• সোমবার   ২৭ মার্চ ২০২৩ ||

  • চৈত্র ১৩ ১৪২৯

  • || ০৪ রমজান ১৪৪৪

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
বাইরে নালিশ করা, কান্নাকাটি করা বিএনপির চরিত্র: শেখ হাসিনা স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছায় বাইডেন বললেন ‘জয় বাংলা’ ‘জিয়াউর রহমান নির্বিচারে হাজার হাজার মানুষ হত্যা করেছেন’ অস্বাভাবিক সরকার ক্ষমতায় থাকলে কিছু লোকের কদর বাড়ে: প্রধানমন্ত্রী বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল পরিচালনা ও হ্যান্ডলিং করতে চায় জাপান মুক্তিযুদ্ধে আত্মত্যাগের ঋণ কখনো শোধ হবে না: প্রধানমন্ত্রী পাক হানাদাররা নিরস্ত্র বাঙালির ওপর অতর্কিত আক্রমণ চালায় স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে দেশবাসীকে প্রধানমন্ত্রীর শুভেচ্ছা স্বাধীনতা দিবসে যেসব কর্মসূচি নিয়েছে সরকার আমরা যুদ্ধ-সংঘাত চাই না: প্রধানমন্ত্রী গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে সবাইকে ভূমিকা রাখতে হবে ২৫ মার্চ ১৯৭১: রক্ত আর আর্তচিৎকারের ভয়াল রাত যে কোনো অর্জনেই ত্যাগ স্বীকার করতে হয়: প্রধানমন্ত্রী গুণীজনদের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই আজকের উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করলেন প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশকে প্লেন চলাচলের কেন্দ্রে পরিণত করতে রোডম্যাপ জরুরি জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সরকার কাজ করে যাচ্ছে

বিদেশি সেজে ফেসবুকে পরিচয়, এতিমখানা করার নামে প্রতারণা

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২৩  

মতিলাল মিস্ত্রি, পেশায় শিক্ষক। গ্রামের বাড়ি পিরোজপুরের নেসারাবাদ হলেও কর্মসূত্রে থাকেন ঝালকাঠি সদরে। ২০২১ সালের মার্চে সিনথীয়া ফিলিপস নামের একটি ফেসবুক আইডি থেকে ৫০ বছর বয়সী মতিলালকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠানো হয়। মতিলাল তা গ্রহণও করেন। মতিলালের কাছে নিজেকে আফগানিস্তানের কাবুলে কর্মরত একজন মার্কিন নাগরিক হিসেবে পরিচয় দেন সিনথীয়া। জানান, পরিবারে আর কেউ না থাকায় যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নিজের জমানো টাকা রাখার নিরাপদ কোনো জায়গা নেই তার। মতিলালকে তিনি বিশ্বাস করেন ও তার প্রতি আস্থা আছে বলে জানান। তাকে জানান, নিজের জমানো টাকা দিয়ে বাংলাদেশে এতিমদের জন্য কিছু করতে চান। একটি এতিমখানা নির্মাণের জন্য মতিলালের কাছে ২.৬ মিলিয়ন ডলার প্রায় সাড়ে ২৭ কোটি টাকা পাঠানোর কথা বলেন সিনথীয়া ফিলিপস।

কয়েকদিন পর সিনথীয়া ফিলিপস মতিলালকে জানান, তার ঠিকানায় ২.৬ মিলিয়ন ডলার পাঠানো হয়েছে। তবে বিশাল অঙ্কের টাকা হওয়ায় তা ছাড়াতে কাস্টমকে কিছু টাকা ফি দিতে হবে। এর কয়েকদিন পর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এম কে আজাদ পরিচয়ে একজন মতিলালকে ফোন দেন। বিমানবন্দরে তার নামে একটি পার্সেল রয়েছে বলে জানান। তবে ৬৫ হাজার টাকা ফি দিতে হবে। মতিলাল ব্র্যাক ব্যাংকের মাধ্যমে তাকে টাকা পাঠান। এরপর কাস্টমসে আটকে যাওয়ায় এটি ছাড়াতে টাকা লাগবে জানালে আরও ৫০ হাজার টাকা দেন তিনি। এরপরও পার্সেল কাস্টমসে আটকে থাকার কথা বলে এবং মানি লন্ডারিং মামলার ভয় দেখিয়ে এবার নেন ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

মূলত সিনথীয়াই মতিলালকে ধাপে ধাপে টাকা পাঠানোর কথা বলেন। তিন ধাপে মোট ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা দেওয়ার পর পার্সেল পাঠানোর কথা বললে সেটি না পাঠিয়ে আরও ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা দিতে বলেন সিনথীয়া। তবে এবার মালামাল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত আর কোনো টাকা দেবেন না বলে জানান মতিলাল। এ অবস্থায় বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য মতিলালকে মালামালের রশিদের কপি মেসেঞ্জারে পাঠানো হয়। তারপরও মালামাল না আসায় যোগাযোগ করলে সিনথীয়া তখন একটি ঠিকানা পাঠিয়ে ঢাকার রামপুরায় আজাদের কাছে আসতে বলেন। সেই ঠিকানায় এসে আজাদকে খুঁজে না পেয়ে মতিলাল বুঝতে পারেন তিনি প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়েছেন।

