• শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৭ ১৪৩১

  • || ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের

অধিক ইস্তিগফারের উপকারিতা

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৮ মে ২০২০  

আল্লাহর হুকুম পালন

পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের অধিক ইস্তিগফারের তাগিদ দিয়েছেন। কারণ আমরা সবাই গুনাহগার। ইচ্ছায়, অনিচ্ছায়, প্রকাশ্যে, গোপনে আমরা প্রতিনিয়তই গুনাহ করে থাকি। কিন্তু আমাদের মধ্যে তারাই উত্তম যারা গুনাহ হয়ে গেলে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চেয়ে নিই। মহান আল্লাহর কাছে প্রতিনিয়ত ইস্তিগফার ছাড়া আমাদের মুক্তির কোনো পথ নেই। আমরা যতই গুনাহগার হই, তিনি তার চেয়ে কোটি গুণ ক্ষমাশীল। তাই পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৯৯)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৩)

উপরোক্ত আয়াতগুলোতে মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হুকুম করছেন, যে তোমরা (ইস্তিগফার করো) ক্ষমা চাও। অতএব ইস্তিগফারের প্রথম উপকারিতা হলো এর মাধ্যমে মহান আল্লাহর হুকুমের তামিল হয়।

 

গুনাহ মাফ হয়ে যায়

আমরা অনেকেই ধারণা করি যে আমরা এত বেশি পাপ করেছি আল্লাহ কি আমাদের ক্ষমা করবেন? এই চিন্তা থেকে আমরা আরো বেশি গুনাহের দিকে ধাবিত হতে থাকি। অথচ মহান আল্লাহ ঘোষণা দিয়েছেন, কেউ কোনো গুনাহ হয়ে গেলে যদি তাঁর কাছে ক্ষমা চান তিনি তাকে ক্ষমা করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর কেউ কোনো মন্দ কাজ করে অথবা নিজের প্রতি জুলুম করে পরে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহকে সে ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু পাবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১০)

 

বিপদ দূর হয়

মহান আল্লাহ মাঝে মাঝে বান্দাকে তাদের পাপের শাস্তিস্বরূপ বিভিন্ন ধরনের বিপদাপদ ও আজাব দিয়ে থাকেন। কিন্তু তারা যখন ইস্তিগফারে লিপ্ত হয়ে যায়, তখন তিনি আজাব উঠিয়ে নেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং আল্লাহ এমনও নন যে, তারা ক্ষমা প্রার্থনা করবে (্ইস্তিগফার করবে) অথচ তিনি তাদেরকে শাস্তি দেবেন।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৩৩)। অতএব কোনো ধরনের বিপদাপদ ও মহামারি দেখা দিলে মুমিনের প্রধান কাজ হলো বেশি বেশি ইস্তিগফার করা।

 

দুশ্চিন্তা দূর হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি নিজের জন্য ‘ইস্তিগফার’ (ক্ষমা প্রার্থনা) আবশ্যক করে নেবে, আল্লাহ তাকে সব দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দেবেন, সব সংকীর্ণতা থেকে উদ্ধার করবেন এবং তাকে এমনভাবে জীবিকার ব্যবস্থা করবেন যা তার চিন্তার বাইরে।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৮১৯)

 

রিজিকে বরকত হয়

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, সৎকর্ম ছাড়া অন্য কিছু আয়ুষ্কাল বাড়াতে পারে না এবং দোয়া ছাড়া অন্য কিছুতে তাকদির রদ হয় না। মানুষ তার পাপকাজের দরুন তার প্রাপ্য রিজিক থেকে বঞ্চিত হয়। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪০২২)।

অতএব রিজিকের বরকতের জন্য পাপমুক্ত থাকা আবশ্যক। পাপমুক্ত থাকার অন্যতম মাধ্যম হলো ইস্তিগফার। ইস্তিগফারের মাধ্যমে মহান আল্লাহ বান্দাকে পরিশুদ্ধ করেন। ফলে তার রিজিকের অভাবও দূর হয়ে যায়। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দেবেন। (মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদিস : ৭৬৭৭)

 

