• বৃহস্পতিবার ০৯ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

  • || ২৯ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
প্রতিজ্ঞা করেছিলাম ফিরে আসবোই: শেখ হাসিনা জনগণের শক্তি নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছি: শেখ হাসিনা আজ হজ কার্যক্রম উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী ঐতিহাসিক ৭ মে: গনতন্ত্র পুনরুদ্ধারে শেখ হাসিনার দেশে ফেরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আইওএম মহাপরিচালকের সৌজন্য সাক্ষাৎ গ্রামে দ্রুত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আহসান উল্লাহ মাস্টার ছিলেন শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের সংগ্রামী জননেতা : প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীকে আরও দক্ষ করে গড়ে তোলা হচ্ছে : প্রধানমন্ত্রী সশস্ত্র বাহিনী সংকটে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের আস্থা অর্জন করেছে ঢাকা সেনানিবাসে এএফআইপি ভবন উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী উপজেলা নির্বাচন সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে কাজ করতে মন্ত্রী-এমপিদের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর আমাকে সরিয়ে তারা কাকে আনবে? যে ২৫ জেলায় আজ স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে যুক্তরাষ্ট্রকে আগে নিজের ঘর সামলাতে বললেন শেখ হাসিনা থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী

পেঁয়াজ সংরক্ষণে আশা জাগিয়েছে ‘এয়ার ফ্লো মেশিন’

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২২  

বছরে দেশে ৩৫ থেকে ৩৬ লাখ মেট্রিক টন চাহিদার বিপরীতে দেশেই উৎপাদন হয় প্রায় ৩২ লাখ মেট্রিক টন পেঁয়াজ। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজের এক-চতুর্থাংশই পচে যায় বা নষ্ট হয়ে যায়। এতে অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন কৃষকরা। গ্রাহকরাও বছরের কিছু সময় কম দামে পেঁয়াজ কিনতে পারলেও অন্য সময় চড়া দামে পেঁয়াজ কিনতে বাধ্য হন। এ অবস্থায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানিসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরামর্শক দলের উদ্ভাবিত ‘এয়ারফ্লো মেশিন’ আশা দেখাচ্ছে। এই মেশিন ব্যবহারে বছরের ৮-৯ মাস ভালো থাকছে পেঁয়াজ। বছরজুড়ে বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন কৃষক।

সরেজমিন ফরিদপুরের সালথা ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষিকে এয়ারফ্লো মেশিন ব্যবহার করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে দেখা গেছে। একটি ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে এই যন্ত্রটি স্থাপন করে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হয়। একশ’ বর্গফুট জায়গাজুড়ে তৈরি একটি স্থানে প্রায় তিনশ’ মণ পেঁয়াজ আট মাস সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়। এতে মাসে পাঁচ থেকে ছয়শ’ টাকার মতো খরচ হয়। 

কৃষকরা জানান, সাধারণত বাজারে নতুন পেঁয়াজ ওঠার পরেই দাম কমতে থাকে। এজন্য কিছু দিন সংরক্ষণ না করতে পারলে চাষিদের কোনও লাভ থাকে না। কিন্তু প্রচলিত পদ্ধতিতে বাঁশের মাচা বা চাঙে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করলে অধিক তাপমাত্রায় ঘেমে যাওয়া, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, অতিরিক্ত জলীয় বাষ্পে পচন ধরা ও রঙ নষ্ট হওয়াসহ নানা সমস্যার সম্মুখীন হন চাষিরা। এ অবস্থায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় সমন্বিত পানিসম্পদ পরিকল্পনা ও ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের পরামর্শক দলের ভ্যালু চেন বিশেষজ্ঞরা ‘বায়ু প্রবাহ যন্ত্রের মাধ্যমে পেঁয়াজ সংরক্ষণ’ প্রযুক্তির এয়ারফ্লো মেশিন উদ্ভাবন করেন।  

কৃষকদের বাড়িতে এই সংরক্ষণ ব্যবস্থায় দেখা যায়, ছাদযুক্ত টিনের কিংবা ইটের ঘরের মেঝেতে ইট দিয়ে মাচা তৈরির পর ছিদ্রযুক্ত মাদুর বা বানা দিয়ে ঢেকে তার মধ্যে সাড়ে ছয় ফুট লম্বা ও ১৪ ইঞ্চি চওড়া একটি ভার্টিক্যাল সিলিন্ডার বসানো হয়। এক হর্স পাওয়ারের একটি বৈদ্যুতিক মোটর যুক্ত করে পাখার সাহায্যে উপর থেকে বাতাস টেনে নিয়ে নামানো হয়। পরে আটকে থাকা বাতাস পেঁয়াজের মধ্য দিয়ে বের হয়। ছোট্ট একটি কক্ষে এভাবে বাতাস প্রবাহ করে মজুতকৃত পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

