• শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ৬ ১৪৩১

  • || ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর প্রধানমন্ত্রী আজ প্রাণিসম্পদ সেবা সপ্তাহ উদ্বোধন করবেন মন্ত্রী-এমপিদের প্রভাব না খাটানোর নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর দলের নেতাদের নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানায় শেখ হাসিনা মুজিবনগর দিবসে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা বর্তমান প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারবে মুজিবনগর দিবস বাঙালির ইতিহাসে অবিস্মরণীয় দিন: প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস আজ নতুন বছর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রেরণা জোগাবে : প্রধানমন্ত্রী আ.লীগ ক্ষমতায় আসে জনগণকে দিতে, আর বিএনপি আসে নিতে: প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা প্রধানমন্ত্রীর ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা রাষ্ট্রপতির দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী কিশোর অপরাধীদের মোকাবেলায় বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী গণতন্ত্রের প্রতি বিএনপির কোনো দায়বদ্ধতা নেই : ওবায়দুল কাদের ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর জুলাইয়ে ব্রাজিল সফর করতে পারেন প্রধানমন্ত্রী আদর্শ নাগরিক গড়তে প্রশংসনীয় কাজ করেছে স্কাউটস: প্রধানমন্ত্রী

নয়ন-মিন্নির আড়ালে যে কারণে রিফাতকে খুন করেন দুই ফরাজী

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২১ জুলাই ২০১৯  

রিফাত ফরাজী ও রিশান ফরাজী দুই ভাই। বাবা দুলাল ফরাজী। বাসা বরগুনা শহরের ধানসিড়ি রোডে। কিন্তু তাঁরা থাকতেন শহরের শেখ রাসেল স্কয়ার লাগোয়া জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসায়। জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি দেলোয়ার হোসেনের ভায়রার ছেলে তাঁরা।

শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে কু‌‌পিয়ে হত্যার ঘটনায় দুই ভাইকে অগ্রভাগে দেখা গেছে। ছোট ভাই রিশান পেছন দিক থেকে রিফাত শরীফকে জাপটে ধরে ছিলেন। আর বড় ভাই রিফাত ফরাজী দা দিয়ে কোপান। বড় ভাইয়ের সেই দায়ের আঘাতে রিশানের হাতও অনেকটা কেটে গিয়েছিল। রিফাতকে কোপানোর ঘটনার একটি ভিডিও ফুটেজে এমনই দেখা গেছে।

রাকিবুল হাসান ফরাজী ওরফে রিফাত ফরাজী ও রাশেদুল হাসান ফরাজী ওরফে রিশান ফরাজীকে যারা চেনে, তাদের অনেকেই বলছে যে দুই ভাইয়ের এই নির্মমতার নেপথ্যে নিশ্চয় কোনো কারণ রয়েছে। তারা বলছে, স্ত্রী'’ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কারণে রিফাত শরীফের ওপর মামলার প্রধান আসামি, যিনি পুলিশের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন সেই সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড ক্ষুব্ধ থাকতেই পারেন। কিন্তু রিফাত ও রিশানের সঙ্গে এমন কী ঘটেছিল, যাতে রিফাত শরীফকে কু‌‌পিয়ে খুনের ঘটনার অগ্রভাগে ছিলেন তাঁরা?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে জানা গেল, রিফাত শরীফের সঙ্গে গত মে মাসে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকি তথা রিফাত ও রিশানের খালার কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। খুকি ঘটনাটি দুই ভাইকে জানিয়েছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, সেই বিরোধের জের ধরেই দুই ভাই রিফাত শরীফের ওপর হামলার ঘটনার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতির অগ্রভাগে ছিলেন।

কারণ গত ২৬ জুন সকালে রিফাত শরীফকে বরগুনা সরকারি কলেজের ফটক থেকে ধরে আনার আগে থেকেই রিফাত ফরাজীকে কলেজ ফটকে অবস্থান এবং তাঁর সহযোগীদের নানা নির্দেশনা দিতে দেখা গেছে। হামলার প্রস্তুতি, হামলা ও ঘটনাস্থল ত্যাগ সব কিছু ধরা পড়েছে ক্লোজড সার্কিট (সিসি) টিভি ক্যামেরার এমন একটি ফুটেজ পুলিশের কাছ থেকে পেয়েছে।

মাটিয়ালে যা ঘটেছিল

রাসেল স্কয়ারে সড়ক লাগোয়া নিজস্ব বাসা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের। বাসার প্রধান ফটকের বাঁ পাশে চেয়ারম্যানের মালিকানাধীন দোকান। সেটি ভাড়া নিয়ে এক ব্যবসায়ী খাবারের হোটেল মাটিয়াল ক্যাফে অ্যান্ড মিনি চায়নিজ করেছেন।

জানা গেছে, রিফাতকে কু‌‌’পিয়ে হত্যার ঘটনার আগে গত ৫ মে মিন্নি তাঁর স্বামীকে নিয়ে ওই ক্যাফেতে গিয়েছিলেন। রিফাত শরীফ তাঁর মোটরসাইকেল চেয়ারম্যানের বাসার একেবারে সামনে সড়কের পাশে রাখার চেষ্টা করেন। তখন চেয়ারম্যানের স্ত্রী সামসুন্নাহার খুকি বাধা দেন। এ নিয়ে খুকির সঙ্গে রিফাতের বেশ কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। রিফাত তাঁর সঙ্গে বাজে ব্যবহার করেন। তখন রিফাতকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন খুকি।

