• বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১২ ১৪৩১

  • || ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ভোলার গ্যাস আসছে জাতীয় গ্রিডে

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২১ মে ২০২৩  

দেশের ক্রমবর্ধমান জ্বালানির চাহিদা মেটাতে সম্ভাবনা দেখাচ্ছে দ্বীপ জেলা ভোলার গ্যাস। মজুত ২ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের মধ্যে এই অঞ্চলের ৯ কূপ থেকে দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ২শ’ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। কিন্তু উৎপাদন সক্ষমতা থাকার পরও শুধুমাত্র পাইপলাইন না থাকার কারণে এই অঞ্চলের গ্যাস জাতীয় গ্রিডে যোগ করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি এই প্রাকৃতিক গ্যাসকে সিএনজিতে (কমপ্রেসড ন্যাচারাল গ্যাস) রূপান্তর করে আনার উদ্যোগ শুরু হয়েছে। এ সংক্রান্ত চুক্তি  রবিবার অনুষ্ঠিত হবে। এতদিন মোট উৎপাদনক্ষমতার মাত্র ৮০ থেকে ৮৫ ঘনফুট স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হলেও এবার থেকে এখানকার উদ্বৃত্ত গ্যাসের পুরোটাই জাতীয় গ্রিডে যোগ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজসম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) বলছে, দেশে এখন দৈনিক গ্যাসের চাহিদা ৩৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট। আর এর বিপরীতে সরবরাহ করা হচ্ছে ২৭০০ মিলিয়ন ঘনফুটের মতো। সে হিসেবে প্রতিদিন গ্যাসের ঘাটতি থাকছে ৬০০ মিলিয়ন ঘনফুট। এদিকে গ্যাসের অভাবে শিল্প কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর উৎপাদনও ব্যহত হচ্ছে। ফলে গত বছরের শেষ থেকে লোডশেডিং করে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো বন্ধ রাখা হয়।

সম্প্রতি এলএনজি আমদানি সাপেক্ষে এগুলো চালু হলেও প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে মহেশখালীর ভাসমান এলএনজি টার্মিনাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আবার বন্ধ হয়ে যায়। ফলে আবারও তীব্র লোডশেডিংয়ের কবলে পড়েছে দেশ। এমন অবস্থায় ভোলার গ্যাস কিছুটা হলেও চাহিদা মেটাতে পারত উল্লেখ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন উৎপাদন সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র আনার উপায় না থাকার কারণে জাতীয় সম্পদ এরকম অব্যবহৃত থাকবে তা মানা যায় না। তাই সরকারের প্রতি তাদের আহ্বান ছিল যত দ্রুত সম্ভব এ গ্যাসকে জাতীয় গ্রিডে আনতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়ার জন্য। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি ভোলার গ্যাস আনার প্রক্রিয়ার প্রাথমিক কার্যক্রম শুরু করেছে জ্বালানি বিভাগ। নির্ধারণ করা হয়েছে ভোক্তা পর্যায়ে এই গ্যাসের মূল্য।

জ্বালানি বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে সম্প্রতি বলা হয়, বর্তমান বৈশ্বিক জ্বালানি পরিস্থিতিতে দেশে বিদ্যুৎসহ শিল্প কারখানায় গ্যাসের সংকট নিরসনে ভোলা অঞ্চলের উদ্বৃত্ত গ্যাসে সর্বোত্তম ব্যবহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এরই অংশ হিসেবে সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড (এসজিসিএল)-এর তত্ত্বাবধানে ইন্ট্রাকো রিফুয়েলিং স্টেশন লিমিটেডের মাধ্যমে গ্যাস কম্প্রেসড করে নিয়ে এসে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল) এর আওতাধীন এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের সরবরাহ করা হবে। এক্ষেত্রে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের মূল্য হবে ৪৭.৬০ টাকা। এর মধ্যে উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানের চার্জ ৩০.৫০ টাকা, ফিড গ্যাসের মূল্য ১৭ টাকা এবং ডিমান্ড চার্জ ০.১০ টাকা অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এসব বিষয়ে  রবিবার ইন্ট্রাকোর সঙ্গে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হতে যাচ্ছে জানিয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাকশন কোম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী বলেন, ভোলার মোট ৯টি কূপের মধ্যে শাহবাজপুর গ্যাসফিল্ডে সর্বোচ্চ উৎপাদন হচ্ছে ১৩০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। এর মধ্যেমে স্থানীয় চাহিদা মেটাতে ব্যবহৃত হচ্ছে মাত্র ৮০ থেকে ৮৫  মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। বাকিটা উদ্বৃত্ত থেকে যেত। আর ভোলা নর্থের ২ ও ইলিশা-১ এর উৎপাদন সক্ষমতা ৬০ থেকে ৬২ মিলিয়ন হলেও এটি পুরোপুরি অব্যবহৃত রয়েছে। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে সিএনজি আকারে আনা হবে ভোলার এ উদ্বৃত্ত গ্যাস।

