• বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪ ||

  • চৈত্র ১৪ ১৪৩০

  • || ১৭ রমজান ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
১৯৭৫ সালের পর বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার ইতিহাস বিকৃত করা হয়েছে আওয়ামী লীগ পালিয়ে গেলে যুদ্ধটা করলো কে? প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর বঙ্গভবনে স্বাধীনতা দিবসের সংবর্ধনায় ভুটানের রাজার যোগদান বাংলাদেশ-ভুটান তিন সমঝোতা স্মারক সই ইফতার পার্টি না করে নিম্ন আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করুন সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী সমতাভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে বাংলাদেশ মিশনগুলোর ভূমিকা রাখার আহ্বান সমরাস্ত্র প্রদর্শনী উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী আগামীকাল ভয়াল ২৫ মার্চ, গণহত্যা দিবস উপজেলা নির্বাচনে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর জনগণের সঠিক প্রতিনিধিত্ব ছাড়া উন্নয়ন হয় না প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় আধুনিক কারিগরি ও প্রযুক্তি সন্নিবেশ করা হয়েছে : প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তি ব্যবহারে জলবায়ু সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো সম্ভব স্বাস্থ্যখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করতে চায় ডব্লিউএইচও পুতিনকে অভিনন্দন জানালেন শেখ হাসিনা এ বছর ফিতরার হার নির্ধারণ ২০৩২ সাল পর্যন্ত ইইউতে জিএসপি সুবিধা পেতে আয়ারল্যান্ডের সমর্থন চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে পাশে আছি: প্রধানমন্ত্রী জনসমর্থন থাকায় আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করা অসম্ভব

শরিয়তের দৃষ্টিতে সমকামিতার ভয়াবহতা ও শাস্তি

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১১ নভেম্বর ২০২১  

শরিয়তের দৃষ্টিতে সমকামিতা একটি মারাত্মক গুনাহের কাজ। যার ভয়াবহতা কুফরের পরই। হত্যার চাইতেও মারাত্মক। বিশ্বে সর্বপ্রথম হযরত লূত্ব (আঃ) এর সম্প্রদায় এ কাজে লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে এমন শাস্তি প্রদান করেন যা ইতিপূর্বে কাউকে প্রদান করেননি (যার আলোচনা আল্লাহ তায়ালা সুরা আরাফে করছেন)।

তিনি তাদেরকে সমূলে ধ্বংস করে দিয়েছেন। তাদের ঘরবাড়ি তাদের উপরই উল্টিয়ে দিয়ে ভূমিতে তলিয়ে দিয়েছেন। অতঃপর আকাশ থেকে পাথর বর্ষণ করেছেন। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থানটি মধ্যপ্রাচ্যের জর্দান ও ইসরাঈলের মধ্যখানে অবস্থিত। আরবীতে স্থানটিকে ‘বাহরুল মাইয়িত’ ইংরেজিতে (Dead Sea) এবং বাংলাতে ‘মৃতসাগর’ বলা হয়। এই স্থানটি এমন অভিশাপে পরিণত হয় যেখানে আজ পর্যন্ত কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। কোন প্রাণী সেখানে বেঁচে থাকতে পারে না।

সমকামীরা অভিশপ্ত

সমকামিতা যেনার চেয়েও মারাত্মক একটি কবীরা গুনাহ। এ কাজে যারা জড়িত তারা সবাই অভিশপ্ত। এ ব্যাপারে প্রিয় নবীজি (সা.) এর ঘোষণা হলোঃ

عن عمرِو بنِ أبي عمرٍو رضى الله عنه قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « ملعونٌ من عمِلَ عمَلَ قومِ لوطٍ ». أخرجه الترمذى (رقم 1481).

অর্থঃ হযরত আমর বিন আবু আমর –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কওমে লূতের কাজ (সমকামিতা) করেছে, সে অভিশপ্ত।” (সুনানে তিরমিযী (১৪৮১)

হাদীসে বর্ণিত হয়েছে।

عن أبى هريرة رضى الله عنه ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « ملعون من أتى امرأة فى دبرها ». أخرجه أبو داود (2/249 ، رقم 2162) ، وأحمد (2/444 ، رقم 9731).

