• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

জ্যোতির্বিজ্ঞানে সাড়া জাগানো মুসলিম নারী

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৩১ মে ২০২০  

জ্যোতির্বিজ্ঞান অনেকাংশে মুসলমানের ধর্মীয় অনুভূতির সঙ্গে জড়িত। ভৌগোলিক অবস্থান ও ঋতুর ভিন্নতা অনুযায়ী নামাজের সময় নির্ধারণে জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রয়োজন পড়ে। কেবলার দিক নির্ধারণেও জ্যোতির্বিজ্ঞানের শরণাপন্ন হতে হয়। রোজার সূচনা, হজ ও অন্যান্য বিষয়ের সময় নির্ধারণের জন্য চাঁদের চলাচলও পর্যবেক্ষণে রাখতে হয়।

 

আল কোরআনে জ্যোতির্বিজ্ঞান

কোরআনের বহু আয়াত মহাকাশ ও মানুষকে পরিবেষ্টনকারী মহাবিশ্ব সম্পর্কে গুরুত্বারোপ করেছে এবং সংশ্লিষ্ট তথ্যাবলি প্রদান করেছে। শুধু তা-ই নয়, কোরআন মুসলমানদের আকাশ ও জমিনে যা কিছু রয়েছে তার ওপর অনুসন্ধান ও গবেষণা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে। উদাহরণ হিসেবে কয়েকটি আয়াত এখানে উল্লেখ করা হলো। আল্লাহ তাআলা বলেছেন—‘তাদের জন্য রাত এক নিদর্শন, তা থেকে আমি দিবালোককে অপসারিত করি, তখন তারা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। আর সূর্য ভ্রমণ করে তার নির্দিষ্ট গন্তব্যের দিকে, তা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞের নিয়ন্ত্রণ। এবং চাঁদের জন্য আমি নির্দিষ্ট করেছি বিভিন্ন মানজিল; অবশেষে তা শুষ্ক বক্র পুরাতন খেজুরশাখার আকার ধারণ করে। সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চাঁদের নাগাল পাওয়া এবং রাতের পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; এবং প্রত্যেকে নিজ নিজ কক্ষপথে সন্তরণ করে। (সুরা ইয়াসিন : আয়াত ৩৭-৪০)

আল্লাহ তাআলা আরো বলেন—‘তিনিই সূর্যকে তেজস্কর ও চাঁদকে জ্যোতির্ময় করেছেন এবং তার মানজিল নির্দিষ্ট করেছেন যাতে তোমরা বছর গণনা সময়ের হিসাব জানতে পারো। আল্লাহ তা নিরর্থক সৃষ্টি করেননি। জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য তিনি এইসব নিদর্শন বিশদভাবে বিবৃত করেন। নিশ্চয়ই দিবস ও রাতের পরিবর্তনে এবং আল্লাহ আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু সৃষ্টি করেছেন তাতে নিদর্শন রয়েছে আল্লাহভীরু সম্প্রদায়ের জন্য।’ (সুরা ইউনুস, আয়াত : ৫-৬)

এরপর কোরআন আরো সামনে এগিয়ে গিয়ে নির্দিষ্ট তারকা ও নক্ষত্রের নাম ধরে তাদের উল্লেখ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘শপথ আকাশের এবং রাতে যা আবির্ভূত হয় তার; তুমি কি জানো যাতে যা আবির্ভূত হয় তা কী? তা উজ্জ্বল নক্ষত্র!’ (সুরা তারিক, আয়াত : ১-৩)

আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আর এই যে, তিনি শি‘রা নক্ষত্রের মালিক।’ (সুরা নাজম, আয়াত : ৪৯) শি‘রা একটি নক্ষত্রের নাম, একে একটি সম্প্রদায় পূজা করত। বাংলায় যাকে ‘লুব্ধক’, ইংরেজিতে ‘‘Sirius’’ বলে।

 

মুসলিম বিশ্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানের চর্চা

জ্যোতির্বিজ্ঞানে মুসলমানের যাত্রার শুরুতে পূর্ববর্তী সভ্যতাগুলোর বিজ্ঞানীরা যে উত্তরাধিকার রেখে গিয়েছিলেন তার ওপর নির্ভর করেছিলেন তাঁরা। প্রথমেই তাঁরা গ্রিক, কালাডিয়ান (Chaldean), সুরয়ানি, ফারসিক ও ভারতীয় বিজ্ঞানীরা জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর যেসব গ্রন্থ রচনা করেছিলেন সেগুলোর অনুবাদ করেন। মুসলিম বিজ্ঞানীরা প্রথম হার্মেস আল-হাকিম কর্তৃক রচিত গ্রন্থের অনুবাদ করেন। অনূদিত গ্রন্থের নাম ‘কিতাব মাফাতিহ আন-নুজুম’। তাঁরা গ্রিক ভাষা থেকে আরবিতে অনুবাদ করেন। এটা উমাইয়া খিলাফতের শেষ দিকের ঘটনা। জ্যোতির্বিজ্ঞানের ওপর লেখা গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর মধ্যে আরো ছিল টলেমির আল-ম্যাজেস্ট  (Almagest)| আরবিতে এর নাম হয় ‘কিতাব আল-মাজিস্তি’। এটি জ্যোতির্বিদ্যা ও নক্ষত্ররাজির সঞ্চরণের ওপর রচিত। এই গ্রন্থের অনুবাদ হয়েছিল আব্বাসি খিলাফতকালে।

 

মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি

মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি দশম শতাব্দীর একজন মুসলিম নারী জ্যোতির্বিজ্ঞানী। তাঁর মূল নাম আল-ইজলিয়্যাহ বিনতে আল-ইজলি আল-আস্তুরলাবি। জ্যোতির্বিজ্ঞান ছাড়াও বিজ্ঞানের অন্যান্য শাখায় পারদর্শী ছিলেন তিনি। তাঁর পিতা কুশিয়ার আল-জিলানি কয়েকটি জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গ্রন্থের রচয়িতা। যেমন : মাজমাল ‘আল-উসুল ফি আহকাম আন-নুজুম’, ‘আল-যিজ আল-জামি’, ‘আল-মাদখাল ফি সানাআ আহকাম আন-নুজুম’ ও ‘আস্তুরলাব’। তাঁরা বাস করতেন সিরিয়ার আলেপ্পোতে। সেখানেই মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি তাঁর বৈজ্ঞানিক গবেষণামূলক কাজ করতেন।

মারইয়াম ও তাঁর পিতা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ নাস্তুলুসের শিষ্য ছিলেন। নাস্তুলুস ছিলেন প্রখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী, যিনি ইতিহাসে সর্বপ্রথম বিস্তৃত অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ করেছিলেন। নাস্তুলুসের কাছে শিক্ষাগ্রহণের পর মারইয়াম ‘উন্নত অ্যাস্ট্রোল্যাব’ নির্মাণে ব্রতী হন। তাঁর জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক গবেষণায় এটি ছিল একটি উত্কর্ষের প্রতীক। তিনি তাঁর অ্যাস্ট্রোল্যাবে নতুন নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছিলেন, যাতে নির্দিষ্ট সময়ে মহাকাশের বস্তুরাশির নির্দিষ্ট অবস্থান নির্ণয় করা যায়। 

হিজরি চতুর্দশ শতকে (খ্রিস্টীয় দশম শতকে) মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি যখন বসবাস ও গবেষণা করতেন আলেপ্পোতে, সেই সময় ওখানকার গভর্নর ছিলেন সাইফুদ্দাওলাহ। তিনি আলেপ্পো স্টেট প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা ছিল হামদানি সাম্রাজের একটি প্রতীক। মারইয়াম সাইফুদ্দাওলাহর রাজদরবারে ৯৪৪-৯৬৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মহাকাশ-গবেষক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। এই সময়ে তিনি একটি নয়, বিভিন্ন ধরনের একাধিক অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ করেছিলেন।

মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি যে অ্যাস্ট্রোল্যাব নির্মাণ করেছিলেন তা অনেক আধুনিক নৌবৈজ্ঞানিক ও জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতির ভিত্তি তৈরি করে দিয়েছে বলে মনে করা হয়। যেমন : কম্পাস, স্যাটেলাইট ও বিশ্বজনীন অবস্থান-নির্ণায়ক ব্যবস্থা, যা সংক্ষেপে জিপিএস (গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেম) নামে পরিচিত।

মার্কিন জ্যোতির্বিজ্ঞানী হেনরি ই হল্ট ১৯৯০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়াগোতে অবস্থিত পালোমার মানমন্দিরে গবেষণাকালে একটি গ্রহাণু-বেষ্টনী (Asteroid Belt) আবিষ্কার করেন। তিনি এটির নাম দেন ‘মারইয়াম আল-আস্তুরলাবি’।

অ্যাস্ট্রোল্যাব  (Astrolabe) একটি বিস্তৃত নতি-পরিমাপক যন্ত্র  (ওহপষরহড়সবঃবৎ)। একে এনালগ ক্যালকুলেটরও বলা যেতে পারে। এই যন্ত্র বিভিন্ন ধরনের জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক সমস্যার সমাধান করতে সক্ষম। জ্যোতির্বিজ্ঞানী ও নাবিকেরা মহাকাশীয় বা মহাজাগতিক বস্তুর দিগ্বলয়ের ওপরের উচ্চতা, দিন বা রাত নির্ণয়ের জন্য এই যন্ত্র ব্যবহার করতেন। গ্রহ ও নক্ষত্র নির্ণয়ের জন্যও এই যন্ত্র ব্যবহার করা হতো। নির্দিষ্ট স্থানীয় সময়ে স্থানীয় অক্ষাংশ, জরিপ ও ত্রিভুজীকরণেও  (Triangulation) অ্যাস্ট্রোল্যাব ব্যবহৃত হতো। ধ্রুপদি সভ্যতায়, ইসলামী স্বর্ণযুগে, ইউরোপীয় মধ্যযুগে ও আবিষ্কারের যুগে উপরিউক্ত সব কাজের জন্য অ্যাস্ট্রোল্যাবের ব্যাপক ব্যবহার ছিল। ইসলামী বিশ্বে জ্যোতির্বিজ্ঞানের বিকাশকালে মুসলিম বিজ্ঞানীরা অ্যাস্ট্রোল্যাবের নকশার ক্ষেত্রে কৌণিক স্কেল প্রবর্তন করেন। দিগংশকে নির্দেশ করে এমন বৃত্ত যুক্ত করেন। কিবলা অনুসন্ধানের উপায় হিসেবেও যন্ত্রটির ব্যবহার ছিল। অষ্টম শতাব্দীর গণিতজ্ঞ মুহাম্মদ আল-ফাযারি প্রথম অস্ট্রোল্যাব নির্মাতা হিসেবে কৃতিত্ব অর্জন করেন।

সূত্র : ডেইলি সাবাহ, ইস্তাম্বুল, ১৬ জুলাই, ২০১৬ খ্রি.; ইবনে নাদিম, আল-ফিহিরসত, পৃ. ৬৭১।