• বুধবার ০১ মে ২০২৪ ||

  • বৈশাখ ১৮ ১৪৩১

  • || ২১ শাওয়াল ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
চীন সফরে যাওয়ার আগে জুলাইয়ে ভারত সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী ছয় দিনের সফর শেষে দেশে ফিরলেন প্রধানমন্ত্রী হিট অ্যালার্টের মেয়াদ বাড়লো আরও ৩ দিন সরকার আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বদ্ধপরিকর: শেখ হাসিনা কর্মক্ষেত্রে স্বাস্থ্য ও সুরক্ষাবিধি নিশ্চিতে কাজ করতে হবে বাংলাদেশ-থাইল্যান্ডের মধ্যে সহযোগিতা বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে দেশ ও জনগণের উন্নয়নে কাজ করতে হবে: নেতাকর্মীদের প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধ অবশ্যই বন্ধ হওয়া উচিত : প্রধানমন্ত্রী থাইল্যান্ডে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সংবর্ধনা থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী রাজনৈতিক সম্পর্ক জোরালো হয়েছে ঢাকা ও দোহার মধ্যে বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কাতারের বিনিয়োগের আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কাতার আমিরের বৈঠক ঢাকা সফরে কাতারের আমির, হতে পারে ১১ চুক্তি-সমঝোতা জলবায়ু ইস্যুতে দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি নিয়েছে বাংলাদেশ দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় বাংলাদেশ সর্বদা প্রস্তুত : প্রধানমন্ত্রী দেশীয় খেলাকে সমান সুযোগ দিন: প্রধানমন্ত্রী খেলাধুলার মধ্য দিয়ে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে: রাষ্ট্রপতি

প্রিন্সেস ডায়ানা: যে জীবন রূপকথার

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ২১ জানুয়ারি ২০২০  

১৯৯৭ সালের আগস্ট মাসের ৩১ তারিখে রাত সাড়ে বারোটার কাছাকাছি সময়ে মার্সিডিজ এস-২৮০ ব্র্যান্ডের একটি গাড়ি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে প্যারিসের অ্যালমা ব্রিজের নিচে টানেলের পিলারে সজোরে আঘাত হানে।

সে গাড়িতেই ছিলেন তর্কযোগ্যভাবে গত শতাব্দীর সবচাইতে বিখ্যাত রাজবধূ প্রিন্সেস ডায়না। ছিলেন ডায়ানার দেহরক্ষী ট্রেভর জেনিস।

সেই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় একমাত্র ট্রেভর জেনিস ছাড়া কেউ প্রাণে বাঁচেনি।

তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী ধারণা করা যায় গাড়ির পেছন পেছন ধাওয়া করা নাছোড়বান্দা পাপারাজ্জিদের পেছনে ফেলার জন্যই গাড়িচালক দ্রুতগতিতে গাড়ি চালান এবং নিয়ন্ত্রণ হাড়িয়ে ফেলেন। কিন্তু আজো এটা রহস্যাবৃত রয়ে গেছে প্রিন্সেস ডায়ানার মৃত্যু কী নিছক দুর্ঘটনা নাকী হত্যাকাণ্ড? গাড়িচালককে দায়ী করা হয় মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানোর জন্য। কিন্তু ডায়ানা এবং দোদি ফায়েদ কারুরই কেন সিটবেল্ট বাঁধা ছিলো না? সিটবেল্ট কি সাভোট্যাজ করা ছিল? সিটবেল্ট বাঁধা থাকলে অন্তত ডায়ানা বেঁচে যেতে পারতেন। গুজব ছড়িয়েছিলো ডায়ানা হয়তো অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তার প্রেমিক দোদি ফায়েদের সন্তান ছিল ডায়ানার গর্ভে। তবে কি ইংল্যান্ডের রাজপরিবার কর্তৃক-ই এই হত্যাকাণ্ড ঘটে?

ফ্রান্স সুইজারল্যান্ড সীমান্তের আল্পস পর্বতের মতোই তুষার ঢাকা ধূসর কুয়াশার মতোই রহস্যে মাখা এ প্রশ্নের জবাব আজো সবার অজানা।

কিন্তু এ পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের মনে প্রিন্সেস এক অসামান্য মানুষ হিসেবে বেঁচে আছেন। কিন্তু কেনো এই অবাধ কৌতূহল সবার লেডি ডায়ানাকে ঘিরে? কেনো পৃথিবীব্যাপী সবাই রাজপরিবারকে তোয়াক্কা না করেও লেডি ডায়ানাকে বিশ্বাস করেছেন? ভালোবেসেছেন নিজেদের একজন ভেবে?

