হত্যার পর মসজিদে এশার নামাজ পড়ে খুনি

ঢাকা থেকে অপহৃত শিশু মাদরাসা ছাত্র ইব্রাহিম হোসেনকে গাজীপুর মহানগরীর মীরেরগাঁও এলাকায় এনে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহত ওই ছাত্রের ফুফাতো ভাইকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।

শনিবার রাতে ঢাকায় হাজারীবাগ এলাকা তার বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তার নাম বনি আমিন। সে বরগুনা সদরের মাইঠা এলাকার আবুল কালাম আজাদের ছেলে।

র‌্যাব-১ এর গাজীপুর পোড়াবাড়ি ক্যাম্পের কোম্পানি কমান্ডার লে. কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর সালনা মীরেরগাঁও এলাকায় মাদরাসার পোশাক পরিহিত এক শিশুর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পথে ফেলে যাওয়া মাদরাসার আইডি কার্ডের মাধ্যমে নিহত শিশুর পরিচয় মিলে। পরে র‌্যাব বিষয়টির ছায়া তদন্ত শুরু করে। পরে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব জানতে পারে হত্যাকাণ্ডের হোতা রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকায় ভিকটিমের বাসায় আত্মগোপন করে আছে। এ সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে বনি আমিনকে গ্রেফতার করে। 

গ্রেফতার হওয়া বনি আমিনের বরাত দিয়ে ওই র‌্যাব কর্মকর্তা আরো জানান, বনি আমিন নিহত ভিকটিমের আপন ফুফাতো ভাই। ইব্রাহিম রাজধানীর হাজারীবাগ এলাকার ইকরা দারুল-উলুম মাদরাসার দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। তার বাবার নাম মনির হোসেন। সে বনি আমিনের আপন মামা। এ সম্পর্কের সূত্রে গত ২০১৬ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত বনি তার মামা মনির হোসেনের রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকার ক্রোকারিজের দোকান পরিচালনা করে আসছিল।

মামা মনির হোসেনের বাসায় থাকার সুবাদে বিভিন্ন সময় তার মামি মোসা. হালিমা বেগমের উপর বনি আমিনের মনে ক্রোধ সৃষ্টি হয়। এছাড়া বনি মামার বাসার থাকার সময় একটি মেয়ের সঙ্গে তার প্রেমের সর্ম্পক গড়ে ওঠে। প্রেমিকাকে দামি উপহার দেয়ার জন্য তার অনেক টাকার প্রয়োজন হয়, যা তার কাছে ছিল না। তাই অনেক টাকার প্রয়োজনে এবং মামির উপর দীর্ঘদিনের ক্ষোভের প্রতিশোধ নিতে বনি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে গত ৫ মার্চ দুপুর ২টার দিকে তার মামাতো ভাই ইব্রাহিমকে হাজারীবাগ মাদরাসা থেকে বাবার অসুস্থতার কথা বলে অপহরণ করে। পরে কৌশলে গাজীপুর মহানগরীর সালনা এলাকায় নিয়ে আসে। সেখানে আনার পর ইব্রাহিমের মাদরাসার ব্যাগ এবং আইডি কার্ড ফেলে দেয়। রাত সাড়ে ৭টার দিকে মীরেরগাঁও রেললাইনের পাশে জঙ্গলের ভেতর নিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে।

মরদেহ গুম করার উদ্দেশে পুকুরের ভেতর ফেলে রেখে সালনায় এলাকায় এসে একটি মসজিদে এশার নামাজ আদায় করে। পরবর্তীতে বনি বিভিন্ন মোবাইল ফোনে মাধ্যমে ভিকটিমের কণ্ঠ নকল করে ইব্রাহিমের বাবার মোবাইল ফোনে কল করে অপহরণের কথা জানায় এবং মুক্তিপণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করে। এভাবে বনি বিকাশের মাধ্যমে ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। পরবর্তীতে বনি গত শনিবার গাজীপুরে ইব্রাহিমের মরদেহ উদ্ধারের সংবাদ শুনে তার মামা-মামির সঙ্গে কান্নার অভিনয় করে এবং তাদের সঙ্গে ঢাকা আজিমপুর কবর স্থানে জানাজাসহ দাফন কাজ সম্পন্ন করে। যাতে করে তাকে কেউ সন্দেহ করতে না পারে। র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বনি ওই খুনের ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে এবং ঘটনার বর্ণনা দেয়। 

শনিবার গাজীপুরের শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওই মাদরাসা ছাত্রের মরদেহের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। পরে রাতেই মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। মরদেহ হস্তান্তরের ১৫ ঘণ্টার মধ্যেই খুনিকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।