• শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

  • || ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি শারীরিক ও মানসিক বিকাশে খেলাধুলা গুরুত্বপূর্ণ: প্রধানমন্ত্রী বিএনপির বিরুদ্ধে কোনো রাজনৈতিক মামলা নেই: প্রধানমন্ত্রী স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে পশুপালন ও মাংস প্রক্রিয়াকরণের তাগিদ জাতির পিতা বেঁচে থাকলে বহু আগেই বাংলাদেশ আরও উন্নত হতো মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার প্রতি নজর রাখার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

ভর্তুকির বকেয়া শোধ বন্ডে

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪  

চলমান অর্থসংকটের কারণে দীর্ঘদিন সময়মতো ভর্তুকি দেওয়া হয়নি। এতে বড় অঙ্কের বকেয়া অর্থের বোঝা এখন সরকারের কাঁধে। বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সার, প্রণোদনাসহ বিভিন্ন খাতের ভর্তুকির অর্থ পরিশোধ করতে পারেনি সরকার। এ পরিস্থিতিতে ভর্তুকি পরিশোধে বিকল্প পথ খুঁজে নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

নগদ অর্থের সংকট কাটাতে এখন সরকারের বড় হাতিয়ার হিসেবে কাজ করছে স্পেশাল ট্রেজারি বন্ড। সব মিলিয়ে ভর্তুকির বিপরীতে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৭৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করেছে সরকার। বর্তমানে অর্থসংকটে রয়েছে ভর্তুকির সুবিধাভোগী প্রতিষ্ঠানগুলো। কিছু খাতে ভর্তুকির বকেয়া রয়েছে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে।

বিকল্প উপায় হিসেবে বিশেষ ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে ভর্তুকি পরিশোধ করে তাদের জন্য বিশেষ সুবিধার ব্যবস্থা করে দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে কয়েক দফায় বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। ভর্তুকিতে সরকারের বকেয়া অর্থের বড় অংশ বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাতে। এর বাইরে সার, নগদ সহায়তা ও সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বিক্রিসহ বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার।

বাজেট প্রণয়নের সময় পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল, সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী চলতি অর্থবছরের মধ্যেই বকেয়াসহ ভর্তুকি পরিশোধ করা হবে। কিন্তু লক্ষ্যমতো রাজস্ব আদায় না হওয়ায় পর্যাপ্ত অর্থের সংস্থান হয়নি। ফলে অর্থবছরের সাত মাস পার হয়ে গেলেও প্রয়োজনীয় পরিমাণ অর্থ ছাড় সম্ভব হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বিশেষ ট্রেজারি বন্ডের মাধ্যমে এখন একদিকে যেমন নগদ অর্থের সংকট সমন্বয় হচ্ছে, অন্যদিকে সরকার অর্থ পরিশোধের জন্য আরো বেশি সময় পাচ্ছে। আগামীতে সরকারের আর্থিক অবস্থা ভালো হলে বাজেট থেকেই ধীরে ধীরে এসব বকেয়া পরিশোধ করার পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধের জন্য ব্যাংকগুলোকে ছয় হাজার ৫৬৫ কোটি টাকা বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করেছে। পাশাপাশি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। ছয় ভাগের এক ভাগ নগদ অর্থ দিলেও বেশির ভাগই পরিশোধ হচ্ছে বন্ডে। এই মুহূর্তে সরকারের বকেয়া অর্থ পরিশোধের অন্যতম উপায় বিশেষ ট্রেজারি বন্ড।

সম্প্রতি সরকারি-বেসরকারি খাতের ২৪টি ব্যাংকের অনুকূলে ছয় হাজার ৫৬৫ কোটি টাকার বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর ৬০টি গ্রাহক বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভর্তুকি বাবদ এসব বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। বন্ডের সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি সুদহারের ভিত্তিতে। বর্তমানে এ হার ৮ শতাংশের ওপর। এ বন্ডের মেয়াদ আট থেকে ১০ বছর নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে সম্প্রতি অর্থ বিভাগের ট্রেজারি ও ঋণ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে বিদ্যুৎ বিভাগকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

চিঠিতে বলা হয়েছে, বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী (আইপিপি) এবং সার আমদানিকারকদের কাছ থেকে ব্যাংকে জমা হওয়া বকেয়া নিষ্পত্তির জন্য এখন বিশেষ বন্ড ইস্যু করছে সরকার। বিদ্যুতে ভর্তুকির অংশ হিসেবে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদন সংস্থাগুলোর বকেয়া ব্যাংক দায় পরিশোধে এই সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়, ঋণদাতা ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট বিদ্যুৎকেন্দ্র ও বিদ্যুৎ বিভাগের মধ্যে বিশেষ ট্রেজারি বন্ডসংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি খাতের ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার্স (আইপিপি), রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য এক হাজার কোটি টাকা সম্প্রতি ছাড় করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এই অর্থ দিয়ে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) এসব কেন্দ্রের ২০২৩ সালের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসের ভর্তুকি বাবদ পাওনার আংশিক পরিশোধ করবে।

