• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী

দুর্ধর্ষ এক ডাকাতির গল্প

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২৩  

এ যেন সিনেমার কাহিনিকেও হার মানানো গল্প। ঈদের দিনকে বেছে নিয়েছিলেন ডাকাতির জন্য। টার্গেট ছিল আরএফএল নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউজ তথা গোডাউন। ডাকাত দলের সদস্যরা গত ঈদুল ফিতরের দিন সেই ওয়্যারহাউজে গিয়ে একে একে ২৭ জনের হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে রাখে। এরপর ভাড়া করে আনা একটি ট্রাক ঢোকানো হয় সেই ওয়্যারহাউজে। গোডাউনের তালা ভেঙে তারা প্রায় ৪ কোটি টাকা মূল্যমানের মালামাল ট্রাকে লোড করে নিয়ে যায়। পুরো সময় ডাকাত দলের সদস্যদের দুজন নিরাপত্তাকর্মীর পোশাক পরে গেটে পাহারা দেয়। ট্রাক ভর্তি করে মালামাল নিয়ে যাওয়ার সময় আরএফএলের একটি গেটপাসও নিয়ে যায়। সেসব মালামাল চট্টগ্রামে নিয়ে বিক্রি করা হয়।

প্রায় এক মাসের চেষ্টায় সেই ডাকাত দলের চার সদস্য ও চোরাই মাল ক্রয় করা ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ- ডিবির ডেমরা জোনাল টিম। উদ্ধার করা হয়েছে ডাকাতি করা সেসব মালামালের প্রায় পুরোটা। ডাকাত চক্রের সদস্যদের ধরতে গিয়ে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে এই চক্রটি রূপপুর থেকে নাটোরের বিদ্যুৎ লাইনের কাজ করা ট্রান্সরেল লাইটিং কোম্পানি নামে ভারতীয় একটি কোম্পানির ডিপো থেকেও চার কোটি টাকার মালামাল ডাকাতি করেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রটির পাঁচ সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে জনি ও আব্দুল আজিজ ওরফে বাবলু নামে দুই জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। দুটি ডাকাতির ঘটনাতেই কয়েক কোটি টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। ডাকাত চক্রের বাকি সদস্যদের ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে।

আরএফএলের ডিপোতে ডাকাতি হয় যেভাবে

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দলের অন্যতম সদস্য জয়নাল আবেদীন ওরফে রবিউল ওরফে কালাম জানায়, আগে সে যাত্রাবাড়ী-জুরাইন এলাকায় চুরি ও ছিনতাই করতো। ২০১৭ সালে ভ্যানে বহন করা ফার্নিচার ছিনতাই করতে গিয়ে ভ্যানচালককে হত্যা করেছিল তারা। ওই মামলায় সাড়ে তিন বছর জেলে ছিল। জেলের ভেতর তার সঙ্গে পরিচয় হয় স্বপন নামে এক ডাকাত সদস্যের। জেল থেকে জামিনে বের হয়ে স্বপনের সঙ্গে দল বেঁধে ১০-১২ জনের একটি ডাকাত চক্র তৈরি করে। ঈদের ছুটির সময় আরএফএলের ডিপোতে ডাকাতি করার পরিকল্পনা করে তারা।

জয়নাল জানায়, ঈদের কয়েক দিন আগে থেকেই ডেমরা থানাধীন দেইল্যায় আরএফএলের কেন্দ্রীয় স্টোরে ডাকাতির জন্য রেকি করে। ঈদের দিন দুপুরে তারা আগে থেকেই তেজগাঁও থেকে একটি ট্রাক ভাড়া করে রাখে। সন্ধ্যায় ডাকাত দলের ১০-১২ জন সদস্য যাত্রাবাড়ী এলাকায় মিলিত হয়ে দেইল্যায় আরএফএলের কেন্দ্রীয় স্টোরের সামনে যায়। রাত ৯টার দিকে কেন্দ্রীয় স্টোরের ভেতরে ঢুকতেই দুই নিরাপত্তাকর্মী তাদের পরিচয় জিজ্ঞাসা করে। পরিচয় দেওয়ার কথা বলে নিরাপত্তাকর্মীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে ফেলে। পরে ডাকাত দলের দুই সদস্য শুক্কুর ওরফে সুজন ও জনি নিরাপত্তাকর্মীদের পোশাক নিজেরা পরে গেটে দায়িত্ব পালন শুরু করে।

ডাকাত সদস্য জয়নাল জানায়, এরপর তারা কেন্দ্রীয় স্টোরের ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের রাতে থাকার কক্ষগুলোতে যায়। সেখানে গিয়ে প্রতিটি কক্ষে থাকা দুই-তিন জন করে শ্রমিককে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে হাত-পা বেঁধে রাখে। স্টোরের ভেতরে থাকা ৭-৮ জন শ্রমিককে হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে আটকে রাখে।