কম খরচেই এয়ারফ্লো মেশিন স্থাপন করতে পারছেন কৃষকরা। মেশিন স্থাপন ও ব্যবস্থাপনায় ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। আর বিদ্যুৎ খরচ হিসেবে মাসে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।   

এ বিষয়ে ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসএমও স্পেশালাইজড ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আবু সালে মোহাম্মদ তোফায়েল চৌধুরী বলেন, মেশিন স্থাপন ও ব্যবস্থাপনায় একজন কৃষকের ১৫-২০ হাজার টাকা খরচ হয়। তবে মেশিন স্থাপন ও মেইনটেন্যান্সের পুরো টেকনিক্যাল সাপোর্ট আমরা বিনামূল্যে দিচ্ছি।  

তিনি আরও জানান, মেশিনটির আয়ুষ্কাল ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। প্রকল্পটি সফল হলে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি।    

ফরিদপুর সদর উপজেলার কৈজুরি ইউনিয়নের মো. হায়দার শেখ (৪৫) বলেন, গত বছর থেকে এয়ারফ্লো পদ্ধতি ব্যবহার করছি। এই পদ্ধতিতে আগের চেয়ে অনেক বেশি সময় পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে। এখন নিজের প্রয়োজন মতো বছরজুড়েই বিক্রি করতে পারছি। বীজও ভালো হচ্ছে। 

তিনি আরও বলেন, এয়ারফ্লো ব্যবস্থাপনায় সংরক্ষণ করে ২৫শ’ টাকা মণ দরে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছি। না হলে ১২শ’ টাকা মণ দরে বিক্রি করতে হতো।

একই ইউনিয়নের পিয়ারপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষি আব্দুর রহিম শেখ (৬০) বলেন, এবার তিনশ’ মণেরও বেশি পেঁয়াজ পেয়েছি। আগে চাঙে খামাল দিয়ে পেঁয়াজ রাখতাম। তবে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হতো। এ বছর মেশিন দিয়ে রাখার পর পেঁয়াজ ভালো আছে।  

এয়ার ফ্লো মেশিনের সহায়তায় সংরক্ষণ করে পেঁয়াজের ভালো বীজ পাওয়া গেছে জানিয়ে সালথার গট্টি ইউনিয়নের ঝুনাখালী গ্রামের আমজাদ মাতুব্বর বলেন, মেশিনে পেঁয়াজ রাখলে বীজ খুব সুন্দর হয়। পেঁয়াজের রঙ এবং গুণগত মান ভালো থাকে। তাই এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ সংরক্ষণে অন্যরাও ঝুঁকে পড়ছেন।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের ভ্যালু চেন স্পেশালিস্ট গাজী মো. আব্দুল্লাহ মাহদী বলেন, একটি ভার্টিকাল সিলিন্ডারে মোটর সংযুক্ত করে ছোট একটি কক্ষে পেঁয়াজ সংরক্ষণাগার তৈরি করা হয়। এই মেশিনের মাধ্যমে নিচে বাতাস টেনে আটকে দেওয়া হয়। পরে সেই বাতাস পেঁয়াজের ভেতর দিয়ে বের হতে বাধ্য হয়। এতে পেঁয়াজের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং পেঁয়াজ দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ পচে না। কোন পেঁয়াজ নষ্ট থাকলে সেটি নিজেই শুকিয়ে যায়, পাশের পেঁয়াজকে নষ্ট করে না।

সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের সিনিয়র ফ্যাসিলিটেটর অধীর কুমার বিশ্বাস বলেন, ফরিদপুর ও রাজবাড়ি জেলায় ৪১টি স্থানে আমরা মেশিন বসাতে সক্ষম হয়েছি। কৃষকের মধ্যে ব্যাপক সাড়া পড়েছে।

ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসএমও স্পেশালাইজড ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী ইঞ্জিনিয়ার আবু সালে মোহাম্মদ তোফায়েল চৌধুরী বলেন, পেঁয়াজ সংরক্ষণের এই প্রযুক্তি প্রথম বছরেই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। বছরের ৮-৯ মাস এভাবে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করা যায়। এর মাধ্যমে সংরক্ষিত পেঁয়াজের ওজন হ্রাস শতকরা ত্রিশ শতাংশ এবং পচন প্রায় শূন্যের কোঠায় চলে এসেছে। এই প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়লে আমরা নিজস্ব উৎপাদন দিয়েই পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে পারবো। এছাড়া আমদানি করতে গিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা খরচও কমে আসবে।