মানুষ তুমি মানুষ হও
আলোকিত ভোলা
প্রকাশিত: ২২ জুলাই ২০১৯
রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন, ‘এই দুর্বল, ক্ষুদ্র, হৃদয়হীন, কর্মহীন, দাম্ভিক, তার্কিক জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের এক সুগভীর ধিক্কার ছিল।’ বাঙালি দুর্বল, বাঙালি হৃদয়হীন, বাঙালি কর্মহীন, বাঙালি দাম্ভিক, বাঙালি তার্কিক! এটা রবীন্দ্রনাথের আমলে ছিল, এটা এই আমলেও আছে। এই জাতির প্রতি বিদ্যাসাগরের ধিক্কার ছিল, এই সমাজের প্রতি ধিক্কার তুলে নেবার কোনো কারণ নেই! রবীন্দ্রনাথই বলেছিলেন, রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করোনি।বাঙালিকে জননী বাংলাদেশ তখনো মানুষ করেনি, এখনো মানুষ করেনি।
আমরা এখন পিটুনি দিয়ে মানুষ মারছি। মা গেছেন স্কুলে, শিশুসন্তানকে ভর্তি করাবেন বলে, লোহার রড দিয়ে মেরে মেরে তাঁকে থেঁতলে পিষে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত করে আমরা ততক্ষণ পিটিয়েছি, যতক্ষণ না তাঁর শেষনিশ্বাস বেরিয়ে যায়। বাড়িতে তাঁর সন্তান অপেক্ষায় থাকে, মা ফিরে আসবেন। মা ফেরেন না। বাবা স্কুলে গেছে ছেলেকে দেখতে, তাঁকে আমরা পিটিয়ে পিটিয়ে হত্যা করছি।
তারও আগে আমরা গুজব ছড়িয়েছি। পদ্মা সেতুতে মানুষের মাথা লাগবে। এই গুজবের বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর প্রচার দেখিনি, সংগঠিত প্রতিবাদ দেখিনি, প্রতিরোধ দেখিনি। বিচ্ছিন্ন প্রয়াস দেখেছি, কিন্তু একযোগে সবাই মিলে আমরা গর্জে উঠিনি, বলিনি, কোনো সেতুতে কোনো স্থাপনায় কোনো কালেই কোনো দিনও রক্ত লাগেনি, রক্ত লাগে না, মাথা লাগেনি, মাথা লাগে না।
গণপিটুনি দিয়ে মানুষ মারা এই দেশে নতুন নয়।আমরা পকেটমারকে গণপিটুনি দিয়ে মারতে দেখেছি, ডাকাত সন্দেহে গ্রামবাসীরা মানুষ মেরেছে পিটিয়ে, তা অনেকবার পড়েছি, শুনেছি দেখেছি; মধ্যযুগে ইউরোপে ডাইনি বলে অপয়া বলে চিহ্নিত করে নারীদের পিটিয়ে পুড়িয়ে মারা হতো, তা এশিয়া–আফ্রিকায় এখনো ঘটে চলেছে, আমরা সংবাদমাধ্যমে জানতে পারছি।৪ নম্বর প্ল্যাটফর্ম নামে পশ্চিম বাংলার একটা অনলাইন খবরের পোর্টালে দেবাশিস ভট্টাচার্য লিখেছেন, ‘একটি গণনা অনুযায়ী ভারতে ১৯৯৫ থেকে ২০০৯ সালের মধ্যে ডাইনি সন্দেহে হত্যার ঘটনা ঘটেছে আড়াই হাজার।’
কিন্তু বাংলাদেশে ছেলেধরা সন্দেহে মানুষ মারার মহামারির প্রেক্ষাপটে আমার এখন নবারুণ ভট্টাচার্যের মতো করে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে:
আটজন মৃতদেহ
চেতনার পথজুড়ে শুয়ে আছে