এটি ঠিক কোন প্রক্রিয়ায় আনা হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোলা থেকে সিএনজি আকারে গ্যাস ব্যবহার করতে মূলত ‘ক্যাসকেড’ পদ্ধতির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ক্যাসকেড হচ্ছে উচ্চচাপের গ্যাস সিলিন্ডার স্টোরেজ সিস্টেম, যেখানে অনেকগুলো ছোট  ছোট সিলিন্ডার থাকে। কম্প্রেসার দিয়ে সেগুলো রিফিল করে অন্যত্র পরিবহন করা হয়। এরপর সেই গ্যাস বিতরণ কোম্পানির পাইপলাইনে কিংবা সরাসরি শিল্প এলাকায় বিতরণ করা হয়। তবে এ পরিকল্পনা এখনই চূড়ান্ত নয়। এতদিন আমরা সিএনজি আকারে গ্যাস সরবরাহের এ পরিকল্পনা কতটুকু বাস্তবসম্মত, ব্যবহার উপযোগী ও বৈশ্বিকভাবে কিভাবে সরবরাহ করা হয় সেসব দিক বিবেচনা করেছি। পেট্রোবাংলাও কাজ করেছে। তারা পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এটি আনা সম্ভব। আর তাই দাম নির্ধারণ প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে।

সাম্প্রতিক সংকটে দেশীয় কূপ খননসহ ঘাটতি গ্যাসের চাহিদা মেটাতে নানামুখী তৎপরতা শুরু করে জ্বালানি বিভাগ। এই তৎপরতার অংশই এই ভোলার গ্যাস আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানিয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ  বলেন, দ্বীপ জেলা ভোলায় যে কয়টি গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেগুলোর বর্তমান দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২০০ মিলিয়ন ঘনফুট। স্থানীয় চাহিদা মেটানোর পরেও ৭০ থেকে ৮০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস অব্যবহৃত থেকে যায়। যা পাইপলাইন না থাকার কারণে ভোলার বাইরে নেয়া সম্ভব হয়নি এতদিন। এখন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন এই গ্যাস আনার জন্য। তাই আমরা চেষ্টা করছি এটি আনার। যেহেতু আমাদের পাইপলাইন নেই তাই এখনি পুরো গ্যাস আনা যাবে না। আপাতত: ২৫ মিলিয়ন ঘনফুটের বেশি গ্যাস আসবে না। তবে আমরা পাইপলাইন তৈরির কাজ শুরু করব শীঘ্রই। এটি হলে ভোলা থেকে উৎপাদিত সব গ্যাসই জাতীয় গ্রিডে আসবে।

