• শনিবার ০৪ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ২১ ১৪৩১

  • || ২৪ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ দেশে এখন বেকারের সংখ্যা ৩ শতাংশ: প্রধানমন্ত্রী ‘বিলাসিতা একটু কমিয়ে শ্রমিকদের কল্যাণে নজর দিন’ চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা

আক্কেল দাঁতের বিড়ম্বনা!

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

সাধারণত ১৭ থেকে ২১ বছর বয়সে মানুষের দুই চোয়ালের দুই দিকে মোট চারটি দাঁত ওঠে। আক্কেল দাঁত একটু বেশি বয়সে ওঠে, আমরা  সকালেই এ বিষয়টা জানি। এবং এর সঙ্গে বুদ্ধির পরিপক্বতার একটি সম্পর্কের কথা বলা হয়। একে  মেডিকেলের ভাষায় উইজডম টিথ বা থার্ড মোলার বলা হয়। এই দাঁত অনেকের ক্ষেত্রেই  সমস্যা তৈরি করে। এসকল সমস্যার চিকিৎসা সময়মত করানো না হলে হতে পারে বিপত্তি।তাই আজকের প্রতিবেদনে লিখছি আক্কেল দাতের সমস্যার ইতিবৃত্ত।

**আক্কেল দাত যেসব সমস্যা তৈরি করেঃ

# সাধারণত আক্কেল দাঁতের অবস্থান অনেক সময় ঠিক থাকে না। 
#দাঁতটা উঠার সময় ব্যথা হতে পারে। অনেকের দাঁতটা ঠিকভাবে উঠে। আবার অনেকের ঠিক ভাবে উঠে না। অথবা অনেক সময় আংশিকভাবে আসে। গালের দিকে, জিহ্বার দিকে, উপরের মাড়ি থেকে তালুর দিকে দাঁতটা উঠতে পারে। আবার অনেক সময় দাঁতটি একেবারেই মাড়ির ভেতরে থাকে।
#অনেকের ক্ষেত্রে দেখা যায় দাতটি বাহিরের দিকে ওঠার কারনে চিক বাইট করে।এর মানে হচ্ছে আমাদের গালের দুই পাশে দাতের পাশে যে নরম টিস্যু আছে খাবার সময় ওই টিস্যুতে কামড় লাগে।দীর্ঘদিন এরকম হওয়ার ফলে ওই যায়গাটাতে ইনফেকশন হয়।
**সমস্যাগুলো যেসব লক্ষণ প্রকাশ করেঃ 
#আক্কেল দাঁত ওঠার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমত প্রচণ্ড ব্যথা হয়। তবে কারো কারো ক্ষেত্রে ব্যাথা হয় না।
#মাড়িটা ফুলে যায়। এই ফোলাটা এত মারাত্মক হয় যে শুধু মুখের ভেতরে ফোলাটা থাকে না, গালের দিকে ফুলে ওঠে, গলার দিকে ফুলে ওঠে। রোগী হয়তো অনেক সময় দ্বিধায় পড়ে যেতে পারেন। ভাবতে পারেন, টনসিলের ব্যথা বা মামস হয়েছে। কারণ, আক্কেল দাঁতের জন্য যে গলা, মুখ ফুলে যেতে পারে, এ বিষয়ে ধারণা কম থাকে। তাই রোগী দ্বিধায় পড়ে যান।
#দাঁতটি উঠার জন্য যতটুকু জায়গা দরকার ততটুকু জায়গা না পেলে তখন একটি প্রদাহ হয়। তখন হা করতে কষ্ট হয়।
# কারো কারো ঢোক গিলতে কষ্ট হয়।