আমি অপ্রকৃতিস্থ হয়ে যাচ্ছি
আট জোড়া খোলা চোখ আমাকে ঘুমের মধ্যে দেখে
আমি চিৎকার করে উঠি
আমাকে তারা ডাকছে অবেলায় উদ্যানে সব সময়
আমি উন্মাদ হয়ে যাব
আত্মহত্যা করব
যা ইচ্ছা চায় তাই করব।
আমার অপ্রকৃতস্থ লাগছে। শুধু ছেলেধরা সন্দেহে মানুষ পিটিয়ে মারছে মানুষ, এই জন্য নয়। আমি পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছি, অসহায় বোধ করছি সামাজিক মাধ্যমে আমার নিজের বন্ধুদের অনেকের বক্তব্য দেখে।
আমার যে বন্ধুটি গান করেন, যে বন্ধুটি কবিতা লেখেন, যে বন্ধু টেলিভিশন সাংবাদিকতা করেন, যে বন্ধু মানবাধিকার আন্দোলন করেন, তাঁরা পর্যন্ত লিখছেন, এই রকমের পোস্ট:
১. ধর্ষণকারীকে এই রকমভাবে গণপিটুনি দাও।
২. অমুকের মুখে দলা দলা থুতু দিই। তার প্রতি শুধুই ঘৃণা।
৩. অমুককে রিমান্ডে নিয়ে চিকন বেত দিয়ে পেটাতে থাকো।
৪. অমুক অপরাধীকে ক্রসফায়ারে দাও।
ওপরে আমি যে ধরনের ফেসবুক স্ট্যাটাসের উদাহরণ দিলাম, তাতে আমরা বিচারের আগেই অপরাধী কে, তা শনাক্ত করে ফেলছি, অপরাধের মাত্রা কী তা–ও নির্ধারণ করে ফেলছি এবং অপরাধীর শাস্তি কী হওয়া উচিত, তা–ও বলে দিচ্ছি। আর সেসব শাস্তি নিষ্ঠুর শারীরিক শাস্তি।
এই উন্মত্ততার কালে কে বলবে যে, কোনো অপরাধীকেই শারীরিক নিষ্ঠুর শাস্তি দেওয়া যায় না। রিমান্ডে নিয়ে সাত খুনের আসামিকেও প্রহার করা যায় না। বিনা বিচারে কাউকে হত্যা করা যায় না, শাস্তি দেওয়া যায় না, বিচারের রায় না হলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপরাধীও বলা যায় না। আমরা যখন দেশপ্রেমের দৃষ্টিকোণ থেকে কাউকে অপরাধী বলে চিহ্নিত করে তার মুখে দলা দলা থুতু দেওয়ার কথা প্রকাশ্যে দেয়ালে লিখে প্রচার করি, সেই মানসিকতাই ব্যক্তি থেকে সমষ্টিতে ছড়ায় জিঘাংসা হয়ে, রিরংসা হয়ে; সমাজে গণপিটুনি হয়; গণধর্ষণ হয়। এ আমার পাপ, এ তোমার পাপ।
মব বা উন্মত্ত জনতার মতো বিপজ্জনক আর কিছুই হতে পারে না।আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রশিক্ষণের পাঠ্যসূচিতে এসব পড়ানো হয়, এ নিয়ে অনেক গবেষণা বিদেশে আছে।
এখন আমরা এই উন্মত্ত জিঘাংসু জনতার হিংস্রতার নিষ্ঠুর রূপ দেখে দুঃখে–কষ্টে, অসহয়তায় স্তব্ধ হয়ে যাচ্ছি। কিন্তু ফেসবুকে কিংবা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও যে মব বা জনতার উন্মত্ততা এসে ভিড় করে, একজন আরেকজনের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর বেশি বিষোদ্গারমূলক স্ট্যাটাস দেওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে, সেটা