• সোমবার ২৯ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৬ ১৪৩১

  • || ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী

মহররম মাসে বিয়ের বিষয়ে ইসলাম কি বলে

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২৬ আগস্ট ২০২০  

হিজরি বছরের প্রথম মাস মহররম। কুরআনের ঘোষণায় সম্মানিত ও মর্যাদার মাস এটি। অথচ এ মাসের বিয়ে-শাদির মতো গুরুত্বপূর্ণ সাওয়াব ও ইবাদতের আমল ঠিক নয়, এমনটি মনে করেন অনেকে। বাস্তবেই কি এ ধারণা বা বিশ্বাস সঠিক? মহররম মাসে কি বিয়ে-শাদি করা যাবে না? এ সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনাই বা কী?

ইসলামের ইতিহাসে নানান কারণে মহররম মাস সর্বাধিক পরিচিত। এ মাসটি আল্লাহর গণনায় ১২ মাসের মধ্যে যে ৪টি মাসকে মর্যাদা ও সম্মানিত করেছেন, তার মধ্যে একটি মাস হলো মহররম। এ মর্যাদার মাসে মুমিন মুসলমান নারী-পুরুষের বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করা যাবে না বা তা অশুভ বা কুলক্ষণে মর্মে সমাজে প্রচলিত ধারণা সঠিক নয়। বরং এ ধারণা পোষণ করা একটি ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার।

মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে না- এ রকম কোনো কথা বা প্রমাণ কুরআন এবং হাদিসে নেই। মর্যাদার মাস মুহররম নিয়ে এসব ভ্রান্ত ধারণা পোষণ করা ইসলামি শরিয়তে নিষিদ্ধ। কেননা হাদিসের পরিভাষায়, 'কোনো বিষয়কে কুলক্ষণে মনে করাকে শিরক বলা হয়েছে।' (আবু দাউদ)

অন্য যে কোনো দিন ও মাসে মুমিন মুসলমান যেসব ভালো কাজগুলো করে থাকেন, সেসব ভালো কাজগুলো মহররমসহ সম্মানিত ৪ মাসে বেশি বেশি করা উচিত। বিয়ে-শাদি যেহেতু একটি ভাল ও কল্যাণকর কাজ। তাই এ মাসে বিয়ে-শাদিও করা যাবে। এতে কোনো দোষ, অশুভ ও কুলক্ষণে নেই।

যে ভুল বিশ্বাসে সমাজে এ কুসংস্কার প্রচলিত
মহররম মাসে বিয়ে করা যাবে না মর্মে যে ভুল বিশ্বাস সমাজে বেশ প্রচলিত আছে, তাহলো- মহররম মাস একটি অপয়া মাস ও কুলক্ষণে মাস। বিয়ে শাদির জন্য এটি খারাপ সময়। এটা শোকের সময় বা মাস। তাই এ মাসে বিয়ে শাদি করা ঠিক নয়। এ ধারণাটিই মূলত কুসংস্কার ও ভুল।

মুহাররম মাসে মুসলিম উম্মাহর হৃদয়ে স্থায়ী এক ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রাণ প্রিয় দৌহিত্র হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে নির্মমভাবে শাহাদাত করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেকে শোক পালন করে থাকেন। আর এ কারণেই অনেকে শোকের মাস হিসেবে এ মাসে বিয়ে-শাদি করাকে কুলক্ষণে ও অশুভ মনে করেন।

হজরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুর শাহাদাত মুসলিম উম্মাহর জন্য অবশ্যই অত্যন্ত হৃদয় বিদারক ঘটনা। কিন্তু এ কারণে এ মাসের কোনো ভালো কাজকে অশুভ বা কুলক্ষণে ও অপয়া বলা একবারেই ঠিক নয়। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে সময় (দিন, মাস) অশুভ ও অপয়া হয় না। কোনোভাবেই মন্দ হতে পারে না।

অন্যদিকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এ মাসে পয়গাম্বর হজরত মুসা আলাইহিস সালামের বিজয়ের ঘটনা ঘটিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সে ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিজে রোজা রেখেছেন এবং অন্যদের রোজা রাখতে বলেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদিনায় এসে দেখলেন, ইয়াহুদিরা আশুরার দিন রোজা পালন করছে। তখন তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এটা কিসের রোজা?
তারা (ইয়াহুদিরা) বলল, এটা একটা উত্তম দিন। আল্লাহ তাআলা এ দিন বনি ইসরাইল জাতিকে তাদের দুশমন (ফেরাউন)-এর আক্রমণ থেকে নিরাপদ করেছেন। তাই (হজরত) মুসা আলাইহিস সালাম এ দিন রোজা রেখেছিলেন।
তখন নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমাদের চেয়ে আমিই (হজরত) মুসা (আলাইহিস সালাম)-এর (আদর্শ পালনে) বেশি হকদার। কাজেই তিনি নিজে আশুরার রোজা রাখলেন এবং অন্যদেরকেও রোজা রাখতে বললেন।’ (বুখারি,মুসলিম, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, বায়হাকি)

সুতরাং মহররম মাসকে অশুভ, কুলক্ষণে ও অপয়া বলা একটি ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার। মুমিন মুসলমানকে এ ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ বিশ্বাস ত্যাগ করা প্রত্যেকের ঈমানি দায়িত্ব।

মনে রাখতে হবে
পৃথিবীতে যা কিছু ঘটে তার সবই মহান আল্লাহর ইচ্ছাতেই ঘটে থাকে। কোনো দিন, রাত, সপ্তাহ বা মাসের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যেমন-
শাওয়াল মাস : জাহেলি যুগে শাওয়াল মাসে বিয়ে শাদি করাকে অশুভ মনে করা হতো। কিন্তু এ মাসে প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে বিয়ে করেছেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা জাহেলি যুগের শাওয়াল মাসের এ কুধারণা তথা কুসংস্কারকে এভাবে খণ্ডন করেছেন যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে শাওয়াল মাসেই বিয়ে করেছেন এবং এ মাসেই তিনি বাসর রাত উদযাপন করেছেন। অথচ তাঁর অনুগ্রহ লাভে আমার চেয়ে অধিক সৌভাগ্যবতী স্ত্রী আর কে আছে? (মুসলিম)

এ হাদিস থেকে প্রমাণিত যে, কোনো দিন, সপ্তাহ কিংবা মাসে কল্যাণকর কোনো কাজ করাকে অশুভ মনে করা ঠিক নয়। বরং কোনো দিন, সপ্তাহ ও মাসকে অশুভ, অপয়া ও কুলক্ষণে মনে করা ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার। এ ধারণা পোষণ করা ঠিক নয়।

সুতরাং মহররম মাসের বিয়ে শাদি করায় কোনো নিষেধ নেই। আর তা অশুভ, অপয়া বা কুলক্ষণেও নয়। শুধু মহররম নয় বরং বছরজুড়ে যে কোনো দিন বিয়ে-শাদি করা যাবে। কোনো দিনই অশুভ ও কুলক্ষণে নয়। এটি হোক মুমিন মুসলমানের সঠিক আকিদ্বা-বিশ্বাস।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদার মাস মহররমকে যথাযথ সম্মান ও ইজ্জতের সঙ্গে অতিবাহিত করার তাওফিক দান করুন। এ মাসের ৯-১০ কিংবা ১০-১১ এ দুই দিন রোজা পালন করে সুন্নাতের উপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। এ মাস নিয়ে যাবতীয় ভুল বিশ্বাস ও কুসংস্কার থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।