অর্থ ছাড়পত্রটি বিদ্যুৎ বিভাগে পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ। এতে বলা হয়, এরই মধ্যে আইপিপি, রেন্টাল ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের ২০২২ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বকেয়া বিলের পুরোটা এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারির আংশিক নগদ ও বিশেষ বন্ডের মাধ্যমে পরিশোধ করা হয়েছে। এর পরিমাণ দুই হাজার ১৩২ কোটি টাকা। জানুয়ারির বাকিটুকু অর্থাৎ ৩৬৯ কোটি ৮৬ লাখ এবং ফেব্রুয়ারির দুই হাজার ৬৩৭ কোটি টাকার আংশিক ৬৩০ কোটি ১৪ লাখ টাকা পরিশোধের জন্য মোট এক হাজার কোটি টাকা বিপিডিবির অনুকূলে ছাড় করা হলো।

মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের অর্থবছরের বকেয়াসহ চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের নভেম্বর পর্যন্ত সার ও বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বকেয়া দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে মোট ১৬ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজেট থেকে পিডিবিকে বরাদ্দ দেওয়া হয় সাত হাজার কোটি টাকা। বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তাদের ঋণের বিপরীতে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ৯ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকার বিশেষ বন্ড দেওয়া হয়েছে।

এর আগের মাসেও সার ও বিদ্যুৎ খাতে সরকারের ভর্তুকির বিপরীতে বিশেষ বন্ড ইস্যু করা হয়। এ ক্ষেত্রে সারে ভর্তুকির বিপরীতে পাঁচ ব্যাংকের অনুকূলে প্রায় সাত হাজার কোটি টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।  

অন্যদিকে গত মাসে বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকির বিপরীতে তিনটি ব্যাংকের অনুকূলে তিন হাজার ১১০ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বিশেষ বন্ড ইস্যু করা হয়েছে। এ হিসাবে সব মিলিয়ে ভর্তুকির বিপরীতে এই পর্যন্ত ১৬ হাজার ৬৭৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকার বন্ড ইস্যু করা হয়েছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সার ও বিদ্যুৎ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোকে অর্থায়ন করেছে ব্যাংক। তাই ব্যাংকগুলোর অনুকূলে সরকারের ভর্তুকির অংশ বন্ড হিসেবে ইস্যু করা হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় সমন্বয় হয়ে যাবে। এর মাধ্যমে ব্যাংকের মেয়াদোত্তীর্ণ ঋণগুলো খেলাপি হওয়ার হাত থেকে বেঁচে যাবে এবং এর বিপরীতে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে না। পাশাপাশি ব্যাংকগুলো বন্ডের অর্থের সমপরিমাণ বিধিবদ্ধ জমার (এসএলআর) বাধ্যবাধকতাও পূরণে ব্যবহার করতে পারবে। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো বিশেষ এই বন্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে জমা রেখে রেপোর মাধ্যমে তারল্য সুবিধাও নিতে পারবে। অন্যদিকে বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বকেয়া বিলের পুরো অর্থ এ মুহূর্তে না পেলেও বন্ডের সমপরিমাণ অর্থ ব্যাংকের ঋণ হিসেবে পরিশোধ হয়ে যাবে। এতে খেলাপি হওয়ার হাত থেকে যেমন রেহাই পাবে, তেমনি প্রতিষ্ঠানগুলোর দায় কমে আসবে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, প্রাথমিকভাবে বকেয়া ভর্তুকিতে সারে ১০ হাজার ৫০০ কোটি ও বিদ্যুতে ১২ হাজার কোটি টাকা। সব মিলিয়ে ২২ হাজার ৫০০ কোটি টাকার বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করার জন্য সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ৪০ ব্যাংকের অনুকূলে ইস্যু করা হচ্ছে। বিশেষ বন্ড ও নগদ পরিশোধের মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত বিপিডিবির কাছে থাকা আইপিপিগুলোর পাওনা অর্থ শোধ করা হয়েছে।

এর আগেও সরকারের এ ধরনের বন্ড ইস্যুর নজির রয়েছে। বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) দায়ের বিপরীতে একসময় ব্যাংকের অনুকূলে বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যু করেছিল সরকার।

গত অর্থ বছরে  বিদ্যুৎ খাতে ৪২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা, জ্বালানি খাতে ছয় হাজার ২৩২ কোটি, কৃষি খাতে ২৬ হাজার ৫৫ কোটি ও সারে ২৫ হাজার ৭৬৬ কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়েছে সরকার। আর চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে ভর্তুকি বাবদ এক লাখ ১০ হাজার ৯৮৭ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বিদ্যুতের ভর্তুকি বাবদ বরাদ্দ রাখা হয় ৩৬ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ-জ্বালানিতে ভর্তুকি কমিয়ে আনতে কয়েক দফা দামও বাড়ানো হয়।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, রাজস্ব আয় বাড়াতে না পারার কারণে সরকারের হাতে নগদ অর্থসংকট রয়েছে। এ কারণে বন্ডে পরিশোধ ছাড়া বিকল্প নেই। তবে বন্ডে পরিশোধের কারণে সুদ পরিশোধের চাপে থাকবে সরকার।

জাহিদ হোসেন বলেন, বন্ডে বকেয়া ভর্তুকি পরিশোধ করা একভাবে টাকা ছাপিয়ে অর্থায়নের মতো। এই বন্ড রেখে নগদ অর্থের তারল্য সংকট ঘাটতি মেটাচ্ছে ব্যাংকগুলো। ফলে এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির বিপরীত হয়েছে। কারণ বাজারে নতুন করে ১৬ হাজার কোটি টাকার বেশি অর্থ এসেছে। এর প্রভাব বাজারে পড়বে।