নিয়েও গবেষণা হওয়া উচিত। যে উন্মত্ত জনতা একজন ভর্তিচ্ছু সন্তানের মাকে স্কুলের সামনে পেটায়, আর যে জনতার একেকজন প্রতিনিধি নির্জনে নিজের নিরাপদ চৌহদ্দিতে বসে মোবাইল ফোনে কিংবা ল্যাপটপে মানুষকে পেটানোর, অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড প্রকাশ্যে কার্যকর করার, বিচারের আগেই অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ক্রসফায়ারে দেওয়ার দাবি তোলেন, বিচারকের কাজ নিজেই সেরে ফেলেন, তাঁদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়? এখন দেখা যাচ্ছে, আমাদের প্রত্যেকের মধ্যে একজন করে নিষ্ঠুর হন্তারক বসে আছে।
এই ধুলায় অন্ধকার বিবেচনাহীন উন্মত্ততার সময়ে আমাদের কর্তব্যগুলোকে তালিকাভুক্ত করার চেষ্টা করি:
১. সেতুতে মাথা লাগবে, এই গুজবের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক প্রচারণা চাই।
২. ছেলেধরা সন্দেহে তো বটেই, কোনো কারণেই কেউ কারও গায়ে হাত তুলবেন না; পকেটমার, চোর, ডাকাত, দুর্ঘটনাকারী চালক কারও গায়েই হাত তোলা যাবে না; এটা নিজে বিশ্বাস করতে হবে এবং তা প্রচার করতে হবে।
৩. যেখানে যেখানে গণপিটুনির ঘটনা ঘটছে, সেখানে অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতো তো হবেই, তার আগে তাদের বোধোদয় ঘটানোর চেষ্টা করতে হবে এবং সেই বোধোদয়ের প্রচার করতে হবে।
কিন্তু আমরা নিজেরা কী করব? ঘৃণা নয়, আসুন ভালোবাসা প্রচার করি। কেবল ক্যারিয়ার কেবল আত্মোন্নতির কথা আমরা শোনাচ্ছি আমাদের সন্তানদের। তাদের বিজনেস, আইটি পড়াচ্ছি। কিন্তু তার হৃদয়টাকে কোমল করা, তার ভেতরে মানবিকতা ও মনুষ্যত্ব জাগ্রত করার কথা কেউ বলছি না। সে যেন ঝরা পালকের বেদনাও অনুভব করে, সে যেন এমনভাবে পা ফেলে যেন মাটির বুকেও আঘাত না লাগে; সে যেন একটা গাছের জন্য ফুলের জন্য সবুজ ঘাসের ওপরে শিশিরবিন্দুটির জন্য মমতা বোধ করে। তা নাহলে সে লাভ মুনাফার পেছনে ছুটতে ছুটতে বন ধ্বংস করবে, নদী ধ্বংস করবে, বিশ্বযুদ্ধ বাধিয়ে দেবে। হৃদয়ের চেয়ে বড় কোনো মারণাস্ত্র তো নেই।
আসুন ফেসবুকেও আমরা ভালোবাসার কথা বলি। আইন হাতে তুলে না নেওয়ার কথা বলি। বিচার এড়িয়ে শাস্তির বিরুদ্ধে কথা বলি। শারীরিক শাস্তির বিরুদ্ধে কথা বলি। নিষ্ঠুরতার বিরুদ্ধে কথা বলি। মানুষকে অপমান করে কথা বলা বন্ধ করি।যখন সভ্য পৃথিবীতে একটা সাপকেও মারা যায় না, বাঘ মারা যায় না, কুকুর–বিড়ালকে মারার কথা সভ্য মানুষেরা কল্পনাও করতে পারে না, তখন আমরা মানুষকে মারার কথা কীভাবে বলতে পারি!
