• মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১০ ১৪৩১

  • || ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী

অর্থনীতির গতি ফেরাতে প্রণোদনা প্যাকেজে সর্বোচ্চ গুরুত্ব

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১৭ আগস্ট ২০২০  

মহামারি করোনায় বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে চেষ্টা করছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনার ক্ষতি কাটাতে ঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের সুষ্ঠু বাস্তবায়নে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন নির্দেশনা দিচ্ছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। করোনা ইস্যুতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে শতাধিক নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে প্রায় ৫১ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল। কমানো হয়েছে নগদ জমা সংরক্ষণের হার (সিআরআর), নীতি সুদহার রেপো ও ব্যাংক রেট। প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণসুবিধা নিয়ে যাতে ব্যবসা-বাণিজ্য যথাসময়ে শুরু করা যায়, সে জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তাদের ঋণ বিতরণের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া করোনার সময়জুড়ে অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখতে এক দিনের জন্যও ব্যাংক বন্ধ রাখা হয়নি। এদিকে করোনাকালীন অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে চলতি অর্থবছরের জন্য সম্প্রসারণমুখী মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বাজারে আরো সস্তায় অর্থের জোগান বাড়ানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে একের পর এক নীতি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরুও করেছে অর্থনীতিতে। স্থবির আমদানি ও রপ্তানিতে গতি আসছে। মহামারিতেও রেমিট্যান্স বেড়েছে অস্বাভাবিক গতিতে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও হয়েছে একের পর এক রেকর্ড। আর এখন বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়লেই অর্থনীতি পাবে কাঙ্ক্ষিত গতি।

এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রাণহীন অর্থনীতিতে গতি ফেরাতে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক। সরকার যখন প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তখনই সেটা বাস্তবায়নে নীতিমালা জারি করা হয়েছে। প্যাকেজ বাস্তবায়নে ব্যাংকগুলো যাতে কোনো ধরনের সংকটে না পড়ে সে জন্য বাজারে তারল্যপ্রবাহ নিশ্চিত করা হয়েছে।

করোনার অর্থনৈতিক ক্ষতি মোকাবেলায় গত ৫ এপ্রিল বিভিন্ন খাতে ৭২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর বিভিন্ন সময়ে এই প্যাকেজের পরিমাণ বাড়িয়ে এক লাখ টাকায় উন্নীত করা হয়। প্রধানমন্ত্রীঘোষিত এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের ৭৫ হাজার কোটি টাকার বেশি জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এ জন্য বেশ কয়েকটি পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন এবং বিদ্যমান তহবিলের আকার বাড়ানো হয়েছে। এর আওতায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৫১ হাজার কোটি টাকার মতো তহবিলের জোগান পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। এ ছাড়া সিআরআর দুই দফায় দেড় শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে আরো ১৯ হাজার কোটি টাকা নতুন করে ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা অর্জন করে ব্যাংকগুলো। বাজেট বরাদ্দ থেকে পাঁচ হাজার কোটি টাকার জোগান দেয় সরকার। প্যাকেজের বাকি ২৫ হাজার কোটি টাকা ব্যাংকগুলোর নিজস্ব উৎস থেকেই বিতরণ করতে হবে। এ ক্ষেত্রেও ব্যাংকের যাতে সংকট না হয়, সে জন্য তারল্য বাড়াতে তিন দফায় রেপো রেট কমিয়ে ৪.৭৫ শতাংশ করা হয়েছে। চালু করা হয়েছে এক বছর মেয়াদি বিশেষ রেপো। ১৭ বছর পর ব্যাংক রেট ১ শতাংশ কমিয়ে ৪ শতাংশ করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৯ সালের ব্যাংকের মুনাফা প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে বণ্টন ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত স্থগিত রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রীঘোষিত প্যাকেজের মধ্যে বড় শিল্প ও সেবা খাতে ৩০ হাজার কোটি টাকা এবং কটেজ মাইক্রো ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতে (সিএমএসএমই) ৩০ হাজার কোটি টাকার তহবিল অন্যতম। এই প্যাকেজে থেকে এখন পর্যন্ত বিতরণ হয়েছে ১৫ হাজার কোটি টাকা। এক হাজারের বেশি প্রতিষ্ঠান এই ঋণ পেয়েছে। অন্যদিকে সিএমএসএমই খাতে এই পর্যন্ত দুই হাজার কোটি টাকা বিতরণ করতে সক্ষম হয়েছে ব্যাংকগুলো। করোনার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি খাতের জন্যও স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। প্রথমে মৌসুমভিত্তিক ফুল ও ফল চাষ, মৎস্য, পোল্ট্রি, ডেইরি, প্রাণিসম্পদ খাতের উদ্যোক্তাদের জন্য পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করা হয়। এই তহবিল থেকে সর্বোচ্চ ৪ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছেন গ্রাহকরা। গত জুলাই পর্যন্ত এই তহবিল থেকে ৫৯০ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে। নিম্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের জন্যও স্বল্প সুদে ঋণ বিতরণের জন্য তিন হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ক্ষুদ্র ঋণদান প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে বিতরণ করা এই ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার ৯ শতাংশ। এই তহবিলের আওতায় এই পর্যন্ত ২৬৬ কোটি টাকা বিতরণ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাছের বলেন, প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার একটা উদ্দেশ্য আছে। সেটা যেন ব্যাহত না হয় সে জন্য সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এটা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের সব ব্যাংকে বারবার তাগাদা দেওয়া হচ্ছে। এতে ঋণ বিতরণে আগের চেয়ে বেশ গতিও এসেছে। আশা করছি, আগস্টের মধ্যেই প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ বিতরণ সম্ভব হবে।

এ ছাড়া করোনার কারণে প্রথমবারের মতো ঋণগ্রহীতাদের বড় ধরনের ছাড় দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১ জানুয়ারি থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করলেও কোনো ঋণগ্রহীতা খেলাপি হবেন না। একই সঙ্গে এপ্রিল ও মে মাসের ব্যাংকঋণের সব সুদ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রপ্তানির অর্থ দেশে আনা ও আমদানি দায় পরিশোধের মেয়াদ বাড়িয়ে দ্বিগুণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

১৮০ দিন বাড়ানো হয়েছে ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির আওতায় স্বল্পমেয়াদি সাপ্লায়ার্স ও বায়ার্স ক্রেডিটের মেয়াদ। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৯০ দিন। প্রি শিপমেন্ট রপ্তানি সহায়তার জন্য গঠন করা হয়েছে পাঁচ হাজার কোটি টাকার পুনরর্থায়ন তহবিল। এই তহবিল থেকে ৩ শতাংশ সুদে ঋণ পাচ্ছে ব্যাংকগুলো। আর ব্যাংকগুলোর গ্রাহক পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ সুদে ঋণ দেবে। রপ্তানি উন্নয়ন তহবিলের আকার পাঁচ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করা হয়েছে। এই তহবিলে সুদহার কমিয়ে ২ শতাংশে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তহবিলে যুক্ত হওয়া দেড় বিলিয়ন ডলার বা ১২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানের জন্য গঠিত ইউরো গ্রিন ট্রান্সফরমেশন ফান্ডের আকার ২০০ থেকে বাড়িয়ে ৪০০ মিলিয়নে উন্নীত করা হয়েছে। কমানো হয়েছে এই ফান্ডের সুদহারও।