#আবার যদি দাঁতটি স্বাভাবিক অবস্থায় না থাকে তখন পাশের দাঁত এবং আক্কেল দাঁতে খাদ্যকণা জমে যায়। এটি হলে সেই ক্ষেত্রে পাশের দাঁতটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। কারণ পাশের দাঁতটি নিয়মিত ব্রাশ করলেও খাদ্যকণা দূর হয় না। সেই ক্ষেত্রে পাশের দাঁতটিতেও ব্যথা হতে পারে।
# অনেকের মাড়ির প্রদাহ হয়ে থাকে। এটি থেকে ইনফেকশন হয়ে থাকে। ধীরে ধীরে পুঁজ জমে যায়।তখন রোগীর খাওয়ায় সমস্যা হয়।আর এই ইনফেকশান ওরাল ক্যাভিটি থেকে ছড়িয়ে যেতে পারে অন্যান্য প্বার্শবর্তী টিস্যুতে।
# শ্বাসকষ্ট হতে পারে।খুব খারাপ অবস্থায় শ্বাসকষ্ট হতে পারে।তবে এটি সচারচর হয় না।

**আক্কেল দাতের সমস্যা অন্যান্য দাত থেকে ভিন্ন যে কারণেঃ 
দুধের দাঁত পড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিচ থেকে আরেকটি দাঁত আসতে থাকে। ফলে ওইটির একটি জায়গা থাকে। তবে আক্কেল দাঁতগুলো ১৮ বছরের পরে ওঠে। তখন আমাদের মাড়ির টিস্যু একটু পুরু ও শক্ত হয়ে যায়। দাঁতটি আসতে হলে  মাড়িকে একটু চিরে উঠতে হবে। ফলে ওঠার সময় চাপ হয় এবং মাড়িকে একটু কেটে কেটে সে বের হয়। সে জন্য এই ব্যথা থাকে।আবার অনেক সময় আক্কেল দাঁত একটু বাঁকা হয়ে ওঠে, অন্যান্য দাঁত সাধারণত সোজা হয়ে ওঠে। কিংবা হয়তো আক্কেল দাঁত উঠতেই পারছে না, বাঁকা হয়ে আছে অথবা শুয়ে আছে অথবা পেছনের দিকে একটু কাত হয়ে আছে এই সমস্যাগুলোর কারণেই ব্যাথা হয়ে থাকে এবং  ফুলে যায়। তাছাড়া অন্যান্য দাত উঠে যাওয়ার পর যদি চোয়ালে যায়গা না হয় তবে এই দাত উঠায় সমস্যা হতে পারে।জেনেটিকালি অনেকের চোয়াল চওড়া কম হতে পারে।

**চিকিৎসাঃ 
ব্যক্তির স্বাভাবিক কাজ যদি ব্যহত হয় তবে সেই ক্ষেত্রে অবশ্যই আক্কেল দাঁত ফেলে দেওয়া উচিত।

√√এ বিষয়ে অনেকের কিছু প্রশ্ন থাকতে পারে 
সেগুলোর প্রশ্ন সহ উত্তর দেয়ার চেষ্টা করছি।
#আক্কেল দাঁত ফেলে দিলে কোনো সমস্যা হবে কিনা?

উত্তরঃ 
আসলে আমাদের প্রধান যে খাবারের দাঁত, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় মোলার টিথ বলি, আক্কেল দাঁত সেই মোলার তিনটি দাঁতের মধ্যে একটি। তবে এগুলো আসলে আমাদের খাবার চিবানোর কাজে লাগছে না। সামনের যে মোলার টিথগুলো আছে, সেগুলোই আমাদের খাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। তবে শেষ যে দাঁত, আক্কেল দাঁত—সেটি খাওয়ার কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে না।
এই দাঁত মাঝেমধ্যে যেহেতু সমস্যা তৈরি করে এবং রোগীর জন্য, উপকারী কিছু নয়, কোনো কাজে আসছে না—এ জন্যই এটাকে ফেলে দেওয়ার জন্য বলা হয়। অনেক ভেতরে হওয়ার কারণে এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যে চিকিৎসা, সেটিও জটিল। এই দাঁত সহজে পরিষ্কার হয় না বলে বারবার সমস্যা হয়। তবে, অনেক সময় রোগীর যদি মুখের আকৃতি ভালো থাকে, রক্ষণাবেক্ষণ পদ্ধতিতে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করেন চিকিৎসক । অনেক রোগীর ক্ষেত্রে, যারা দাঁত ফেলতে চান না, তদের রুট ক্যানেল বা আরো অনেক পদ্ধতি আছে—সেগুলো দিয়ে রেখে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে মূলত যেহেতু এটা আমাদের খাওয়ার কাজে কোনো সাহায্য করছে না, তাই একে ফেলে দেয়াই ভালো। 