দুনিয়ার সফলতা

ইস্তিগফারের মাধ্যমে যেমন আখিরাতের মুক্তি পাওয়া যায়, তেমনি দুনিয়াতেও এর সুফল অপরিসীম। এর মাধ্যমে মহান আল্লাহ রিজিকে বরকত দেন। সম্মান বাড়িয়ে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা প্রার্থন করো, তারপর তার দিকেই ফিরে আসো। তিনি তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষাবেন। আর তিনি তোমাদেরকে আরো শক্তি দিয়ে তোমাদের শক্তি বৃদ্ধি করবেন এবং তোমরা অপরাধী হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (সুরা হুদ, আয়াত : ৫২)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসিরবিদরা লেখেন, ‘আল্লাহ তাআলা হুদ (আ.)-কে আদ জাতির কাছে নবীরূপে প্রেরণ করেছিলেন। দৈহিক আকার আকৃতিতে ও শারীরিক শক্তি-সামর্থ্যের দিক দিয়ে আদ জাতিকে মানব ইতিহাসে অনন্য বলে চিহ্নিত করা হয়। হুদ (আ.)-ও উক্ত জাতিরই অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। এ আয়াত ও পূর্ববর্তী আয়াত থেকে বোঝা যায় যে, তিনি তাদেরকে মৌলিকভাবে তিনটি দাওয়াত দিয়েছিলেন। এক. তাওহিদ বা একত্ববাদের আহ্বান এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোনো সত্তা বা শক্তিকে ইবাদত উপাসনা না করার আহ্বান। দুই. তিনি যে তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে এসেছেন, তাতে তিনি একজন খালেস কল্যাণকামী, এর জন্য তিনি তাদের কাছে কোনো পারিশ্রমিক চান না। তিন. নিজেদের অতীত জীবনে কুফরি শিরকি ইত্যাদি যত গুনাহ করেছ সেসব থেকে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং ভবিষ্যতের জন্য ওই সব গুনাহ থেকে তওবা কর। যদি তোমরা সত্যিকার তাওবা ও ইস্তিগফার করতে পারো তবে তার বদৌলতে আখিরাতের চিরস্থায়ী সাফল্য ও সুখময় জীবন তো লাভ করবেই। দুনিয়াতেও এর বহু উপকারিতা দেখতে পাবে। দুর্ভিক্ষ ও অনাবৃষ্টির পরিসমাপ্তি ঘটবে যথাসময়ে শক্তি-সামর্থ্য বর্ধিত হবে। এখানে ‘শক্তি’ শব্দটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। যার মধ্যে দৈহিক শক্তি এবং ধন, বল ও জনবল সবই অন্তর্ভুক্ত। (কুরতুবী; ইবন কাসীর)। অতএব বোঝা গেল, ইস্তিগফারের মাধ্যমে মানুষের যেমন আখিরাতের মুক্তি অর্জন হয়, তেমনি দুনিয়াতেও ধন সম্পদ এবং সন্তানাদির মধ্যে বরকত হয়ে থাকে।

 

আখিরাতের সফলতা

উপরোক্ত আয়াতে আমরা জেনেছি যে ইস্তিগফারের মাধ্যমে বান্দা দুনিয়ার সফলতা অর্জন করে। এবার জানব মহান আল্লাহ ইস্তিগফারকারীদের জন্য আখিরাতে কী পুরস্কার রেখেছেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন, আমি কি তোমাদেরকে এসব বস্তু থেকে উত্কৃষ্টতর কোনো কিছুর সংবাদ দেব? যারা তাকওয়া অবলম্বন করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতসমূহ, যার পাদদেশে নদী প্রবাহিত। সেখানে তারা স্থায়ী হবে। আর পবিত্র স্ত্রীগণ এবং আল্লাহর নিকট থেকে সন্তুষ্টি। আর আল্লাহ বান্দাদের সম্পর্কে সম্যক দ্রষ্টা। যারা বলে, হে আমাদের রব! নিশ্চয়ই আমরা ঈমান এনেছি; কাজেই আপনি আমাদের গুনাহসমূহ ক্ষমা করুন এবং আমাদেরকে আগুনের আজাব থেকে রক্ষা করুন। তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত, ব্যয়কারী এবং শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৫-১৭)। উপরোক্ত আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর জান্নাতি বান্দাদের কিছু বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হলো তারা শেষ রাতে ক্ষমাপ্রার্থী। অর্থাৎ যারা শেষ রাতে উঠে মহান আল্লাহর কাছে ইস্তিগফার করে।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, মহামহিম আল্লাহ তাআলা প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ অবশিষ্ট থাকাকালে পৃথিবীর নিকটবর্তী আসমানে অবতরণ করে ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছে এমন, যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দিব। কে আছে এমন যে, আমার নিকট চাইবে। আমি তাকে তা দিব। কে আছে এমন যে আমার নিকট ক্ষমা চাইবে? আমি তাকে ক্ষমা করব। (বুখারি, হাদিস : ১১৪৫)।

অতএব যারা রাতের শেষাংশে মহান আল্লাহর ডাকে সাড়া দেবে এবং ইস্তিগফার করবে, মহান আল্লাহ তাদের ক্ষমা করে দেবেন এবং জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।