করেছি। মনে রাখা উচিত ছিল, যেকোনও দল পরাজিত হওয়ার শঙ্কায় একটা বিকল্প পরিকল্পনা সঙ্গে রাখে।’

ডিসেম্বরের শুরুতে মেলাঘর সদর দফতরে ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর সুলতান মাহমুদ সিমন। ডিসেম্বরের ৮ তারিখের দিকে কলকাতায় গিয়ে মুজিবনগর সদর দফতরে কাজ শুরু করেন তিনি।

সুলতান মাহমুদ সিমন বলেন, ‘ডিসেম্বর না, মোটামুটি নভেম্বরের শেষ থেকেই আমরা ধারণা করছিলাম যে, বিজয়ের দিকে এগোচ্ছি। মনে করার কারণ হচ্ছে— সেই সময় থেকে মুক্তিবাহিনীর যৌথ কমান্ডের নেতৃত্বে আক্রমণ শুরু হয়। দেশের অভ্যন্তরের প্রায় প্রতিটি থানায় রাজাকার ও আর্মিদের ঘিরে ফেলা গেছে। কেউ বের হতে পারছিল না। প্রত্যন্ত থানা দখলে নেওয়া গেছে। ফলে ফলাফলটা আন্দাজ করা যাচ্ছিল। আমি তখন মেলাঘরের হেডকোয়ার্টারে ছিলাম। দেশজুড়ে আক্রমণ চলছিল সেটা জানতে পারছিলাম।’ কীভাবে জানতেন সেসময় প্রশ্নে তিনি বলে, ‘রেডিওতে এবং আমাদের নিজেদের যোগাযোগের কিছু কৌশল ছিল সেসবের মাধ্যমে পেতাম। কী হতে চলেছে সেটা আরও স্পষ্ট হচ্ছিল— যখন দেখলাম, মার্কিন সপ্তম নৌবহর এলো ঠিকই, কিন্তু সোভিয়েত ইউনিয়ন দ্বারা আক্রান্ত হওয়ার কথা ভেবে ফেরত গেলো। আবার চীনও পাকিস্তানকে সহায়তা দিতে চেয়েও পিছিয়ে পড়লো। ফলে ওই সময় আমাদের কাছে ভবিষ্যতের চিত্রটা পরিষ্কার হতে শুরু করে।’