আমাদের সমাজে গভীর গভীরতর অসুখ। আমরা কবে এ রকম নির্লিপ্তি অর্জন করলাম যে দেশের বহু জায়গায় ভয়াবহ বন্যার সময়ে কেউ ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার কথা বললাম না! উদ্যোগ নিলাম না! সবাই মিলে এখন বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর কর্মযজ্ঞ শুরু করা গেলেও গুজবের প্রকোপ কমতে পারে।
- প্রস্রাবের যে সমস্যা মূত্রথলির রোগের লক্ষণ
- জেনে নিন খাবার স্যালাইনের সঠিক ব্যবহার
- প্রাণ জুড়াতে কাঁচা আমের আইসক্রিম
- ফোনের বিরক্তিকর বিজ্ঞাপন বন্ধ করবেন যেভাবে
- সালমান খানের বাড়ির বাইরে গুলি: অভিযুক্তের আত্মহত্যা
- থাইল্যান্ডের সঙ্গে অংশীদারত্বের নতুন যুগের সূচনা হয়েছে
- রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে থাইল্যান্ড সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে
- অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী ডিক্টেটর মিলিটারির পকেট থেকে বের হয়নি আওয়ামী লীগ
- বাংলাদেশের রেল উন্নয়নে সহযোগিতায় আগ্রহী রাশিয়া
- এআই প্রযুক্তিতে চলবে সরকারি অফিস
- সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনে বাংলাদেশকে ১২১ মিলিয়ন ডলার দিচ্ছে এডিবি
- চাকরিতে প্রবেশের বয়স ৩৫ করার সুপারিশ
- সংশোধন করা হচ্ছে শ্রম আইন
- রেডিয়েশন প্রয়োগে ঘরেই সংরক্ষণ করা যাবে পেঁয়াজ
- চিকিৎসকরা অফিস টাইমে হাসপাতালের বাইরে গেলে ব্যবস্থা
- প্রবৃদ্ধির দৌড়ে চীন মালয়েশিয়ার চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ
- গণতন্ত্র দখলকারীদের থেকে এখন গণতন্ত্রের সবক শুনতে হয়
- দেশের গণমাধ্যমে ৩ গুণ বেড়েছে ভুয়া খবর
- আমাদের ইভিএম এর ত্রুটি কেউ প্রমান করতে পারেনি-ইসি মো. আলমগীর
- উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেই
- গৌরনদীতে ৪ কেজি গাঁজা ও ১০৩ পিচ ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার
- ভোলায় কোস্ট গার্ডের ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পেইন ও ঔষধ সামগ্রী বিতরণ
- ইলিশ শিকারে নেমেছে জেলেরা, উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশা
- র্যাবের অভিযানে শেবাচিম থেকে দালাল চক্রের ২৫ সদস্য আটক
- প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তা পরিচয়ে প্রতারণা, যুবক গ্রেপ্তার
- ‘বি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা শুক্রবার, পরীক্ষার্থী প্রায় ৯৫ হাজার
- অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা অবৈতনিক হচ্ছে
- আন্তর্জাতিক কার্বন ক্রেডিটিংয়ের মাধ্যমে আয় সম্ভব : পরিবেশমন্ত্রী
- শেষ হলো ইউরিয়া সার কারখানার সম্ভাব্যতা সমীক্ষা
- দেশের বিভিন্ন স্থানে মহান মে দিবস পালিত
- ভোলায় জেলা প্রশাসনের ঈদ সামগ্রী পেল ৩০ পরিবার
- ভোলায় অনুষ্ঠিত হলো প্রাণী প্রদর্শনী মেলা
- ভোলায় উদ্যোক্তাদের তিনদিনের ঈদমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীদের ঢল
- দুর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের সচেতনতা ও সামর্থ্য বাড়াতে হবে
- বদহজম-পেটে যন্ত্রণা অগ্ন্যাশয়ের ক্যানসারের লক্ষণ নয় তো?
- ভোলায় ছাত্রলীগের বৃক্ষরোপন কর্মসূচি পালিত
- হার্টে হলদেটে ছোপ কেন হয়, কীসের লক্ষণ?
- ব্রাজিলকে সরাসরি তৈরি পোশাক নেওয়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর
- পটুয়াখালী ইপিজেডের জমি হস্তান্তর, ১৩৫০ মিলিয়ন বিনিয়োগের প্রত্যাশা
- জনগণের সেবা নিশ্চিত করতে পারলে ভোটের চিন্তা থাকবে না
- মাত্র ৪ উপকরণে ঘরেই তৈরি করুন কোণ মেহেদি
- কলাপাড়ায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড
- বেসরকারি মাদ্রাসার শিক্ষকরাও বদলির সুযোগ পাচ্ছেন
- ভোলায় শপথ নিলেন তিন ইউপি চেয়ারম্যান
- পরিবর্তন হলো ২৪৭ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম
- ঈদের রেসিপি কবুতরের রোস্ট
- লিটনের সমস্যাটা মানসিক, এখান থেকে বের হতে হবে: সুজন
- বঙ্গবন্ধু সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা টোল আদায়
- বিভেদ মেটাতে মাঠে আওয়ামী লীগ নেতারা
- গরমে স্বস্তি পেতে ইফতারে শসা-লেবুর জুস