• রোববার ১৯ মে ২০২৪ ||

  • জ্যৈষ্ঠ ৪ ১৪৩১

  • || ১০ জ্বিলকদ ১৪৪৫

আলোকিত ভোলা
ব্রেকিং:
ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস আগামীকাল ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বিচারকদের প্রতি আহ্বান রাষ্ট্রপতির আহতদের চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভূমিকা চান প্রধানমন্ত্রী টেকসই উন্নয়নের জন্য কার্যকর জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা চান প্রধানমন্ত্রী বিএনপি ক্ষমতায় এসে সব কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেয় চমক রেখে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করল বাংলাদেশ শেখ হাসিনার তিন গুরুত্বপূর্ণ সফর: প্রস্তুতি নিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হজযাত্রীদের ভিসা অনুমোদনের সময় বাড়ানোর আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর বাংলাদেশ এআইকে স্বাগত জানায় তবে অপব্যবহার রোধে পদক্ষেপ নিতে হবে ছেলেরা কেন কিশোর গ্যাংয়ে জড়াচ্ছে কারণ খুঁজে বের করার নির্দেশ প্রযুক্তিজ্ঞান সম্পন্ন নতুন প্রজন্ম গড়ার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর এসএসসির ফল প্রকাশ, পাসের হার যত ছাত্রীদের চেয়ে ছাত্ররা পিছিয়ে, কারণ খুঁজতে বললেন প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে এসএসসির ফল হস্তান্তর জলাধার ঠিক রেখে স্থাপনা নির্মাণে প্রকৌশলীদের আহ্বান প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে টেকসই কৌশল উদ্ভাবনের আহ্বান যে পরিকল্পনা হউক, সেটা পরিবেশবান্ধব হতে হবে : প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল থেকে উন্নয়নই আওয়ামী লীগের মূল লক্ষ্য: প্রধানমন্ত্রী

১০ ডিসেম্বরের পর বিএনপি আসলে কী করতে চায়?

আলোকিত ভোলা

প্রকাশিত: ১৬ অক্টোবর ২০২২  

সম্প্রতি প্রকাশ্যে সরকার উৎখাতের হুমকি দিয়ে সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আমান উল্লাহ আমান। তিনি বলেছেন, ১০ ডিসেম্বরের পর দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের কথায় দেশ চলবে, অন্য কারো কথায় নয়। তার এ উক্তিকে দেশবিরোধী ও কাণ্ডজ্ঞানহীন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তারা মনে করেন, এ বক্তব্য উসকানিমূলক। এর মাধ্যমে সহিংসতারই ইঙ্গিত মিলছে, যা ২০১৪ ও ২০১৫ সালকে মনে করে দিচ্ছে।

এর আগে মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামালের প্রতি বিষোদ্গার করে সমালোচিত হয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। তার বক্তব্যকে ‘আক্রমণাত্মক, অসংবেদনশীল, অশোভনীয় ও কুরুচিপূর্ণ’ বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্টজনরা।

৮ অক্টোবর রাজধানীর সেগুনবাগিচায় জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের ৪৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে দেয়া বক্তৃতায় আমান বলেন, ‘প্রস্তুত হন, নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। কাঁচপুর সেতু, টঙ্গি ব্রিজ, মাওয়া সড়ক, আরিচা সড়ক, টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া, রূপসা থেকে পাথুরিয়াসহ পুরো দেশ বন্ধ করে দেয়া হবে।’

রাজপথে ফয়সালা হবে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এরই মধ্যে পাঁচজন রক্ত দিয়েছেন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে তারা বলে গেছেন, আমাদের রক্তের ঋণ তখনই শোধ হবে, যখন বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার হবে, যখন জনগণের ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা হবে। পাঁচজন কেন, যদি পাঁচ হাজার জনকেও শহীদ হতে হয়, এই দেশে শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন হবে না। প্রয়োজনে আমরা শহীদ হব, কিন্তু বাংলাদেশে শেখ হাসিনার অধীন কোনো নির্বাচন নয়। এই সরকারের বিদায় ঘটিয়ে আমরা ঘরে ফিরব।’

শুধু আমানই নয়, দলটির মধ্যম সারির কয়েকজন নেতাও এমন বিতর্কিত বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। ৯ অক্টোবর দলের কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী বলেন, শিগগিরই তারেক রহমান দেশে আসবেন। পরদিন দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় সমাবেশ হবে ‘আটলান্টিক মহাসাগরের’ মতো। এই সমাবেশে খালেদা জিয়া যাবেন।

