• বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১১ ১৪৩১

  • || ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা

শিরকের গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করেন না

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১৫ নভেম্বর ২০২১  

পবিত্র কোরআন এবং সুন্নাহের আলোকে নিচে শিরকের কয়েকটি কারণ উপস্থাপন করছি, যেন সবাই এগুলো জেনে শিরক থেকে বেঁচে থাকতে পারে-

আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করা

মন্দ ধারণাই শিরকের নেপথ্য কারণ। যে কোনো শিরকের পেছনে আল্লাহ সম্পর্কে কোনো না কোনো দোষ-ত্রুটি ও মন্দ ধারণা কাজ করে। ভালোবাসার বিপরীতে মন্দ ধারণা পোষণ করার কারণেই মানুষ আল্লাহকে ছেড়ে অন্যের ইবাদত করে। গায়রুল্লাহকে তার জন্য আল্লাহর চেয়ে অধিক দয়ালু ও কল্যানকামী মনে করে।

আল্লাহ সম্পর্কে যারা মন্দ ধারণা পোষণ করে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, এবং মুনাফিক পুরুষ ও মুনাফিক নারী, মুশরিক পুরুষ ও মুশরিক নারী যারা আল্লাহ সম্পর্কে মন্দ ধারণা পোষণ করে আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি দেবেন। অমঙ্গল চক্র তাদের জন্য। আল্লাহ তাদের উপর রাগান্বিত হয়েছেন এবং তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন এবং তাদের জন্য জাহান্নাম প্রস্তুত রেখেছেন, তা কত নিকৃষ্ট আবাস। (সূরা ফাতহ ৪৮: ৬)

মুশরিকদের এ মন্দ ধারণার বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিবাদ জানিয়ে তাওহীদের ইমাম ইব্রাহীম (আ.) তার সূর্য্য, চন্দ্র, নক্ষত্র ও মূর্তিপূজারী জাতির সামনে যে বক্তব্য দিয়েছিলেন, পবিত্র কুরআনে তা এভাবে উদ্ধৃত হয়েছে, তোমরা কিসের পুজা করছ? তোমরা কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ মিথ্যা অলীক মা’বুদগুলোকে চাও? তাহলে বিশ্ব জাহানের রব সমন্ধে তোমাদের কি ধারণা? (সূরা- সাফফাত ৩৭: ৮৫-৮৭)

এ কথার মর্ম হলো, তোমরা রাব্বুল আলামীনের মধ্যে কি ধরণের দোষ-ত্রুটি ও মন্দের ধারণা পোষণ করছ? যার ফলে তাকে পরিত্যাগ করেছ এবং তার পরিবর্তে এতসব মা’বুদ ও দেবতা বানিয়ে নিয়েছ? আল্লাহর সত্ত্বা, তার গুণাবলী ও কার্যাবলী সম্পর্কে কি ধরণের খারাপ মনোবৃত্তি পোষণ করছ? কি ধরণের দোষ-ত্রুটি তার মধ্যে আছে বলে ধারণা করছ? কি ধরণের অক্ষমতা, অপারগতা, করুণার অভাব তার মধ্যে আছে বলে তোমরা মনে করছ? যার ফলে সরাসরি তার ইবাদত না করে ভায়া ও মাধ্যমের পূজা করছ এবং তাদের কাছেই কল্যাণের প্রত্যাশা করছ? এবং অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য তাদের শরণাপন্ন হচ্ছ? ঊপরন্তু মুশরিকরা মনে করে যে, আল্লাহ তাদেরকে দয়া করবেন না। এজন্যই তারা মাধ্যম ও ভায়া মা’বুদের ইবাদত করে। আল্লাহর নিকট এসব ভায়া মা’বুদের প্রভাব-প্রতিপত্তি আছে বলে বিশ্বাস করে। আল্লাহ তাদেরকে ভালো না বাসলেও ভায়া মা’বুদরা সুপারিশ করলে সে সুপারিশ আল্লাহ বাতিল করতে পারেন না।

আল্লাহ সম্পর্কে অজ্ঞতা ও মূর্খতা

শিরকের কারণ সমূহের মধ্যে এটি হল জননী বা মাতৃ কারণ। আল্লাহ তাআলা বলেন, বলুন, হে মূর্খরা! তোমরা কি আমাকে আল্লাহ ব্যতীত অন্যের ইবাদত করতে আদেশ করছো? (সূরা যুমার-৩৯: ৬৪)

'আল্লাহ এবং তার একত্ব সম্পর্কে মূর্খতা সবচেয়ে বড় মূর্খতা। আর আল্লাহর একত্ব সম্পর্কে জ্ঞান হচ্ছে সবচেয়ে বড় জ্ঞান। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেনঃ জেনে রেখো, আল্লাহ ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।' (সূরা মুহাম্মদ-৪৭: ১৯)

সুতরাং আসুন আমরা এসব কারণ পরিত্যাগ করে ও আল্লাহ সুব’হানাহু ওয়া তা’আলার সুন্দর এই দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করে আমাদেরকে এই ধ্বংসাত্মক গুনাহ বা অপরাধ থেকে বাঁচাই।

সৃষ্টিকে স্রষ্টার সঙ্গে তুলনা করা

আল্লাহর সঙ্গে শিরকের কারণ হচ্ছে, সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমতুল্য করা। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, 'তার সমতুল্য কোন কিছুই নেই এবং তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।' (সূরা শুরা ৮২:১১) 'তার সমতুল্য কেউই নেই।' (সূরা- ইখলাস : ৪)

