• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৫ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী

খুললো শত-সহস্র স্বপ্নের পদ্মা সেতুর দুয়ার

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২৫ জুন ২০২২  

বাংলাদেশের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলো। উন্মোচিত হলো যোগাযোগের নতুন দিগন্ত। এ যেন বাঙালির স্বপ্ন ও সাহসের জয়। সেই সঙ্গে খুলে গেলো আরও শত সহস্র স্বপ্নের দুয়ার।

সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনসহ সবাই বলছেন, নিজেদের টাকায় তৈরি পদ্মা সেতু দেশের উন্নয়নে নতুন দিগন্তের সূচনা করবে। অবসান হবে দীর্ঘদিনের যোগাযোগের ভোগান্তি। একই সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে। অবহেলিত দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে গড়ে উঠবে শিল্প-কারখানা। ঘুচবে বেকারত্বের অভিশাপ।

শনিবার (২৫ জুন) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদ্মা সেতুর উদ্বোধন করেন। এর আগে সকাল ১০টা ৫ মিনিটে সেতুর থিম সং পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর মাওয়া প্রান্তে সুধী সমাবেশে ভাষণ শেষে পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী ফলক উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মাধ্যমেই খুলে যায় দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ।

দুইপাড়ের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও চাষিরা বলছেন, সেতুর ফলে আমরা অনেক লাভবান হবো। যাতায়াতের সুবিধায় সম্প্রসারিত হবে ব্যবসার পথ। ফলে সচল হবে অর্থনীতির চাকাও। সাধারণ মানুষ কৃষিপণ্য কম দামে বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করতে পারবে।

চাষিরা জানান, পদ্মাপাড়ে নানা ধরনের শাক-সবজি হয়। এসব সবজি ঢাকায় নিতে আগে লাগতো কয়েক ঘণ্টা। অথচ এখন কম সময়ে ঢাকায় নেওয়া যাবে।

মুন্সিগঞ্জের লৌহজং উপজেলার কুমারভোগ এলাকার ব্যবসায়ী আবদুল মালেক মাতবর বলেন, এই সেতুর কারণে আমাদের ব্যবসা বাড়বে। সহজে নানা জায়গায় মালামাল নিয়ে যেতে পারবো। এরই মধ্যে আমাদের অঞ্চলে প্রতিদিন নানা জায়গা থেকে মানুষ আসছে। এতে লাভবান হচ্ছে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা। এটা এখন এক ধরনের পর্যটন এলাকা হয়ে গেছে। সামনে আরও বাড়বে।

মাদারীপুরের শিবচরের সাহেব বাজারের ব্যবসায়ী মো. বাহাদুর বলেন, আমার দুটি দোকান রয়েছে। একটি পানের। আমাকে পান কিনতে বরিশাল যেতে হয়। সেতু চালু হলে ঢাকা থেকে কিনতে পারবো। আগে তিন-চার ঘণ্টা সময় লাগতো ঢাকা যেতে। এখন দেড় ঘণ্টায় পৌঁছাতে পারবো। মালপত্র নিয়ে একদিনে দু-তিনবার ঢাকা থেকে আসা-যাওয়া করা যাবে। আমার আরেকটা দোকান আছে পার্টসের। সেতু চালু হলে দ্রুত সময়ে ঢাকা থেকে পার্টস আনা যাবে।

বিকে নগরের সবজি চাষি হাফিজুর ব্যাপারী বলেন, আমাদের এখানকার পাটশাকের কদর ঢাকায় অনেক বেশি। এছাড়া এ অঞ্চলে পেঁয়াজ, করলা, শসা, ধুন্দল ও লাউ ভালো হয়। ফেরি পারাপারের কারণে ঢাকায় যেতে আমাদের চার থেকে সাড়ে চার ঘণ্টা সময় লাগে। ঝামেলা তো আছেই। তবে এবার সেতু দিয়ে কম সময়ে সবজি ঢাকার শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজারে নিয়ে যেতে পারবো।

শুধু পদ্মারপাড় নয়, শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলায়ও প্রভাব পড়েছে এর। নড়িয়া পৌরসভার শুভগ্রাম, বাড়ইপাড়া, বিসমিল্লাহনগর, বৈশাখীপাড়া, ঢালিপাড়া ও বাঁশতলায় এক কড়া জমি ১৫ লাখ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এখানে নানা ধরনের ফাস্টফুডের দোকান তৈরি হয়েছে। তৈরি হয়েছে ছোট ছোট বিপণি-বিতান।

ফরিদপুরের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতু উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে দেশি-বিদেশি সব ষড়যন্ত্রের মুখোশ উন্মোচন হলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার যে চ্যালেঞ্জ ছিল, সেটার বিজয় হয়েছে। আমরা উৎসব করছি এই বিজয়ের। এই সেতু বাংলাদেশের সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক প্রাণবন্ত গতি সঞ্চার করবে।

মাদারীপুর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাজল কৃষ্ণ দে বলেন, পদ্মা সেতু হওয়ায় অর্থনৈতিকভাবে গতিশীল হবে মাদারীপুর। এছাড়া সদর, শিবচর উপজেলা ও পার্শ্ববর্তী জেলা শরীয়তপুরে শিল্পায়ন হবে। পদ্মা সেতু ঘিরে এই এলাকায় হবে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অবকাঠামো। এতে মাদারীপুরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, পদ্মা সেতুর কারণে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি হবে প্রায় ২ শতাংশের কাছাকাছি। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, পদ্মা সেতুর ফলে আমাদের বিনিয়োগ, বিতরণ ও বিপণনগুলোতে যে সাশ্রয় হবে, সেটা অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। এরই মধ্যে পদ্মার করিডোরের পাশ দিয়ে বিনিয়োগের বিভিন্ন ধরনের সাইনবোর্ড দেখা যাচ্ছে। এসব বিনিয়োগে যে কর্মসংস্থান হবে, সেগুলো আমাদের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অবদান রাখবে।

ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, পদ্মা সেতু আমাদের অগ্রযাত্রার ঐতিহাসিক মাইলফলক। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এ সেতু অবদান রাখবে অনেক।

অর্থনীতিবিদ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের পণ্য আমদানি সহজ হয়ে গেলো। এতে করে প্রবৃদ্ধি ১ থেকে সর্বোচ্চ ২ শতাংশ বাড়বে।

তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, পদ্মা সেতুর কারণে ক্রেতা ও ব্যবসায়ী উভয় লাভবান হবে। এই সেতু চালু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে কাঁচামাল আমদানি আরও সহজ, সুলভ ও দ্রুত হবে। এতে সহজ হবে আমদানি-রপ্তানি। বিভিন্ন বন্দর এলাকায় পোশাকসহ আরও অনেক শিল্পপ্রতিষ্ঠান হবে।

অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত বলেন, আমি ব্যাংকগুলোতে দেখছি, গত দুই বছরে শিল্প-কারখানার যত প্রস্তাব এসেছে তার অধিকাংশই পদ্মার ওপাড়ের অঞ্চলের মানুষ থেকে এসেছে। এর অধিকাংশই কৃষিভিত্তিক শিল্প। এর মানে মানুষ অলরেডি ওইসব অঞ্চলে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা করেছে।

তিনি আরও জানান, ২০২৭ সালে জিডিপিতে ৯ দশমিক ৫২ শতাংশ অবদান রাখবে এই পদ্মা সেতু। ওই সময় দেশের জিডিপির আকার হবে ৬৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ লাখ কোটি টাকা হবে দক্ষিণাঞ্চলের কারণে।