প্রসঙ্গত, দ্বীপ জেলা ভোলায় ১৯৯৫ সালে গ্যাসের মজুত আবিষ্কার হওয়ার আড়াই দশক পেরিয়ে গেলেও সেই জ্বালানি উত্তোলন নিয়ে বৃহৎ কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। বিভিন্ন সময় নানামুখী পরিকল্পনা করা হলেও কখনো অর্থনৈতিক আবার কখনো রাজনৈতিক কারণে তা মুখ থুবড়ে পড়ে। ভোলার শাহবাজপুরে বাপেক্সের বর্তমানে পাঁচটি গ্যাসকূপ উৎপাদনে রয়েছে। কূপগুলোর দৈনিক উৎপাদন সক্ষমতা ১৪০ মিলিয়ন ঘনফুট। যদিও এখন ৬৫ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হচ্ছে দৈনিক। সেই গ্যাস স্থানীয় বিদ্যুৎকেন্দ্র ও আবাসিকে সরবরাহ করছে বিতরণকারী প্রতিষ্ঠান সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানি লিমিটেড। তারাই শিল্প কারখানাগুলোতে সিএনজি করা গ্যাস সরবরাহ করবে জানিয়ে জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, সুন্দরবন সিএনজিকৃত সেই গ্যাস তিতাসকে হস্তান্তর করবে। তিতাস তাদের তালিকাভুক্ত যেসব শিল্প-কারখানা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে দাবিদার তাদের সরবরাহ করবে। তবে যেহেতু পরিমাণটা খুব কম তাই জাতীয় গ্রিডে এখনই খুব একটা প্রভাব না পরলেও পাইপলাইন হয়ে গেলে জ্বালানির বড় চাহিদা মেটানো যাবে বলে আশা করছি।

সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশ কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) এর জ্বালানি উপদেষ্টা জ্বালানি অধ্যাপক এম শামসুল আলম বলেন, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমরা আগে থেকেই এ বিষয়ে জোর দিচ্ছিলাম। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে সরকারকে বলেছি নিজেদের উৎপাদিত গ্যাস অহেতুক পরে থাকার চাইতে কোনো না কোনোভাবে তা কাজে লাগানো হোক। দেরিতে হলেও সরকার এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিচ্ছে। এভাবে একে একে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের অনুসন্ধান বাড়বে বলে মনে করি। তবে এ কাজে যারা নিয়োজিত তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে, দুর্নীতি আর ধান্দাবাজি না করে নিজেদের কাজটা ঠিকঠাক করে যাবেন। না হলে সব মহৎ উদ্যোগই ভেস্তে যাবে।

ভূতত্ত্ববিদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক বদরুল ইমাম বলেন, যেহেতু আমাদের এ মুহূর্তে গ্যাসের সংকট, সেহেতু ভোলার গ্যাস আনা গেলে তা অনেক কাজে আসবে। উৎপাদিত গ্যাস দিনের পর দিন ফেলে রাখার কোনো মানেই হয় না। ভোলায় গ্যাস সিএনজি করে আনা গেলে সেটি হবে একটি ভালো সিদ্ধাস্ত।

প্রসঙ্গত, ঢাকা থেকে ভোলার দূরত্ব ১৯০ কিলোমিটার। সেখান থেকে শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্রের দূরত্ব আরও ২৫ কিলোমিটার। ১৯৯৫ সালে প্রথম গ্যাসের আবিষ্কার হয় এখানে। এখানকার উত্তোলন করা গ্যাস এখন ব্যবহার করা হয় দু’টি বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং ছোট পরিসরের কয়েকটি কারখানায়। যে কারণে এখানকার গ্যাস অব্যবহৃত  থেকে যাচ্ছে। এদিকে বিশ্ব জ্বালানি সংকটের কারণে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প কারখানাগুলো সংকটে পড়েছে। এমন অবস্থায় ভোলার গ্যাস পাওয়া গেলে সংকট কিছুটা কাটবে বলে উল্লেখ করে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান  বলেন, বছরের মাঝামাঝি থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত গ্যাস সংকটে আমাদের কারখানাগুলোতে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে শিল্পখাতে গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কিন্তু এটা যেহেতু বৈশ্বিক সংকট তাই একেবারে যাবে না। তবে ভোলার গ্যাস সামান্য আকারে আসলেও তা যেহেতু সবটাই শিল্পখাতে সরবরাহ করা হবে সেহেতু আমাদের উৎপাদন কাজ ত্বরান্বিত হবে বলেই আশা করছি।