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে কোনো স্ত্রীর পায়ুপথে যৌনকর্ম করেছে, সে অভিশপ্ত।” (সুনানে আবু দাউদ :২১৬২ ও মুসনদে আহমদ : ৯৭৩১)।

আরো এরশাদ করেন।

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « لعن الله من والى غير مواليه لعن الله من غيَّر تخوم الأرض لعن الله من كَمَّهَ أعمى عن الطريق ولعن الله من لعن والديه ولعن الله من ذبح لغير الله ولعن الله من وقع على بهيمة ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ولعن الله من عمل عمل قوم لوط ». أخرجه أحمد (1/108 ، رقم 855) ، والحاكم (4/396 ، رقم 8052) ، وقال : صحيح الإسناد . والبيهقى فى الكبرى (8/231 ، رقم 16794) .

অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস -رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যে তার নিজের অভিভাবককে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করলো, আল্লাহ তাকে অভিশপ্ত করুন। আর যে জমিনের কোনো নিদর্শন (পাহাড়/টিলা ও নদী/খাল ইত্যাদি) নষ্ট করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো অন্ধকে পথ দেখালো না, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে তার পিতা-মাতাকে অভিশাপ দিলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে কোনো পশুর সঙ্গে সঙ্গম করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন। আর যে লূত সম্প্রদায়ের কাজ (সমকামিতা) করলো, তাকেও আল্লাহ অভিশপ্ত করুন (শেষের এ বাক্যটি তিনি তিনবার উচ্চারণ করেছেন)।” (মুসনদে আহমদ : ৮৫৫, বাইহাকীর সুনানে কোবরা : ১৬৭৯৪ ও মুস্তাদরকে হাকেম : ৮০৫২)।

সমকামিতার ভয়াবহ শাস্তি

সমকামিতার শাস্তি হত্যা। কওমে লূতের উপর পাথর বৃষ্টি বর্ষণ ও তাদের আবাসকে ধ্বংস পূর্বক মহান রবের তাদেরকে হত্যা করা থেকে প্রমাণিত হয়, সমকামিতার শাস্তি মৃত্যুদন্ড। আমাদের নবীও (সা.) বিভিন্ন হাদিসে এ কাজের শাস্তি মৃত্যুদন্ড বলে উল্লেখ করেছেন। নবীজি (সা.) এর আমলে কোনো সমকামী ধরা না পড়লেও হযরত আবু বকর ও হযরত আবদুল্লাহ বিন জুবাইরের শাসনামলে তাঁরা সমকামীকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন মর্মে তথ্য পাওয়া যায়। বিস্তারিত জানতে আল্লামা আজুরীর ‘যম্মুল লিওয়াত’ শীর্ষক বইটি পড়া যায়। এবার এ প্রসঙ্গে বর্ণিত কয়েকটি হাদিস দেখি।

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « من وجدْتموهُ يعملُ عملَ قومِ لوطٍ فاقتُلوا الفاعلَ والمفعولَ بهِ ». أخرجه أبو داود (4/158 ، رقم 4462) ، والترمذى (4/57 ، رقم 1456) ، وابن ماجه (2/856 ، رقم 2561) ، والحاكم (4/395 ، رقم 8047) وقال : صحيح الإسناد.

অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে ফায়েল ও মফউলে বিহী (যে করেছে ও যার সঙ্গে করা হয়েছে) উভয়জন হত্যা করবে।” (সুনানে আবু দাউদ ৪৪৬২)

عن أبى هريرة رضى الله عنه ، أن النبى صلى الله عليه وسلم قال : « من عمل عمل قوم لوط فارجموا الفاعل والمفعول به ». أخرجه الحاكم (4/395 ، رقم 8048) .

অর্থঃ হযরত আবু হুরাইরা –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে ফায়েল ও মফউলে বিহী (যে করেছে ও যার সঙ্গে করা হয়েছে) উভয়জন হত্যা করবে।” (মুস্তাদরকে হাকেম : ৮০৪৮)।

মাসয়ালাঃ উভয়কে হত্যা করার এ বিধান তখনই প্রযোজ্য, যখন উভয়ে স্বেচ্ছায় এ কাজে লিপ্ত হয়। যদি কাউকে জোরপূর্বক বলৎকার করা হয়, তাহলে ভিকটিমের উপর মৃত্যুদন্ড কার্যকর হবে না।

এরশাদ হচ্ছে

عن ابنِ عَبَّاسٍ رضى الله عنه ، قال : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيهِ وسَلَّم : « اقتلوا الفاعل والمفعول به فى عمل قوم لوط والبهيمة والواقع على البهيمة ، ومن وقع على ذات محرم فاقتلوه ». أخرجه أحمد (1/300 ، رقم 2727) ، وعبد الرزاق (7/364 ، رقم 13492) ، والطبرانى (11/226 ، رقم 11569) ، والديلمى (1/109 ، رقم 366) .