স্থানীয় লোকজন বলছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের একমাত্র প্রতিবন্ধী ছেলে কয়েক বছর আগে পানিতে ডুবে মারা যায়। তখন থেকেই দুই ভাই রিফাত ও রিশান তাঁদের খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রীকে মা বলে ডেকে আসছিলেন। তাঁরা দুই ভাই ওই বাসায়ই থাকতেন। এমনকি চেয়ারম্যানের স্ত্রী তাঁর ভাগ্নে রিফাত ফরাজীর সব অপকর্মে প্রশ্রয় দিতেন বলেও জানা গেছে।

এ রিফাতের বিরুদ্ধে চারটি মামলা রয়েছে। তিনি একাধিকবার গ্রেপ্তারও হয়েছেন। কিন্তু প্রতিবারই তাঁর খালা চেয়ারম্যানের স্ত্রী খুকি প্রভাব খাটিয়ে তাঁকে জামিনে ছাড়িয়ে আনেন। খুকির সঙ্গে রিফাত শরীফের বাজে ব্যবহারের ঘটনাটি রিফাত-রিশানকে জানিয়েছিলেন তিনি।

শেখ রাসেল স্কয়ার রোডের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্ম’রত শ্রমিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, রিফাতের সঙ্গে কথা-কাটাকাটির পর জে’লা পরিষদ চেয়ারম্যানের স্ত্রী তাঁর মালিককে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, ‘তোমাদের দোকানে বাজে ছেলেদের আড্ডা বসে। তাই এখান থেকে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে যাও। বিষয়টি তত্ক্ষণিকভাবে বেশ কয়েকজন সাংবাদিককে জানানো হয়েছিল।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে মাটিয়াল ক্যাফের মালিক মুশফিক আরিফ বলেন, ‘জেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের বাসার প্রবেশমুখের একটি স্টল তাঁদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়েছিলাম। সেখানে খাবারের দোকান করেছিলাম।

বাসার সামনে মোটরসাইকেল রাখাকে কেন্দ্র করে মাস দেড়েক আগে রিফাত শরীফের সঙ্গে আমার দোকান মালিকের স্ত্রী'র কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। ওই ঘটনার পর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আমাকে স্টল ছেড়ে দেওয়ার জন্য দুই দিনের সময়সীমা বেঁধে দেন। তখনো ভাড়ার চুক্তির মেয়াদ দুই বছর ছিল। চেয়ারম্যানের চাপেই আমি ঘটনার ১০-১২ দিন পর দোকান ছেড়ে দিই।’

 

নিহত রিফাত শরীফের স্ত্রী'’ আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি গত ১৪ জুলাই বরগুনা পৌর এলাকার মাইঠায় তাঁর বাবার বাসায় সংবাদ সম্মেলন করেন। এর আগের দিন তাঁর শ্বশুর আবদুল হালিম দুলাল শরীফ সংবাদ সম্মেলন করে তাঁর ছেলের হ’ত্যাকাণ্ডে পুত্রবধূ জড়িত বলে অ’ভিযোগ করেন এবং মিন্নির গ্রেপ্তার দাবি করেন। সে ব্যাপারে বক্তব্য জানাতে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে মিন্নি ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেন, বরগুনা সরকারি কলেজ ফটকের সামনে তাঁর স্বামীকে রিশান ফরাজী প্রথম পথ রোধ করেছিলেন।

রিশান তখন দাবি করেছিলেন, রিফাত শরীফ তাঁর মাকে (খুকি) অকথ্য ভাষায় গালাগাল করেছেন। কেন করেছেন সেটা জানতে চান রিশান। ঠিক একই সময় রিফাত ফরাজী বলেন, ‘তুই (রিফাত) আমা’র চোখের দিকে তাকাইয়া ক, মাকে কেন তুই গালি দিয়েছো।’ তখন রিফাত-রিশানের সঙ্গে থাকা অন্য আ’সামিরা রিফাতের কাছে অ’স্ত্র আছে বলে চি’ৎকার করে এবং ধর ধর বলে তাঁকে কিলঘুষি মা’রতে শুরু করে।

মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোর বলেন, ‘রিফাত খুনের কয়েক দিন আগে আমার মেয়ে ও জামাই মাটিয়াল ক্যাফেতে খেতে গিয়েছিল। তখন মোটরসাইকেল রাখা নিয়ে চেয়ারম্যানের স্ত্রী'’র সঙ্গে রিফাতের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। ঘটনার পর মিন্নি আমাকে বিষয়টি জানিয়েছিল। রিফাতকে কু‌‌পিয়ে হত্যার ঘটনার ভিডিও ফুটেজে রিফাত-রিশানকে যে ভূমিকায় দেখা গেছে, তাতে মনে হচ্ছে, সেই ঘটনার জের ধরেই তারা আমার মেয়ের জামাইকে কু‌‌পিয়ে হত্যা করেছে।’

ভিডিও ফুটেজেও দেখা গেছে, বরগুনায় রিফাত শরীফকে কু‌‌পিয়ে হ’ত্যার ঘটনার আগে রিফাত ফরাজী কয়েকবার ঘটনাস্থল রেকি করেছিলেন। একাই দুটি দা বহন করেছিলেন। এর মধ্যে একটি দিয়েছিলেন নয়ন বন্ডকে। অন্যটি দিয়ে রিফাত শরীফের ওপর রিফাত ফরাজী নিজেই প্রথম হামলা করেছিলেন।

রিফাতকে কলেজ ফটক থেকে তুলে নিয়ে আসা থেকে শুরু করে কু‌‌পিয়ে রিফাত ফরাজীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেছিল। কোপানোর শুরুর দিকে রিফাত শরীফের কোমর জাপটে ধরেছিলেন রিশান। আর রিফাত ফরাজী ও নয়ন বন্ড যখন তাঁকে কোপাচ্ছিলেন তখন দায়ের আঘাতে রিশানের হাতও কেটে গিয়েছিল। এমনকি তিনি রাস্তায় ছিটকে পড়েছিলেন।