সরকার পতনে একই রকম বক্তব্য দিচ্ছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও। প্রায় প্রতিটি সভা-সমাবেশে তিনি আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারের পতন ঘটানোর কথা বলছেন। যেখানে সবসময় নেতাকর্মীদের মাঠে থাকতে নির্দেশ দিচ্ছেন তিনি। দলের অন্য নেতারাও ‘লাঠিসোঁটা’ নিয়ে সবাইকে প্রস্তুত থাকতে বলছেন।

১০ ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এ দিনের কথা উল্লেখ করে আমানের বক্তব্যে উত্তাপ ছড়িয়েছে রাজনৈতিক মাঠেও। তার বক্তব্যের জের ধরে সামাজিক মাধ্যমেও সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। অনেকেই বিএনপির রাজনৈতিক সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এ নিয়ে বিএনপির ভেতরে এবং বাইরে সমালোচনা হচ্ছে।

এ ধরনের বক্তব্য আন্দোলনকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে মনে করছেন দলের দায়িত্বশীল একাধিক নেতা। এমনকি এসব বক্তব্য বিচক্ষণতার পরিচয় দেয় না বলেও মনে করছে বিএনপির প্রতি ইতিবাচক দলগুলো। এ বিষয়ে বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ও গণতন্ত্র মঞ্চের নেতা সাইফুল হক বলেন, এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করার সুযোগ তৈরি হয়। আন্দোলনেও বিভক্তি চলে আসতে পারে।

আর আওয়ামী লীগ বলছে, বিএনপি নেতারা হয়তো স্বপ্ন দেখছেন। না হলে এমন কথা বলতে পারেন না।

এদিকে এতিমদের টাকা আত্মসাতের দায়ে দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার পরিকল্পনায় সহযোগিতা ও শেখ হাসিনাকে গুপ্তহত্যার চেষ্টার দায়ে তারেক রহমানকে সাজা দিয়েছেন আদালত। বর্তমানে তিনি লন্ডনে পলাতক রয়েছেন।

এখন প্রশ্ন ওঠেছে সাজাপ্রাপ্ত হয়েও কীভাবে তারা দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেবেন?

ঢাকায় মার্কিন দূতাবাস ২০০৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এক গোপন তারবার্তায় তারেক রহমান সম্পর্কে লেখেন, ‘তারেক রহমান ব্যাপক মাত্রায় দুর্নীতির জন্য দায়ী, যা যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে...।’

এ ছাড়াও খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে নাইকো, গ্যাটকো ও বড়পুকুরিয়া দুর্নীতির মামলা রয়েছে। ২০০১ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত টানা পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন ছিল বাংলাদেশ। আর এ সময়ে ক্ষমতায় ছিল বিএনপি।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ বলেন, দেশ পরিচালনার বিষয়ে আমান উল্লাহ আমানরা যদি উল্টাপাল্টা স্বপ্ন দেখতে থাকেন, তাহলে সরকারকে ভাবতে হবে খালেদা জিয়ার প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে বদান্যতা দেখিয়েছেন, সেটির আদৌ প্রয়োজন আছে, নাকি তাকে আবার কারাগারে পাঠাতে হবে।

গত এক যুগে মাঠের যোগ্যতা পর্যালোচনা না করেই বিভিন্ন সময় হরতাল ডেকেছে বিএনপি। এরপর দলটির নেতারা যেমন ঘরে বসে ছিলেন, কর্মীরাও রাস্তায় নেমে আসেনি। কখনও কখনও রাজধানীর অলিগলিতে সাত-আটজন মিছিল নিয়ে নেমেছে। কয়েক মুহূর্তে তা আবার উধাও হয়ে গেছে। হরতাল ডাকার পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও নেতাকর্মীদের অনুপস্থিতি দেখা গেছে। সংবাদমাধ্যমের খবর বলছে, হরতাল ডেকে ঘরে বসেছিলেন বিএনপি নেতারা।

তবে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়াতে গাড়িতে আগুন দেয়া থেকে তারা বিরত থাকেনি। সব মিলিয়ে দলটির জন্য বুমেরাংও হয়েছে হরতাল। বিএনপির নেতৃত্বে বাংলাদেশে হরতালকেন্দ্রিক সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞ নতুন মাত্রা পেয়েছে।