অর্থঃ হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কাউকে যদি কওমে লূতের কাজ করতে দেখ, তাহলে উভয়জন হত্যা করবে। অনুরূপ কেউ যদি কোনো পশুর সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হয়, তাহলে পশুটিসহ তাকে হত্যা করবে। অনুরূপ কেউ তার মাহরিমের সঙ্গে যৌনতায় লিপ্ত হলে তাকেও হত্যা করবে।” [মুসনদে আহমদ (২৭২৭), মুছন্নফে আবদুর রজ্জাক (১৩৪৯২), মুজমে তবরানী কবীর (১১৫৬৯) ও দাইলামী (৩৬৬)]।

সমকামিতা রোধে করণীয়

ইসলামি শরিয়ত স্বামী ও স্ত্রী ছাড়া অন্য লোকদের একই কাপড়ের (কম্বল-কাঁথা ও শাল-ছাদর ইত্যাদি) নিচে থাকতে কঠোর ভাবে নিষেধ এসেছে বিভিন্ন হাদিস শরীফে। নিচে তা থেকে কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করা হলোঃ

عن عبد الرحمن بن أبي سعيد الخدري ، عن أبيه أبي سعيد ، أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال : « لاَ يَتظُرُ الرجُلُ إِلَى عَوْرَةِ الرَّجُلِ ، وَلاَ اَلْمَرْأَةُ إِلَى عَورَةِ الْمَرْأَةِ ، وَلاَ يُفْضِي الرجُلُ إِلَى الرُّجُلِ فِي ثَوْب وَاحِد ، ولاَ تُفْضِي اَلْمَرْأَةُ إِلَى ألْمَرْأَةِ فِي الثوْبِ الْوَاحِد». أخرجه مسلم (1/266 ، رقم 338) ، وأبو داود (4/41 ، رقم 4018) ، والترمذى (5/109 ، رقم 2793) وقال : حسن غريب صحيح .

অর্থঃ হযরত আবু সাঈদ –رضي الله عنه- থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “পুরুষ পুরুষের সতর ও নারী নারীর সতরের দিকে তাকাবে না। আর পুরুষ পুরুষের  সঙ্গে একই কাপড়ে নিচে থাকবে না। অনুরুপ নারীও নারীর সঙ্গে একই কাপড়ের নিচে থাকবে না।” (ছহীহ মুসলিম : ৩৩৮, সুনানে আবু দাউদ : ৪০১৮) ও সুনানে তিরমিযী : ২৭৯৩)।

সমকামিতার মারাত্মক ক্ষতি ও তার ভয়াবহতা

সমকামিতার মধ্যে এতো বেশি ক্ষতি ও অপকার নিহিত রয়েছে যার সঠিক গণনা সত্যিই দুষ্কর। যা ব্যক্তি ও সমষ্টি পর্যায়ের এবং দুনিয়া ও আখিরাত সম্পর্কীয়। যার কিয়দংশ নিম্নরূপ:

ধর্মীয় ক্ষতিসমূহ

প্রথমতঃ তা কবীরা গুনাহসমূহের একটি। তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে অনেক অনেক নেক আমল থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। এমনকি তা যে কারোর তাওহীদ বিনষ্টে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আর তা এভাবে যে, এ নেশায় পড়ে শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের সঙ্গে ধীরে ধীরে ভালোবাসা জন্ম নেয়। আর তা একদা তাকে শির্ক পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়। কখনো ব্যাপারটি এমন পর্যায়ে দাঁড়ায় যে, সে ধীরে ধীরে অশ্লীলতাকে ভালোবেসে ফেলে এবং সাধুতাকে ঘৃণা করে। তখন সে হালাল মনে করেই সহজভাবে উক্ত কর্মতৎপরতা চালিয়ে যায়। তখন সে কাফির ও মুরতাদ হতে বাধ্য হয়। এ কারণেই বাস্তবে দেখা যায় যে, যে যত বেশি শিরকের দিকে ধাবিত সে তত বেশি এ কাজে লিপ্ত। তাই লূত সম্প্রদায়ের মুশরিকরাই এ কাজে সর্বপ্রথম লিপ্ত হয়।