#কার কাছে যাবো চিকিৎসার জন্যঃ 
উত্তরঃ 
এ ধরনের সমস্যা হলে রোগীকে প্রথমে ম্যাক্সিলোফেসিয়াল সার্জনদের কাছে যেতে হবে। তাঁরা যেহেতু এই বিষয় নিয়ে প্রতিনিয়ত কাজ করছেন, তাঁরা ভালো করেই জানেন কোথায় ইনসিশন দিতে হবে। কোথায় হাড় কাটতে হবে। কীভাবে দাঁতকে চাপ দিয়ে তুলতে হবে। ফলে এটি রোগীর জন্য খুব ক্ষতিকর নয়, এখানে ভয় পাওয়ার তেমন কিছু নেই।

তবে হাতুড়ে বা কবিরাজ দিয়ে দাত তোলা যাবে না।সেক্ষেত্রে হয়তো দাঁতটা ভেঙে যেতে পারে। কারো নিচের চোয়ালটা ভেঙে যেতে পারে,বা কারো অনেক সময় স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে রোগীদের সচেতন হয়ে মেক্সিলোফেসিয়াল সার্জনের কাছে যেতে হবে।

#পুরোপুরি অজ্ঞান করা হবে নাকি স্থানটি অবশ করে চিকিৎসা করা হবে?
উত্তরঃ 
যদি অবস্থান ভালো থাকে, তবে স্থানীয়ভাবে অবশ করে করে দাতটি তুলে ফেলা হয়। আমাদের মাড়ির নিচের দিকে একটি রক্তনালি আছে। অনেক সময় দাঁতটি রক্তনালির কাছাকাছি থাকে, সে ক্ষেত্রে অনেক সময় আমরা পুরোপুরি অজ্ঞান করার প্রয়োজন পড়ে।

#সময় মতো চিকিৎসা না করালে কী কি সমস্যা হতে পারে?
উত্তরঃ 
আক্কেল দাঁতে বারবার ব্যথা হচ্ছে, কমে যাচ্ছে—এতে অনেকেই একে এড়িয়ে যান। ভাবেন, এটি কোনো বিষয় নয়। তবে দাঁতটি যেহেতু একটি হাড়ের মধ্যে রয়েছে, সেই সংক্রমণ বাড়তে বাড়তে হাড়টি ক্ষয় হয়ে গলার দিকে ছড়িয়ে পড়তে পারে। এটি অনেক সময় কেবল ওই জায়গা নয়, সামনে-পেছনে এমনভাবে হয়ে আসে, যাকে জীবনঝুঁকির কারণ হিসেবে ধরা হয়। পুরো গলা ফুলে শক্ত হয়ে যায়। এ ধরনের রোগী এতটাই অস্থিতিশীল হয় যে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে সার্জারি করাতে হয়। তখন তার জীবন বাঁচানো একটু ঝুঁকির হয়ে যায়।

আবার সংক্রমণ হলে সেখানে কিছুটা ফ্লুইড জমে। গলার দিকের টিস্যুগুলো নরম হয়, সেই পথ দিয়ে ফ্লুইডটি গলা দিয়ে নিচের দিকে নামতে থাকে। ফলে সেই সংক্রমণও ছড়াতে থাকে। এর ফলে গলা ফুলে যায়। তখন সেটি আমাদের শ্বাসনালিকে চেপে ধরে। সে জন্য এর সময়মতো চিকিৎসা অবশ্যই করতে হবে।

কথায় আছে "দাত থাকতে দাতের মর্যাদা বুঝুন"। আসলেই ব্যাপারটা এমন দাত থাকতে দাতের মর্যাদা বুঝুন আর সময় মত চিকিৎসা করান, সমস্যা হলে।বছরে অন্তত দুইবার দাতের রুটিন চেকআপ করান।এতে সমস্যা থাকলে আগেভাগে ধরা পড়বে। 



মোঃশাকিল আহমেদ 
শের ই বাংলা মেডিকেল কলেজ 
বরিশাল