আমানের ঘোষণার পর রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা সেই দিনগুলোর কথাই স্মরণ করেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ড. হারুন-অর-রশিদ সময় সংবাদকে বলেন, এটা কাণ্ডজ্ঞানহীন উক্তি। এ ধরনের বক্তব্য উসকানিমূলক, যা ২০১৪ ও ২০১৫ সালের মতো সহিংস কর্মকাণ্ডে ফিরে যাওয়ার ইঙ্গিতবাহী। কোনো রাজনৈতিক নেতার কাছ থেকে এমন বালখিল্য বক্তব্য অপ্রত্যাশিত।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি নেতাদের মধ্যে অনেকেই বিগত দিনে এমন দায়িত্বজ্ঞানহীন মন্তব্য করেছে। কিন্তু তা বাস্তবতার আলো দেখেনি। তাদের এই উক্তির মধ্যে নৈরাজ্যের বার্তা রয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক আবদুল মান্নান বলেন, ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন বক্তব্য দিয়েছেন আমান, যা বিএনপির অনেক নেতাও গ্রহণ করছেন না। আমানুল্লাহ আমান একজন সাধারণ কর্মী না। তিনি দায়িত্বশীল লোক। একজন জ্যেষ্ঠ নেতা। তিনি মন্ত্রীও ছিলেন। ডাকসুর ভিপি ছিলেন। কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে তার আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত।’

তার মতে, বিএনপির অনেক লোকই মনে করেন, এটা দলীয় কোনো সিদ্ধান্ত না। এ রকম মন্তব্য একেবারে দেশবিরোধী। কারণ দেশ চলে দেশের সংবিধান অনুসারে, কারও কথায় না। এসব কথা বলার অর্থ হচ্ছে রাজনৈতিক মাঠকে গরম করা, কর্মীদের চাঙা করা।

এরই মধ্যে টানা তিন মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা দেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগকে হটাতে রাজপথে আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করছে বিএনপি। চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহে মহাসমাবেশও করেছে দলটি। হাছান মাহমুদ বলেন, চট্টগ্রামে বিএনপি ‘ব্যর্থ সমাবেশ’ করে দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টির ছক এঁকেছে।

তিনি বলেন, বিএনপি তিন মাস হাঁকডাক করে মহাসমাবেশ নাম দিয়ে একটি ‘ফ্লপ’ সমাবেশ করেছে। সারা দেশ থেকে সন্ত্রাসীদের চট্টগ্রামে এনে হোটেল ভাড়া করে রেখেছে। পরদিন তাদের নিয়ে সমাবেশ করেছে। চট্টগ্রামে জব্বারের বলি খেলায় এর চেয়ে অনেক বেশি মানুষ হয়। সাধারণ মানুষের কোনো সম্পৃক্ততা এ সমাবেশে ছিল না।

এদিকে প্রায় ২০টি জেলায় বিক্ষোভ-সমাবেশ করতে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা সংবাদমাধ্যমে এসেছে। আহত হওয়ার পাশাপাশি ঘটছে প্রাণহানি।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির নেতাদের কথায় সরকারের পতন হবে না। এক যুগের বেশি সময় ধরে বিএনপির মহাসচিব তার দলের হতাশ নেতাকর্মীদের চাঙা করতে এমনটি বলছেন। এটি তাদের রাজনৈতিক বক্তব্য।

ওবায়দুল কাদের বলেন, গণঅভ্যুত্থান আর আন্দোলনের ভয় বিএনপি ১৪ বছর ধরে দেখিয়ে আসছে। তাদের এসব তর্জন-গর্জন মিডিয়া আর ফেসবুকে সীমাবদ্ধ। এ কথা বাংলাদেশের জনগণ ভালোই জানে। বাস্তবতার সঙ্গে বিএনপি নেতাদের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, বস্তুত দেশে গণঅভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি নেই।

বিএনপির নেতাদের কথায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও যে খুব একটা আশাবাদী হচ্ছেন তেমনটা না। শীর্ষ নেতৃত্বের হঠকারী সিদ্ধান্তের কারণে এখন আগের উৎসাহ-উদ্দীপনা হারিয়ে ফেলেছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতা পরিচয় গোপন রাখার শর্তে বলেন, কেন্দ্রের সিদ্ধান্তে আন্দোলন শুরুর পর নেতারা আর খোঁজ রাখেন না। তারা একেক সময় একেক সিদ্ধান্ত নেন। এসব কারণে কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নিপীড়ন বাড়ে। অনেকের বাড়িঘর ছাড়তে হয়। সরকারের ওপরও কোনো চাপ তৈরি হয় না।

এদিকে আন্দোলন কর্মসূচিতে যেসব নেতাকর্মী অংশগ্রহণ করছেন, তারা দলীয় পদ-পদবি ধরে রাখতে বা সামনে পাবেন– এমন আশায় অংশ নিচ্ছেন বলেই মনে করছে বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীদের একাংশ।