চারিত্রিক ক্ষতিসমূহ 

প্রথমতঃ সমকামই হচ্ছে চারিত্রিক এক অধঃপতন। স্বাভাবিকতা বিরুদ্ধ। এরই কারণে লজ্জা কমে যায়, মুখ হয় অশ্লীল এবং অন্তর হয় কঠিন, অন্যদের প্রতি দয়া-মায়া সম্পূর্ণরূপে নিঃশেষ হয়ে একেবারেই তা এককেন্দ্রিক হয়ে যায়, পুরুষত্ব ও মানবতা বিলুপ্ত হয়, সাহসিকতা, সম্মান ও আত্মমর্যাদাবোধ বিনষ্ট হয়। নির্যাতন ও অঘটন ঘটাতে তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সাহসি করে তোলে। উচ্চ মানসিকতা বিনষ্ট করে দেয় এবং তা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে বেকুব বানিয়ে তোলে। তার ওপর থেকে মানুষের আস্থা কমে যায়। তার দিকে মানুষ খেয়ানতের সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায়। উক্ত ব্যক্তি ধর্মীয় জ্ঞান থেকে বঞ্চিত হয় এবং উত্তরোত্তর সার্বিক উন্নতি থেকে ক্রমান্বয়ে পিছে পড়ে যায়।

মানসিক ক্ষতিসমূহ

অস্থিরতা ও ভয়-ভীতি অধিক হারে বেড়ে যায়। মানসিক বিশৃঙ্খলতা ও মনের অশান্তি তার নিকট প্রকট হয়ে দেখা দেয়। এ জাতীয় লোকদের মাঝে স্বকীয়তা ও ব্যক্তিত্বহীনতা ধীরে ধীরে জন্ম নেয় এবং তাদের মেযাজ পরিবর্তন হয়ে যায়। যে কোনো কাজে এরা স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। এদের নিজেদের মাঝে ক্রমান্বয়ে পরাজয় ভাব জন্ম নেয়। নিজের ওপর তখন এরা কোনো ব্যাপারেই আস্থাশীল হতে পারে না। এ জাতীয় লোকদের মাঝে হরেক রকমের ওয়াসওয়াসা ও অমূলকচিন্তা জন্ম নেয়। এমনকি ধীরে ধীরে সে পাগলের রূপ ধারণ করে। এদের মধ্যে ধীরে ধীরে মানসিক টানাপড়েন ও বেপরোয়াভাব জন্ম নেয়। তেমনিভাবে এদের মধ্যে বিরক্তি ভাব, নিরাশা, কুলক্ষুণে ভাব, আহাম্মকি জযবাও জন্ম নেয়। এ ছাড়াও উক্ত অবৈধ সম্পর্ক অনেক ধরনের মানসিক রোগের জন্ম দেয় যা বর্ণনাতীত। যার দরুন তাদের জীবনের স্বাদ একেবারেই নিঃশেষ হয়ে যায়।

শারীরিক ক্ষতিসমূহ

শারীরিক ক্ষতির কথা তো বলাই বাহুল্য। কারণ, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান কিছু দিন পর পরই এ সংক্রান্ত নতুন নতুন রোগ আবিষ্কার করে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ জাতীয় কোনো একটি রোগের ঔষুধ খুঁজতে খুঁজতেই দেখা যায় নতুন আরেকটা রোগ আবিষ্কৃত হয়ে গেছে। এই তো হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বাণীর সত্যিকার ফলাফল।

আব্দুল্লাহ ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِيْ قَوْمٍ قَطُّ ، حَتَّى يُعْلِنُوْا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيْهِمُ الطَّاعُوْنُ وَالْأَوْجَاعُ الَّتِيْ لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِيْ أسْلاَفِهِمْ الَّذِيْنَ مَضَوْا»

“কোনো সম্প্রদায়ের মাঝে ব্যভিচার তথা অশ্লীলতা প্রকাশ্যে ছড়িয়ে পড়লে তাদের মধ্যে অবশ্যই মহামারি ও বহু প্রকারের রোগ-ব্যাধি ছড়িয়ে পড়বে যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে ছিলো না”।