ডায়ানার জন্ম ১৯৬১ সালের ১ জুলাই। ডায়ানার জন্ম ব্রিটিশ এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ডায়ানা বেড়ে উঠে সানড্রিনঘাম প্রদেশের পার্ক হাউসে। লেডি ডায়না তার শিক্ষাজীবন কাটায় ইংল্যান্ড এবং সুইজারল্যান্ডে। তিনি পৃথিবীব্যাপি প্রসিদ্ধি লাভ করে ১৯৮১ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে তার বাগদান হয়।

লেডি ডায়ানার চার্লসের সঙ্গে প্রথম দেখা হয় ১৯৭৭ সালে। যখন ডায়ানার বয়স মাত্র ১৬ বছর। তখন প্রিন্স চার্লস ডায়ানার বড় বোন লেডি সারাহ’র সঙ্গে ডেট করছিলেন। এর কিছুদিন পরই একটি সপ্তাহান্তিক গ্রীষ্মের অবকাশে অতিথি হিসেবে এসেছিলেন চার্লস ডায়না দুজনই। সেই দেখাতেই চার্লস ডায়ানাকে নিয়ে ভাবতে শুরু করেন। ডায়ানাকেই রাজপরিবারের রাজবধূ করে নেয়ার সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটি নেন। চার্লসের এই ভালো লাগার পরিণতিই বোধহয় ডায়ানাকে এনে দেয় হাজার হাজার মানুষের ভালোবাসা।

প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানার সম্পর্কটা আরো কিছুটা পরিণত হয় এক জলযাত্রা ভ্রমণে। এর কিছুদিন পরই এক আমন্ত্রণ পত্র পেয়ে রাজপরিবারে যান ডায়ানা। সময়টা তখন ১৯৮০ সালের নভেম্বর মাস। লেডি ডায়ানাকে আন্তরিকভাবে অভিবাদন জানান কুইন এবং দ্য ডিউক অব এডিনবার্গ।

পরবর্তীকালে প্রিন্স চার্লস ডায়ানাকে প্রপোজ করার কিছুদিন পরই জনসমক্ষ আড়ালে বাগদান হয় ডায়ানা-চার্লসের। ২২ বছর বয়সী ডায়ানা ওয়েলসের প্রিন্সেস হয়ে উঠেন যখন তার বিয়ে হয় প্রিন্স অব ওয়েলস চার্লসের সঙ্গে।

প্রিন্স চার্লস ও ডায়ানার বিয়ের এই শুভক্ষণকে বর্ণনা করা হয় Fairytale wedding নামে। বিশ্বের প্রায় ৭৫০ মিলিয়ন দর্শক এটি টেলিভিশনে উপভোগ করেন এবং ৬০০,০০০ দর্শক রাস্তায় নেমে আসেন প্রিন্স এবং প্রিন্সেসকে এক নজর দেখার জন্য।

 

চার্লস-ডায়না বিবাহিত জীবনের শুরুর মিষ্টি দিনগুলো কাটে কেসিংটন প্যালেস এবং হাইগ্রোড হাউসে। প্রিন্সেস ডায়ানার প্রথম গর্ভধারনের কথা প্রকাশ হয় ১৯৮১ সালের ৫ নভেম্বর। ১৯৮২ সালের জানুয়ারি মাসে গর্ভধারণের ঠিক ১২ সপ্তাহের মাথায় ডায়ানা নিজ বাসস্থানের সিঁড়ি থেকে পড়ে যান। এতে ডায়ানা প্রচণ্ড আঘাত পেলেও ভ্রূণ ছিলো আনইনজুরড। তবে পরবর্তীতে ডায়ানা স্বীকার করেন তিনি এই কাজটা স্বেচ্ছাকৃত ভাবে করেছিলেন। কারণ হিসেবে জানা যায় ডায়ানা নিজে ওই সময়টায় খানিকটা উপেক্ষিত অনুভব করছিলেন এই সত্যি প্রমাণের জন্যই তিনি কাজটি করেছেন।