অথচ মানুষ দোয়া, ভয়, আশা-ভরসা, সিজদা, মানত, কোরবানী এসব ইবাদতগুলো এককভাবে আল্লাহর জন্য নিবেদন না করে সৃষ্টিকেও এসব ইবাদতে শরীক করছে। পীর, ফকির, মাজার, মুর্তি, মৃত অলী-আউলিয়াদের জন্য তারা এসব নিবেদন করার মাধ্যমে সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমতুল্য করছে।

আল্লাহ আমাদের একমাত্র রব। অথচ মানুষ নবী, ফেরেশতা, জ্বীন,ওলী- আউলিয়া, পোপ-ফাদার, পুরোহিত, পীরবাবা, খাজাবাবা, দয়াল বাবা, কবর-মাজারস্থ মৃত ব্যক্তি, মুর্তি-দেবতার কাছে মানুষের লাভ-ক্ষতি, দান-বঞ্চনার ক্ষমতা আছে বলে মনে করে একমাত্র রব আল্লাহর সমতুল্য করছে। আল্লাহ একমাত্র আইন-বিধান দাতা, সার্বভৌমত্বেও মালিক অথচ মানুষ মানুষের জন্য আইন-বিধান দিয়ে সার্বভৌমত্বেও মালিক সাজছে। এমনি আরো অসংখ্যভাবে মানুষ সৃষ্টিকে স্রষ্টার সমতুল্য করছে।

আল্লাহকে যথাযথ মর্যাদা না দেয়া

শিরক মানে আল্লাহর সমস্ত মর্যাদাকে অস্বীকার করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, 'তারা আল্লাহর যথোচিত সম্মান করে না। কেয়ামতের দিন সমগ্র পৃথিবী থাকবে তার হাতের মুঠোয় এবং আকাশমন্ডলী ভাঁজ করা থাকবে তার ডান হাতে। পবিত্র মহান তিনি। তারা যাকে শরীক করে তিনি তার উর্দ্ধে।' (সূরা যুমার ৩৯ঃ৬৭)

আয়াতের 'হাক্কা ক্বাদরিহী' অর্থ যথাযথ মর্যাদা, যেরূপ মর্যাদা দিতে হয় সেরূপ মর্যাদা। পরিপূর্ণ, অবিভাজ্য, অংশীদারমুক্ত মর্যাদা। সে মর্যাদার অপর নাম তাওহীদ, একত্ব, পরিপূর্ণ আত্মসমর্পন। যে শিরক করল সে তার মর্যাদা খন্ডিত করলো, তার মর্যাদার একাংশ অন্যকে দিল এবং আল্লাহকে দিল আংশিক মর্যাদা। আল্লাহকে যেরূপ মর্যাদা দেয়া উচিত সেরূপ মর্যাদা না দেয়ার কারণেই অনেকে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করে।

শিরক এবং কুফরের মধ্য পার্থক্য

শিরক ও কুফরের মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য নেই। শুধু সংজ্ঞা গত পার্থক্য রয়েছে। কুফর হচ্ছে আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করা। আধুনিক যুগে এদেরকে বলে নাস্তিক। যিনি আল্লাহর অস্তিত্বকে অস্বীকার করেন তাকে কাফির বলা হয়। আর শিরক হচ্ছে আল্লাহর সঙ্গে কাউকে অংশীদার করা। কাউকে তার সমকক্ষ বলে সাব্যস্ত করা।

যারা শিরক করে তাদের বলা হয় মুশরিক। শিরক প্রকারান্তে কুফর। কোরআনের কয়েকটি আয়াতে পেশ করা হয়েছে যে রাসূল (সা.) এর সময়ের লোকেরা আল্লাহর অস্তিত্বকে তো অস্বীকার করতই না বরং তারা আল্লাহকে সৃষ্টি কর্তা, রিযিক দাতা, মালিক, জীবন-মৃত্যুর মালিক হিসেবে বিশ্বাস করতো।

কোরআনের বিভিন্ন আয়াতের মাধ্যমে জানা যায় যে, তারা বিপদ ও সঙ্কটে পতিত হলে আল্লাহকেই ডাকত এবং শুধু তার কাছেই ধরনা দিত। যেমন – মানুষকে যখন কোন দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন তাদের রবের দিকে ঝুকে পড়ে শুধু তাকেই ডাকে। অতঃপর যিনি তার করুণা আস্বাদান করান তখন তাদের একটি দল তাদের রবের সাথে শিরক করে। (সূরা রুম ৩৩)।

আল্লাহকে স্বীকার করা ও বিপদে পড়লে শুধুমাত্র আল্লাহকে ডাকা ও তার কাছে ধরনা দেওয়া সত্ত্বেও কোরআন মাজীদ তাদেরকে কাফের হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আবার কোরআনে যাদেরকে কাফের বলা হয়েছে তাকেরকেই আবার মুশরিক বলা হয়েছে। এ ধরনের আয়াত এখানে উল্লেখ করা হল – 'আহলে কিতাব ও মুশরিক কাফেররা পছন্দ করেন না যে তোমাদের রবের পক্ষ থেকে তোমাদের উপর কোন কল্যাণ অবতীর্ণ হোক।' (সূরা বাকারা ১০৫)।

শিরক ও কুফর এবং মুশরিক ও কাফেরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তারা অনন্তকাল জাহান্নামের আগুনে জ্বলবে।