সমকামিতার চিকিৎসা

উক্ত রোগ তথা সমকামের নেশা থেকে বাঁচার উপায় অবশ্যই রয়েছে। তবে তা এ জাতীয় রোগীর পক্ষ থেকে সাদরে গ্রহণ করার অপেক্ষায় রয়েছে। আর তা হচ্ছে দু’ প্রকার:

১. রোগাক্রান্ত হওয়ার আগের চিকিৎসা 

দৃষ্টিশক্তি হিফাযতের মাধ্যমে: কারণ, দৃষ্টিই হচ্ছে শয়তানের বিষাক্ত একটি তীর যা শুধু মানুষের আফসোসই বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং শ্মশ্রুবিহীন ছেলেদের প্রতি দৃষ্টিপাত করা থেকে একেবারেই বিরত থাকতে হবে। তা হলেই সমকামের প্রতি অন্তরে আর উৎসাহ জন্ম নিবে না। মহান আল্লাহ তায়ালার এরশাদ

﴿قُل لِّلۡمُؤۡمِنِينَ يَغُضُّواْ مِنۡ أَبۡصَٰرِهِمۡ وَيَحۡفَظُواْ فُرُوجَهُمۡۚ﴾ [النور: ٣٠]

“(হে রাসূল!) আপনি মুমিনদেরকে বলে দিন যে, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং নিজ লজ্জাস্থান হিফাযত করে।” [সূরা আন-নূর, আয়াত: ৩০]  

অন্তর ও দৃষ্টির মাঝে এমন এক সুগভীর সম্পর্ক রয়েছে যে, একটি খারাপ হলে অন্যটি খারাপ হতে বাধ্য। তেমনিভাবে একটি সুস্থ থাকলে অন্যটিও সুস্থ থাকতে বাধ্য। সুতরাং যে ব্যক্তি দৃষ্টিকে নিয়ন্ত্রণ করবে তার অন্তরও তারই নিয়ন্ত্রণে থাকবে।

২. রোগাক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা

১. প্রথমে আল্লাহ তায়ালার নিকট উক্ত গুনাহ থেকে খাঁটি তাওবা করে নিন। কারণ, কেউ আল্লাহ তায়ালার নিকট একমাত্র তাঁরই সন্তুষ্টি পাওয়ার জন্য অথবা তাঁরই কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য তাওবা করে নিলে আল্লাহ তায়ালা অবশ্যই তা কবুল করবেন এবং তাকে সেভাবেই চলার তাওফিক দিবেন। হযরত উবাদা বিন আব্দুল্লাহ তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেনঃ

التَّائِبُ مِنَ الذَّنْبِ، كَمَنْ لَا ذَنْبَ لَهُ

গোনাহ থেকে তওবাকারী এমন,যেন সে গোনাহ করেইনি। [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-৪২৫০]

হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন,

فَإِنَّ العَبْدَ إِذَا اعْتَرَفَ ثُمَّ تَابَ، تَابَ اللَّهُ عَلَيْهِ

বান্দা গোনাহ স্বীকার করে মাফ চাইলে আল্লাহ পাক তা কবুল করেন। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৪১৪১]

২. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি দৃঢ় একনিষ্ঠ হোন। আর এটিই হচ্ছে এর একান্ত মহৌষধ।

৩. ধৈর্য ধরুন। কারণ, কোনো অভ্যাসগত কঠিন পাপ ছাড়ার জন্য ধৈর্যের একান্তই প্রয়োজন। সুতরাং ধৈর্য ধারণের বার বার কসরত করতে হবে। এমনিভাবেই ধীরে ধীরে এক সময় ধৈর্য ধারণ অভ্যাসে পরিণত হবে।

আবু সাঈদ খুদরী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«وَمَنْ يَّتَصَبَّرْ يُصَبِّرْهُ اللهُ ، وَمَا أُعْطِيَ أَحَدٌ عَطَاءً خَيْراً وَأَوْسَعَ مِنَ الصَّبْرِ»

“যে ব্যক্তি ধৈর্য ধারণ করার চেষ্টা করবে আল্লাহ তা‘আলা অবশ্যই তাকে ধৈর্য ধারণ করার শক্তি দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা কাউকে এমন কিছু দেন নি যা ধৈর্যের চাইতেও উত্তম এবং বিস্তর কল্যাণকর”।