ডায়ানা ছিলেন এমন অদ্ভুত এবং খানিকটা একগুঁয়ে স্বভাবের একজন মানুষ। নিজেকে অবহেলার পাত্র হিসেবে মেনে নিতে পারতেন না কখনোই। তখনকার সময়ের চিরচেনা ডায়ানার আধুনিকতা আজো সারা বিশ্ব জুড়ে অসংখ্য মানুষের মুগ্ধতা। অত্যন্ত আধুনিক এই রাজবধূ ছিলেন সেসময়ের সবচেয়ে জনপ্রিয়। এমনকি ডায়ানার জনপ্রিয়তা ছাড়িয়ে গিয়েছিলো প্রিন্স চার্লসের থেকেও। ডায়ানা জনপ্রিয় ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে। যাদের কাছে গেলে ডায়ানা তাদের সঙ্গে মিশে যেতেন সহজে। এই সহজতর সম্পর্কই ডায়ানাকে বিখ্যাত করে তুলেছিল পৃথিবীব্যাপী।

ধারণা করা হয় প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে ডায়ানার সম্পর্কের চিড় ধরে এ কারণেই।

১৯৮২ সালের ২১ জুন চার্লস-ডায়ানার প্রথম সন্তান প্রিন্স উইলিয়ামের জন্ম হয়। এর দুবছর পর জন্ম প্রিন্স হ্যারির, ১৯৮৪ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর। কিন্তু চার্লস বরাবরই ডায়ানার কাছে একটা রাজকন্যা চাইতো। কিন্তু ডায়ানা ততোদিনে জেনে গিয়েছিলো তার গর্ভের সন্তান উইলিয়ামের মতোই আরো একটি ছেলে সন্তান। তবে ডায়ানা এ সম্বন্ধে রাজপরিবারের কাউকে কিছু জানাননি। এমনকি প্রিন্স অব ওয়েলসকেও না। পরবর্তীতে হ্যারির জন্ম চার্লসকে খুব একটা সুখকর অনুভূতি দেয়নি। ডায়ানার অটোগ্রাফিতে ডায়ানা বলছিলেন, ‘‘চার্লস হ্যারিকে দেখে শুকনো মুখে বলছিল ও একদম তোমার মত দেখতে হয়েছে। এমনকি ওর সোনালি চুল ও।’’

সেসময় একটি মিথ্যে গুজব ছড়িয়েছিল ডায়ানাকে নিয়ে। হ্যারি ডায়ানা-জেমস হেয়ুইতের ছেলে বলে ভাবছিল অনেকে। তবে কিছুদিন পর অনেক তথ্য অনুযায়ী জানা যায় ডায়ানা-হেয়ুইতের প্রেম হয়েছিল হ্যারির জন্মের বেশকিছু দিন পরে।

ডায়ানার কাছে ডায়ানের সন্তানদের চাইতে প্রিয় কিছু ছিল না। তিনি তার সময়ের বেশিরভাগ সময়টুকুই দিতেন তার দুই ছেলেকে। ডায়ানা বলতেন, ‘‘আমি আমার সবটুকু দুঃখ, একাকীত্ব ভুলে থাকতাম আমার সন্তানদের দিকে তাকিয়ে।”

বিয়ের ৫ বছরের মাথায় চার্লস ডায়ানা এ দম্পতীর মতের অসামঞ্জস্যতা ও ১৩ বছর বয়সের পার্থক্যের অমিল খুব প্রকটভাবে দেখা দিতে থাকল। ওই সময়টাতেই চার্লস তার সাবেক প্রেমিকা ফ্যামিলা পারকারের সঙ্গে প্রেম শুরু করেন। এবং পরবর্তীতে ডায়ানাও জেমস হেয়ুইতের সঙ্গে প্রেমে জড়ান।

১৯৯৬ সালের ২৮ আগস্ট প্রিন্সেস ডায়ানা এবং প্রিন্স চার্লসের অফিশিয়ালি ডিভোর্স হয়ে পড়ে। কিন্তু আলোচনা থেকে তবু ছিটকে যাননি এই আধুনিক রাজবধূ। তার প্রতি কৌতূহল ছিল সেই সময়ের পুরোটা জুড়ে। এমনকি এখনো তাকে নিয়ে আগ্রহের ছিটেফোঁটা কমেনি ভক্তদের।