এ ঘটনায় ২০২১ সালে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে রাজধানীর রামপুরা থানায় একটি মামলা করেন মতিলাল মিস্ত্রি। ওই বছরের জুলাই মাসে রাজধানীর উত্তরা থেকে তথ্যপ্রযুক্তির সহযোগিতায় চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

নিজের ভুলের কথা স্বীকার করে মতিলাল মিস্ত্রি বলেন, ‘আমি তখন সাময়িকের জন্য মোহের মধ্যে ছিলাম। আমাকে সে (সিনথীয়া) ইমোশনালি ব্ল্যাকমেইল করে। আর আমিও ভেবেছি এতিমখানা করলে একটা জনকল্যাণমূলক কাজ হবে। টাকা পাঠানোর কথা জানানোর পর ৬৫ হাজার টাকা পাঠাই। পরে মানি লন্ডারিংয়ের ভয় দেখিয়ে ৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা নেয়। সিনথীয়া, আজাদ, ইউসুফ- এরা আসলে একটি চক্র। এভাবে প্রতারণা করেই অর্থ হাতিয়ে নেয় তারা। ঢাকায় বাড়িও আছে তাদের। এই চক্রের প্রধান মো. সাইফুর রহমান মিঠুর শাস্তি হোক, যেন আর কারও সঙ্গে এমন না করতে পারে।’

জানা গেছে, এই চক্রের সদস্য চারজন। এদের মধ্যে বিমানবন্দরের সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা এম কে আজাদ পরিচয় দেওয়া ব্যক্তিই মো. সাইফুর রহমান মিঠু। চক্রের অন্য সদস্যরা হলেন মো. ইউসুফ সরকার, মো. আলাল হোসেন ও এমদাদুল্লাহ। এর মধ্যে প্রথম তিনজন গ্রেফতারও হয়েছেন। আর এমদাদুল্লাহকে এখনো গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। ইউসুফ সরকারের কাছ থেকে ১২টি ব্যাংকের তিন শতাধিক চেক উদ্ধার করা হয়েছে। মো. আলাল হোসেনের কাছ থেকে তিনটি ব্যাংকের ৩০টি এটিএম কার্ড ও ৫টি ভিসা কার্ড উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ জানায়, ইউসুফ সরকারের ব্র্যাক ব্যাংকের একটি অ্যাকাউন্টে শুধু মতিলালের কাছ থেকেই টাকা লেনদেন করেনি, আরও বড় অংকের লেনদেন করা হয়েছে। এছাড়া একই ব্যাংকে গোলাম কিবরিয়া সোহাগ নামে অন্য একটি অ্যাকাউন্টেও বড় অংকের টাকা লেনদেন করা হয়েছে। এসব লেনদেনের সবই করেন প্রতারক চক্রের মূলহোতা মো. সাইফুর রহমান মিঠু। তার পরামর্শেই ইউসুফ সরকার ব্যাংকে একাধিক হিসাব খোলেন এবং এটিএম কার্ড ও হিসাব বইয়ে স্বাক্ষর করে মিঠুর কাছে দেন।

শুধু তাই নয়, চক্রের প্রধান সাইফুর রহমান মিঠু এই কাজের জন্য দরিদ্র লোকদের টাকার লোভ দেখিয়ে তাদের দিয়ে বিভিন্ন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলে এটিএম কার্ড ও চেকবই স্বাক্ষর করে নিতেন। এসব অ্যাকাউন্টে প্রতারণার মাধ্যমে লেনদেন করা টাকা তুলে নিতেন। এসব অ্যাকাউন্টে অধিকাংশই ভুল ঠিকানা দেওয়া হতো। লেনদেন দেখভালের দায়িত্ব পালন করেন মো. আলাল হোসেন। তিনিই চক্রের প্রধান সাইফুর রহমান মিঠুকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে দেন। এভাবে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা রাজধানী রামপুরা থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক নুরুজ্জামান বলেন, ‘চক্রটি মানুষের কাছ থেকে বিভিন্নভাবে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিতো। এ কাজে তারা দরিদ্র মানুষকে দিয়ে ব্যাংক হিসাব খুলে অর্থ লেনদেন করতো। তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাজ চলছে।’

অনলাইন মাধ্যমগুলোতে প্রতারণার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ও অপরাধ বিশ্লেষক তৌহিদুল হক বলেন, লোভে পড়ে বা প্রেমের কারণে অনেকে প্রতারণার শিকার হোন। অল্পতেই পরিচিত হয়ে লোভে পড়ে অর্থ লেনদেন করেন। এক্ষেত্রে যাচাই না করে কোনোভাবেই অর্থ লেনদেন করা উচিত নয়। অনেকে প্রেমের সম্পর্ককে কেন্দ্র করে আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না। ফলে এই ধরনের প্রতারণার শিকার হোন অনেকে। এর সমাধান হলো যতই প্রস্তাব আসুক না কেন, শতভাগ নিশ্চিত না হয়ে অর্থ লেনদেনে সতর্ক থাকুন।