৪. মনের বিরোধিতা করতে শিখুন। যে ব্যক্তি আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য মনের বিরোধিতা করবে আল্লাহ তায়ালা তাকে অবশ্যই সঠিক পথে পরিচালিত করবেন।

৫. আল্লাহ তায়ালা যে সর্বদা আপনার কর্মকাণ্ডের প্রতি দৃষ্টিপাত করেই আছেন তা অনুভব করতে শিখুন।

৬. জামাতে নামাজ পড়ার প্রতি বিশেষভাবে যত্নবান হোন।

আল্লাহ তায়ালা বলেন,

﴿إِنَّ ٱلصَّلَوٰةَ تَنۡهَىٰ عَنِ ٱلۡفَحۡشَآءِ وَٱلۡمُنكَرِۗ﴾ [العنكبوت: ٤٥]

“নিশ্চয় সালাত অশ্লীল ও মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে”। [সূরা আল-‘আনকাবূত, আয়াত: ৪৫]

৭. বেশি বেশি নফল সাওম পালন করতে চেষ্টা করুন। কারণ, সাওমের মধ্যে বিশেষ ফযীলতের পাশাপাশি উত্তেজনা প্রশমনেরও এক বাস্তবমুখী ব্যবস্থা রয়েছে। তেমনিভাবে সাওম আল্লাহভীরুতা শিক্ষা দেওয়ার জন্যও এক বিশেষ সহযোগী।

আব্দুল্লাহ ইবন মাসঊদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ! مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمُ الْبَاءَةَ فَلْيَتَزَوَّجْ، فَإِنَّهُ أَغَضُّ لِلْبَصَرِ، وَأَحْصَنُ لِلْفَرْجِ ، وَمَنْ لَمْ يَسْتَطِعْ فَعَلَيْهِ بِالصَّوْمِ ، فَإِنَّهُ لَهُ وِجَاءٌ»

“হে যুবকরা! তোমাদের কেউ স্ত্রী সঙ্গমে সক্ষম হলে সে যেন দ্রুত বিবাহ করে নেয়। কারণ, বিবাহ তার চোখকে নিম্নগামী করবে এবং তার লজ্জাস্থানকে হিফাযত করবে। আর যে বিবাহ করতে সক্ষম নয় সে যেন রোযা রাখে। কারণ, সাওম তার জন্য একান্ত যৌন উত্তেজনা প্রতিরোধক”।

৮. বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করুন। কারণ, কোরআন হচ্ছে সর্ব রোগের চিকিৎসা।

৯. বেশি বেশি আল্লাহর যিকির করুন। কারণ, আল্লাহ তায়ালার যিকিরে অন্তরের বিরাট একটা প্রশান্তি রয়েছে। 

১০. আল্লাহ তায়ালার সব বিধি-বিধানের প্রতি যত্নবান হোন।

১১. অতি তাড়াতাড়ি বিবাহ কার্য সম্পাদন করুন।

১৩. শ্মশ্রুবিহীন সে প্রিয় পুরুষটি থেকে খুব দূরে থাকুন। 

১৪. তেমনিভাবে উত্তেজনাকর সব বস্তু থেকেও দূরে থাকুন যেগুলো আপনার লুক্কায়িত কামনা-বাসনাকে দ্রুত জাগ্রত করে। অতএব নারী ও শ্মশ্রুবিহীন পুরুষদের সঙ্গে মেলামেশা করবেন না। বিশ্রী ছবি ও অশ্লীল গান শুনবেন না।

১৫. লাভজনক কাজে ব্যস্ত থাকুন।

১৬. সর্বদা শয়তানের ওয়াসওয়াসা প্রতিরোধ করতে চেষ্টা করুন। কোনো কুমন্ত্রণাকে এতটুকুর জন্যও অন্তরে স্থান দিবেন না।

১৭. নিজের মধ্যে প্রচুর লজ্জাবোধ জন্ম দেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ, লজ্জাবোধ একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। যা কল্যাণই কল্যাণ এবং তা ঈমানেরও একটি বিশেষ অঙ্গ বটে। লজ্জাবোধ মানুষকে ভালো কাজ করতে উৎসাহ যোগায় এবং খারাপ কাজ থেকে দূরে রাখে।

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সমকামিতার মত ভয়াবহ অপরাধ থেকে সবসময় দূরে থাকার তৌফিক দান করুন। আমিন।