গ্রেফতার হওয়া ডাকাত দলের আরেক সদস্য রুহুল আমিন জানায়, ঈদের দিন হওয়ায় অনেক শ্রমিক বিকালে ঘুরতে বেরিয়েছিল। তারা ভেতরে থাকা অবস্থায় রাতে একজন-দুজন করে শ্রমিক ফিরতে শুরু করে। যারাই কেন্দ্রীয় স্টোরের ভেতরে ঢুকেছে তাদের প্রত্যেককেই অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে হাত-পা বেঁধে একটি কক্ষে শুইয়ে রাখা হয়েছিল। রাত ১২টার দিকে আরএফএলের একটি গাড়ি ঢুকে ওই স্টোরে। গাড়িটি ভেতরে ঢোকার পরপরই গাড়ির চালক ও সহযোগীকে একই কায়দায় হাত-পা বেঁধে আটকে রাখা হয়।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ডাকাত দলের সদস্যরা মোট ২৭ জনকে হাত-পা বেঁধে আটকে রেখে। রাত ১২টার দিকে তারা ভাড়া করা ট্রাকটি কেন্দ্রীয় স্টোরের ভেতরে নিয়ে যায়। গোডাউনের তালা ভেঙে তারা দুই কোটি ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা মূল্যমানের দুই হাজার ৭৭০টি নতুন হাউস কানেকশন ওয়াটার মিটার ও ১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা মূল্যমানের পুরাতন হাউস কানেকশন ওয়াটার মিটার, সাড়ে তিন লাখ টাকা মূল্যমানের একটি ইপিআরভি মেশিন ও নগদ ১৭ হাজার টাকা নিয়ে যায়।

ডাকাত সদস্য জয়নাল জানায়, তারা ট্রাকে সকল মালামাল লোড করে আরএফএলের কেন্দ্রীয় স্টোর থেকে একটি মালামালের আউট পাস তৈরি করে সোজা চট্টগ্রাম চলে যায়। চট্টগ্রামের পাহাড়তলির সাগরিকা এলাকার আজওয়াত ট্রেডিং করপোরেশনের কাছে ২৭ লাখ টাকায় মালামালগুলো বিক্রি করে। পরে স্বপন ও সে নিজে বেশিরভাগ টাকা নিয়ে বাকি টাকা অন্য সদস্যদের মধ্যে ভাগ করে দেয়।

পুলিশ কর্মকর্তা আজহারুল ইসলাম মুকুল জানান, অভিযান চালিয়ে প্রথমে আজওয়াত ট্রেডিং করপোরেশন থেকে চোরাই মালামালের অধিকাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। পরে ডাকাত চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে।

একই কায়দায় নাটোরেও ডিপোতে ডাকাতি

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, ডেমরার এই ডাকাতির ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে তারা জানতে পারেন একই চক্র নাটোর সদরের হযরতপুরের সাতুরিয়ায় ট্রান্সরেল লাইটিং লিমিটেডের একটি ডিপোতে ডাকাতি করেছিল। গত ২৩ মে রাতে ডাকাত দল ডিপোর দুই নিরাপত্তাকর্মীর হাত-পা বেঁধে প্রায় সাড়ে চার কোটি টাকার মালামাল নিয়ে যায়। ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ট্রান্সরেল লাইটিং লিমিটেড পাওয়ার গ্রিড কোম্পানির অধীনে রূপপুর থেকে নাটোর পর্যন্ত ৪০০ কেবি সিঙ্গেল ট্রান্সমিশন লাইনের কাজে নিয়োজিত। এই ঘটনায় ট্রান্সরেলের ভারতীয় কর্মকর্তা সুফল ঘোষণ বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়া ডাকাত সদস্য জয়নাল, শুক্কুর ও রুহুল জানান, তারা ১০-১২ জনের ডাকাত দল আগের মতোই পরিকল্পনা করে নাটোরের এই ডাকাতি করতে যান। সিরাজগঞ্জ থেকে দুটি ও সাভার থেকে তিনটি ট্রাক ভাড়া করে মধ্যরাতে ওই ডিপোতে গিয়ে দুই নিরাপত্তাকর্মীকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বেঁধে রাখেন। পরে নিজেরাই ডিপো থেকে মালামাল ট্রাকে লোড করে নিয়ে যান। চট্টগ্রামে গিয়ে একটি ট্রাকে থাকা সাড়ে ৯ টন লোহা ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। বাকি দুই ট্রাকের মালামাল বিক্রির আগেই গোয়েন্দা পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে।

চোরাই মাল কেনার বড় চক্র চট্টগ্রামে

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ঢাকাসহ সারা দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে চোরাই মালামাল বিক্রি করা হয় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট জানার পরেও ডাকাতি ও চোরাইকৃত মালামাল কম দামে কিনে বিক্রি করে অধিক মুনাফা করে থাকে। পাহাড়তলির আজওয়াত ট্রেডিং করপোরেশন তার মধ্যে অন্যতম। এর মালিক আব্দুল আজিজ ওরফে বাবুলকে গ্রেফতারের পর সে দীর্ঘদিন ধরে চোরাই মালামাল কেনাবেচা করার কাজ করে আসছে বলে স্বীকার করেছে।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, চট্টগ্রামের চোরাই মালামাল কেনার সিন্ডিকেট অনেক কৌশলী। তারা চোরাই পণ্য কেনার আগে ট্রাকসহ একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে থাকতে বলে। সেখান থেকে তাদের নিজেদের চালক ট্রাক নিয়ে যায়। মালামাল আনলোড করে ট্রাকটি আগের জায়গায় দিয়ে যায়। পরে দরদাম অনুযায়ী টাকা বুঝিয়ে দেয়। যাতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী পিছু নিয়েও এই মালামাল উদ্ধার করতে না পারে সে জন্য এই কৌশলে চোরাই মালামাল বেচাকেনা হয়।